পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিরাট একাই একশো। মাঠেই ভাঙলেন শচীনের ১৪ হাজার রানের রেকর্ড। তাতে অবশ্য অহংকারের ছাপ ছিল না চোখেমুখে। বরং সেঞ্চুরি উদযাপনে রাজার মতো সম্মান জানালেন তাঁর রানিকে। মাঠে দাঁড়িয়ে চুমু খেলেন গলায় থাকা লকেটে।
খুব বেশিদিনের পুরনো কথা নয়। রানের খরা তাড়া করে বেড়াচ্ছে বিরাটকে। পরপর খারাপ পারফরম্যান্স। নিন্দুকের কটাক্ষ। সমর্থকরাও চূড়ান্ত আশাহত। এই অবস্থায় বিরাট কী করছেন? কখনও আধ্যাত্মিক বচন শুনতে যাচ্ছেন, কখনও রেস্তোরাঁয় খেতে যাচ্ছেন। সব জায়গায় সঙ্গী স্ত্রী অনুষ্কা। অবশেষে রানের খরা কাটিয়ে নিজেকে প্রমাণ করলেন বড় ম্যাচে। সেখানে অবশ্য স্ত্রী সঙ্গে নেই। কিন্তু মাঠে থেকেই তাঁকে মনে করতে ভোলেননি কিং কোহলি। বরং গলায় লকেট হিসেবে ঝুলিয়ে রাখা বিয়ের আংটিতে চুমু খেয়ে দামাল প্রেমিক হিসেবেই ধরা দিয়েছেন বিরাট।
কথায় বলে, পুরুষের সাফল্যের নেপথ্যে একজন নারীর বড় ভূমিকা থাকে। এক্ষেত্রে ঠিক তেমনটা হয়তো বলা যায় না। কারণ অনুষ্কার সঙ্গে বিয়ের বহু আগে থেকেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন বিরাট। তবে এই মুহূর্তে তাঁর জীবনে স্ত্রীর ভূমিকা যে বিস্তর, তা মাঠে দাঁড়িয়েই বুঝিয়ে দিয়েছেন বিরাট। হয়তো বিরাটের বিধ্বংসী ইনিংস না থাকলেও ভারত ম্যাচটা জিতত। বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ তেমনই ইঙ্গিত করছিল। তবু বিরাটের চওড়া ব্যাটে সেঞ্চুরি ভারতকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে। এদিনে ম্যাচে স্রেফ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয়ই নয়, একগুচ্ছ রেকর্ড ঝুলিতে ভরেছেন বিরাট। বিশ্বের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে বহুদলীয় টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন কিং কোহলিই। তাই দীর্ঘদিন রানের বাইরে থাকার পর তাঁর এই ইনিংস বড় স্বস্তির। আসলে বিরাটের কাহিনি যেন এক বহুস্তরীয় উপন্যাস। ঠিক যেখানে মনে হয়, এই বুঝি কিনারা মিলল, সেখান থেকেই খুলে যায় অন্য পরত। ধর্মপ্রাণ এ দেশে অবতারের জন্ম তাঁর অজানা নয়। ঘটনাচক্রে তিনিও একদিন এসে দাঁড়িয়েছিলেন সেই অলৌকিকের পথে। বুঝতে পারতেন, তাঁর আর তাঁর ব্যাটের গল্পটা এই নতুন ভারতের সফলতার এক অনন্য আখ্যান। তবে সেই আখ্যানকে শুধু হয়ে উঠলেই হবে না। হয়ে-ওঠার পথে তাকে পালন করতে হবে অনেক দায়িত্ব। এই দেশ, সমাজ, এই ভারতের কোটি কোটি মনের চাহিদা তাঁকে মেটাতে হবে।
শুধুই কি তাই! একের পর এক রেকর্ড ভাঙার খেলা যেন পূর্বসূরিদের মনের অজান্তে চ্যালেঞ্জ জানানো। আরও এগোতে হবে, নতুন কিছু গড়তে হবে, যেন থামার অবকাশ নেই। তবু বিশ্রাম প্রয়োজন। আর সেখানেই যেন আদরের ঠিকানা হয়ে তাঁকে আগলে রেখেছেন অনুষ্কা। এত শত বিতর্কের মাঝেও সুখী দাম্পত্যের চিরন্তন আখ্যান লিখে চলেছেন তাঁরা দু’জন। এর আগেও খেলার শেষে মাঠে দাঁড়িয়ে স্ত্রীকে ভিডিও কল করতে দেখা গিয়েছে বিরাটকে। কিংবা লম্বা রানের ইনিংস তাড়া করে, গ্যালারির দিকে ব্যাট উঁচিয়ে ধরেছেন বিরাট। সেখানেই তো আছেন অনুষ্কা। আর কারও দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই। কাউকে নতুন করে খুশি করার দরকার নেই। ওই একজনের জন্য সব কিছু উজাড় করে দেওয়াই যেন দামাল প্রেমিকের একমাত্র কাজ। তাতে অবশ্য সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে বহুবার। বিরাট তোয়াক্কা করেননি। এমনকী অধ্যাত্মিক ইনিংসে স্বামী-স্ত্রীর যৌথযাপনও নিন্দুকের নজর এড়ায়নি। সেই সব কটাক্ষ, তির্যক মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন বিরাট, ব্যাটে। স্রেফ সেঞ্চুরি করে নয়, সকলের সামনে বিয়ের আংটিতে ভালোবাসার চুমু এঁকে।