মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইনস্টাগ্রামে অভ্নীত কৌরের ফলোয়ার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ লক্ষে; ব্র্যান্ড ভ্যালু হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪১ কোটির। ওদিকে বিরাট-প্রেমীরা আচমকা মার্ক জুকারবার্গের পোস্টের নিচে কমেন্ট করে বলছেন, তিনি যেন এহেন ভুলে ভরা অ্যালগোরিদমের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন ‘কিং’ কোহলির কাছে। কেউ বা সরাসরি আক্রমণ হানছে বিরাট-পত্নী অনুস্কার উপর। সঙ্গে চটুল মিম আর কমেন্টের বন্যা তো রয়েছেই! কিন্তু বিরাট কোহলি এতসব ঝামেলার কোনোটাই চেয়েছিলেন কি?
সেই কবে পিটার পার্কারকে আঙ্কেল বেন বলে গিয়েছিলেন ‘উইথ গ্রেট পাওয়ার, কামস্ গ্রেট রেস্পন্সিবিলিটি’। স্পাইডারম্যান রিলিজের পরে পরে, সে ডায়লগখানা নিয়ে বেশ মাতামাতি করল ভক্তরা। তাতে পোস্টার বানাল, ক্যাপশনে বসাল, আর তারপর দুম করে ভুলেও গেল। কিন্তু কথাটুকু অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হয়েই থেকে গেল। মাটিতে দাঁড়িয়ে আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে আমরা ভাবতেই পারি যে, সারারাত কেবল জ্বলজ্বল করলেই তার কাজ মিটে যায়। কিন্তু মাটির দুনিয়ার স্টারেদের ঘাড়ে যে ঠিক কী গুরুদায়িত্ব চেপে বসে, তা কেবল তাঁরাই বলতে পারবেন, যাঁরা সেই আসনে বসেছেন।এই যেমন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)।
এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যাটার, এই পরিচয় কোহলি (Virat Kohli) ছাপিয়ে গিয়েছেন বহুদিন। ক্রিকেটের যাবতীয় অর্জন সঙ্গে নিয়েই তিনি যেন হয়ে উঠেছেন এই প্রজন্মের মুখ, ভাষা, প্রজন্মের অ্যাটিটিউড। ফলে বিরাটের ক্ষেত্রে আলোচ্য বিষয় কেবল ক্রিকেটেই সীমাবদ্ধ থাকে না। ম্যাচের মাঝে ভিডিও কল-এ অনুষ্কাকে কতখানি সময় দেন, সন্তানদের নিয়ে ভিনদেশে ‘সেটল’ হতে চান, সম্প্রতি আধ্যাত্মিকতায় ঝুঁকছেন কি-না, সবটাই এসে পড়ে জনসাধারণের আলোচনার আওতায়। এবার তাঁর একটা লাইক যেন দাবানল জ্বালাল নেট-অরণ্যে। কিছুদিন আগে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে তিনি জানান যে, নেহাতই গ্লিচের কারণে মডেল-অভিনেত্রী অভ্নীত কৌরের (Avneet Kaur) ছবিতে ‘লাইক’ পড়ে গিয়েছিল তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে। এমনটা তিনি সজ্ঞানে করেনি মোটেই। আর তাতেই ধুন্ধুমার।
সত্যি বলতে, ওঁর (Virat Kohli) ক্ল্যারিফিকেশন-টির আগে স্বল্পসংখ্যক মানুষই হয়তো অভ্নীতের ছবিতে বিরাটের ‘লাইক’ খেয়াল করেছিল। কিন্তু বিরাটের পোস্টটির পর সকলে মিলিয়ে হুড়মুড়িয়ে নামে ঘটনার তল জানতে। মুহূর্তে তৈরি হয়ে যায় হ্যাশট্যাগ ‘বিরাট লাইকড্ অভ্নীত’। মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইনস্টাগ্রাম প্ল্যাটফর্মে তেইশ বছরের অভ্নীতের ফলোয়ার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ লক্ষে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ১২টি নতুন ব্র্যান্ড এন্ডোর্সমেন্ট ডিল এসে কড়া নাড়ে তাঁর দরজায়। পরবর্তী দু’দিনে শুধুমাত্র তাঁর শেষতম পোস্টটিতেই ১.২ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায় ‘লাইক’ সংখ্যা। অভিজ্ঞদের মতে, বিরাটের (Virat Kohli) তরফ থেকে এই সামান্য ভুলটির কারণে অভ্নীতের ব্র্যান্ড ভ্যালু হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪১ কোটির।
তবে সবটুকু এরকম ভালো-ভালো নয়। ঘটনাটির কথা ছড়িয়ে পড়তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল জল্পনা শুরু হয়ে যায়। বিরাট-প্রেমীরা আচমকা মেটা-কর্তা মার্ক জুকারবার্গের পোস্টের নিচে কমেন্ট করে বলতে থাকে, তিনি যেন এহেন ভুলে ভরা অ্যালগোরিদমের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন ‘কিং’ কোহলির কাছে। কেউ বা সরাসরি আক্রমণ হানতে শুরু করেন বিরাট-পত্নী অনুষ্কার উপর। সঙ্গে চটুল মিম আর কমেন্টের বন্যা তো রয়েছেই!
কিন্তু বিরাট কোহলি (Virat Kohli) এতসব ঝামেলার কোনোটাই চেয়েছিলেন কি? বাস্তবিক গ্লিচ হোক, বা দূরদর্শিতার অভাব, সামান্য কোনও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিটি নিয়ে এত পরিমাণ জলঘোলা হোক, তা নিশ্চয়ই কখনওই চাইবেন না ক্রিকেট-সম্রাট (Virat Kohli)। তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ অতি মূল্যবান বলেই, অশান্তি এড়াতে ছিল বিরাটের ক্ল্যারিফিকেশন পোস্ট। অথচ তা যে সঙ্গে করে আরও ঝামেলা ডেকে আনবে, তা আর তিনি ভাবতে পেরেছিলেন কই! এ-ই বুঝি খ্যাতির বিড়ম্বনা।
তাহলে কোনদিকে যাবেন একজন সেলিব্রিটি? মানুষ তাঁকে চেনেন বলেই তো দাম বেড়েছে তাঁর প্রতিটি সিদ্ধান্ত, কার্যকলাপের। অথচ একই সঙ্গে তাঁর মাথার উপর ঝুলতে লেগেছে খাঁড়া। একচুল এদিক ওদিক হলেই বেসামাল! খ্যাতির গায়ে লেগে থাকা এই হিডেন ট্যাক্স যেন অমৃতের সঙ্গে গরল। যত বড়মাপের সেলিব্রিটিই হোন না কেন, একজন ব্যক্তি-মানুষের পক্ষে কোনও অবস্থাতেই সম্পূর্ণভাবে ত্রুটিহীন হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু খ্যাতি যেন সেই ক্ষমাহীন বিচারক, যে দরজা গলে, জানলা গলে সেলিব্রিটির বেডরুমে ঢুকে পড়ে অবাধে। বিরাটও (Virat Kohli) তার ব্যতিক্রম নন। সে তিনি আগেই বুঝেছিলেন। তবে, একটা মাত্র লাইকে যে এত কাণ্ড হবে তা বোধহয় স্বপ্নেও ভাবেননি। সাধে কি আর বলে যে, বিরাট কোহলি হওয়া কি মুখের কথা!