অধিকাংশ আন্তর্জাতিক খেলার ক্ষেত্রেই কয়েক বছরের বিরতি দেখা যায়। অলিম্পিক থেকে আরম্ভ করে বিশ্বকাপ, সব বড় প্রতিযোগিতাতেই জারি এই নিয়ম। তবে ৩ বা ৫ নয়, সব ক্ষেত্রেই কেন ৪ বছরের বিরতি দেওয়া থাকে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বিশ্বকাপ মানেই আবেগের উৎসব। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে যেখানে শামিল হন সারা বিশ্বের মানুষ। বিশ্বকাপ চলাকালীন দেশভাগের কাঁটাতারও যেন ফিকে হয়ে যায়। এমনকি নিজেদের জাতীয় দল না থাকলেও বিশ্বকাপের উন্মাদনায় মেতে ওঠেন সারা বিশ্বের আপামর ফুটবলপ্রেমীরা। এমন আবেগ প্রতিবছর বজায় রাখা সত্যিই কঠিন। তাই অনেকেই মনে করেন কয়েক বছরের বিরতি দিয়ে বিশ্বকাপ এলে, উন্মাদনার পারদ আরও বাড়ে।
আরও শুনুন: সিগন্যাল দেখেই এল ভাবনা, ফুটবলে চালু হল লাল আর হলুদ কার্ডের শাসন
তবে ৩ বা ৫ নয়, কেবলমাত্র ৪ বছরেরই বিরতি থাকার নেপথ্যে রয়েছে বেশ কিছু কারণ। যার মধ্যে প্রথমেই আসে অলিম্পিকের প্রসঙ্গ। ১৯০০ সালে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক স্তরে ফুটবল খেলা হয়েছিল অলিম্পিকের অংশ হিসেবে। আন্তর্জাতিক স্তরে ফুটবল নিয়ে মানুষের উন্মাদনা দেখে কেবলমাত্র ফুটবলের একটি প্রতিযোগিতা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় ‘ফিফা’। ১৯২০ সালে শুরু হওয়া সেই প্রতিযোগিতাই পরবর্তীকালে হয়ে ওঠে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। তাই অনেকে মনে করেন অলিম্পিকের চার বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হওয়ার ঐতিহ্যটি বজায় রাখার জন্যই ফুটবল বিশ্বকাপেও এহেন বিরতি রাখা হয়। তবে এক্ষেত্রে মাথায় রাখা হয়, একই বছরে যেন দুটি বিশ্বমানের প্রতিযোগিতা না পড়ে। অনেক হিসেব করে এই দুই প্রতিযোগিতার সময় নির্ধারণ করা হয়।
আরও শুনুন: বার দুয়েক চুরি হয়েছিল বিশ্বকাপের ট্রফি, উদ্ধারের গল্প হার মানায় সিনেমাকেও
তবে অলিম্পিক ছাড়াও বিশ্বকাপ আয়োজনে ৪ বছরের বিরতি রাখার অন্যতম কারণ হল বিপুল ব্যয়ভার। বিশ্বমানের এই খেলার আয়োজন করতে ব্যাপক অর্থ খরচ হয়। যা আয়োজক দেশের পক্ষে রাতারাতি যোগাড় করা সম্ভব নয়। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে আয়োজক দেশগুলিতে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত করার মতো পরিকাঠামোও থাকে না। ৪ বছর সময় পেলে সেই কাজ সম্পন্ন করতে যে অনেকখানি সুবিধা হয়, তা বলাই বাহুল্য। এ ছাড়াও বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দেশগুলিকে বাছাই করার জন্যেও যথেষ্ট সময় প্রয়োজন হয়। সারা বিশ্বের সেরার সেরা ৩২টি দল শেষ পর্যন্ত অংশ নেয় বিশ্বকাপে। তার জন্য অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে খেলে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয় তাদের। পর্যাপ্ত সময় না থাকলে সেই ম্যাচগুলি সম্পূর্ণ করাও সম্ভব হত না। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্তরের খেলোয়াড়রা সারা বছর বিভিন্ন দেশের ক্লাবগুলিতে খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ থাকেন। কেবলমাত্র বিশ্বকাপের সময় তাঁরা সব কিছু থেকে বিরতি নিতে পারেন। তাই প্রতি বছর বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হলে তাঁদের পক্ষেও ক্লাব ছেড়ে নিজের জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামা সম্ভব হত না। এইসব কারণেই ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য চার-চারটি বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকতে হয় ফুটবলপ্রেমীদের। আর কে না জানে, অপেক্ষাতেই ভালবাসার স্বাদ বেড়ে যায় আরও!