মাত্র ১৭ বছর বয়সে ইউরো জয়। এই মুহূর্তে ইয়ামাল চর্চায় বুঁদ গোটা বিশ্ব। এই আবহে সামনে এসেছে তাঁর বিশেষ গোল সেলিব্রেশনের ছবি। গোল করেই হাতের ভঙ্গীতে ৩০৪ ফুটিয়ে তুলছেন স্পেনের তারকা। কিন্তু কেন? কী বিশেষত্ব এই সেলিব্রেশনের? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
চতুর্থ বার ইউরো জয় স্পেনের। আর সেই কৃতিত্বের অন্যতম দাবিদার হিসেবে উঠে আসছে লামিন ইয়ামালের নাম। সেমিতে তাঁর সপাট গোলের জোরেই ফাইনালে পৌঁছেছিল লুইস দে লা ফুয়েন্তের দল। ফাইনালে অবশ্য তেমন ছাপ ফেলতে পারেননি ইয়ামাল। কিন্তু তাতে কি, ইউরোর অন্য ম্যাচে তাঁর সোলো পারফরম্যান্স অবাক হয়ে দেখেছে গোটা বিশ্ব।
অবশ্য ইউরো কাপেই নক্ষত্রের জন্ম বলা ভুল। ফুটবল মাঠে ইয়ামালের প্রতিভা প্রথম থেকেই নজর কেড়েছিল। স্পেনের প্রতিটি বয়সভিত্তিক দলের হয়ে যেভাবে মাঠ মাতিয়েছেন তিনি, তাতে অল্প বয়সেই মরক্কোর জাতীয় দলের হয়ে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলেন। তবে ২০২৩-এ স্পেনের হয়েই পেশাদার খেলা শুরু করেছেন ইয়ামাল। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ইউরোয় খেলার সুযোগ পেলেন। আর সেখানে নিজেকে প্রমাণ করতে এতটুকু ফাঁক রাখলেন না ইয়ামাল। বয়স যতই কম হোক, খেলার মাঠে আচ্ছা আচ্ছা ফুটবলারকে ঘোল খাইয়ে দিতে পারেন ইয়ামাল। কিছুদিন আগে ইউরোর সেমি ফাইনাল ম্যাচেই তাঁর সেই বিস্ময় প্রতিভা অবাক চোখে দেখেছে দিদিয়ের দেশঁ-র ফ্রান্স। তবে গোল করার পরই ইয়ামাল যেভাবে সেলিব্রেশন করছেন সেটাও নজর কেড়েছে সকলের।
ফুটবল দুনিয়ায় এমন সেলিব্রেশনের বহর নেহাতই কম নেই। মারাদোনা থেকে রোনাল্ডো, প্রত্যেকেরই রয়েছে গোল উচ্ছ্বাসের নিজস্বতা। রাজনীতি থেকে ব্যক্তিগত লড়াই, গোল সেলিব্রেশনে প্রতিফলিত হতে পারে সবকিছুই। এমনকি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেও এই সেলিব্রেশনকে হাতিয়ার করেন ফুটবলাররা। অনেকসময় এর জন্য শাস্তির মুখেও পড়তে হয় তাঁদের। বিশেষ করে গোল সেলিব্রেশন যদি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছু ইঙ্গিত করে তবে তা মোটেও সহজ ভাবে মেনে নেওয়া হয় না। ইয়ামালের গোল সেলিব্রেশনের সঙ্গেও খানিকটা সেই গল্প জড়িয়ে। সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেও তিনি যে নিজের শিকড়কে ভোলেননি, গোল সেলিব্রেশনে সেটাই বুঝিয়ে দেন ইয়ামাল। প্রতিবার গোল করেই দুই হাতের কায়দায় বিশেষ কিছু ফুটিয়ে তোলেন ইয়ামাল। ভালো করে লক্ষ করলেই বোঝা যাবে, ৩০৪ সংখ্যাটি বোঝাতে চাইছেন তিনি। যা আসলে, রোকাফোন্ডার পিনকোডের শেষ তিনটি সংখ্যা। লামিন ইয়ামালের বেড়ে ওঠা এই রোকাফোন্ডা-তেই। বার্সেলোনার ২০ মাইল দূরের এই এলাকায় মূলত শরনার্থীদের বাস। কাজেই ঝাঁ চকচকে দুনিয়ার মানুষজন এই জায়গাকে খানিক অবহেলার চোখেই দেখেন। স্বাভাবিক ভাবেই, এলাকার তেমন উন্নতি হয়নি। স্পেনের রাজনৈতিক দলগুলিও এই এলাকার সম্পর্কে বিশেষ মাথা ঘামাতে নারাজ। অথচ সেখান থেকে উঠে আসা ইয়ামালের জন্যই চতুর্থবার ইউরো জিতল স্পেন। নিজের এলাকার প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতেই ৩০৪ সংখ্যাটি গোল সেলিব্রেশনের সময় দেখান ইয়ামাল। এর আগে বার্সার জার্সি গায়েও এই একইভাবে সেলিব্রেশন করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। শুধু তাই নয়, ইয়ামালারে জুতোতেও ৩০৪ আঁকা রয়েছে। ফুটবল মাঠে নিজের অস্তিত্ব প্রতি মুহূর্তে বুঝিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিজের এলাকার প্রতি হওয়া অন্যায়ও এভাবেই সকলের সামনে তুলে ধরছেন স্পেনের বিস্ময় বালক।