‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। এই নামেই ডাকা হয়, বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রীড়া-আসর অলিম্পিককে। করোনার ঢেউ সামলে, দুহাজার কুড়ির বদলে দুহাজার একুশে অলিম্পিকের আসর বসছে বটে, তবে এবারের অলিম্পিকে উপস্থিত থাকতে পারবেন না কোনও দর্শক।
হাজার বছরের ইতিহাসে এই প্রথম ছেদ পড়ল অলিম্পিকে। দুহাজার কুড়ির বদলে দুহাজার একুশের তেইশে জুলাই জাপানের রাজধানী টোকিওতে বসছে বত্রিশতম অলিম্পিকের আসর। কোভিডের দৌলতে অলিম্পিক হবে কি না এই নিয়েই টালবাহানা চলছিল দীর্ঘদিন। জাপানের বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট হিতোশি ওশিতানি তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন। অবশেষে, দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে বসছে অলিম্পিকের আসর।
অলিম্পিকের ব্যবস্থাপনায় যুক্ত ছিলেন প্রায় সত্তর হাজার কর্মী। এদের মধ্যে অন্তত দশ হাজার কর্মী করোনার ভয়ে কাজ ছেড়ে চলে গেছেন। প্রথমে ঠিক করা হয়েছিল, জৈব-বলয়ের মধ্যে রাখা হবে খেলোয়াড়দের, যাতে সংক্রমণের আশঙ্কা খানিক কমে। কিন্তু নতুন করে বাঁধ সাধে টোকিওর আবহাওয়া। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ক্রমশ এত বাড়তে থাকে, সেখানে অ্যাথলেটিক্স জাতীয় খেলাগুলো কী করে হবে এই নিয়ে চূড়ান্ত সংশয়ে পড়েন ক্রীড়াবিদরাও। টোকিও শহরে আপাতত সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তে ঘোষিত হয়েছে জরুরি অবস্থা। এর মধ্যেই টোকিও বিমানবন্দরে উগান্ডার এক খেলোয়াড়ের শরীরে মিলেছে করোনা ভাইরাস। বাধ্য হয়েই অলিম্পিকের প্রধান কর্মকর্তা সেইকো হাসিমোতো টোকিওর অলিম্পিক স্টেডিয়ামে দর্শকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। বিদেশি দর্শকরা যে এই বছর অলিম্পিক দেখতে আসতে পারবেন না, সে কথা আগেই জানিয়েছিল জাপান প্রশাসন। সাংবাদিকরা স্টেডিয়ামে ঢুকতে পারবেন বটে, কিন্তু তাঁদেরও হোটেল ছাড়া দেশের আর কোথাও যাওয়ার অনুমতি নেই। এজন্য তাঁদের মোবাইল ফোনও ট্র্যাক করা হবে বলে জানা গেছে।
আরও শুনুন: Women Cricket : শুধু ধোনি-কোহলি! কেন মিতালী বা ঝুলন হওয়ার স্বপ্ন নেই ক্রিকেটবিশ্বে?
যদিও ঐতিহ্যবাহী অলিম্পিক দেখতে না পাওয়াকে স্থানীয় মানুষ মোটেই ভালভাবে নেননি। জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ দেখা গেছে। তাঁদের দাবি, স্থানীয় মানুষ, বিশেষত যাঁদের প্রতিষেধক নেওয়া হয়ে গিয়েছে, তাঁদের খেলা দেখার অনুমতি দেওয়া হোক। জাপানে জুন মাস থেকে টিকাকরণ শুরু হলেও এখনও পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার মাত্র ষোল শতাংশ ভ্যাকসিন নিয়েছেন।
তবে টোকিওর পার্শ্ববর্তী শহর ফুকুশিমা, মিয়াগি এবং শিজুওকায় মোট আসনের পঞ্চাশ শতাংশ দর্শক স্টেডিয়ামে যেতে পারবেন। অবশ্য প্রথমে কথা ছিল সর্বোচ্চ পঞ্চাশ হাজার দর্শক থাকতে পারেন। তারপর ঠিক হয় সর্বোচ্চ দশ হাজার দর্শককে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। কিন্তু সংক্রমণের চোখরাঙানিতে সেই সংখ্যা আরও কমতে পারে বলে জানানো হয়েছে। সতর্কতার অঙ্গ হিসেবে স্টেডিয়ামে নিষিদ্ধ হয়েছে জয়োল্লাস। ভিড় করা যাবে না। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
এইবারের অলিম্পিকে ভারতের প্রতিনিধির সংখ্যা দুশো ছয়। ভারতের তরফ থেকে পতাকাবাহক হিসেবে প্রাথমিকভাবে তিনজনের নাম জানিয়েছে ইন্ডিয়ান অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন। তালিকায় রয়েছেন ছয়বারের বিশ্ব বক্সিং চ্যাম্পিয়ন মেরি কম এবং পুরুষ হকি দলের ক্যাপ্টেন মনপ্রীত সিং। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই দুজনই ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। সমাপ্তি অনুষ্ঠানে পতাকাবাহক হবেন কুস্তিবিদ বজরং পুঁইয়া। ইন্ডিয়ান অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন-এর বিবৃতি অনুযায়ী, পতাকাবাহক নির্বাচনের ক্ষেত্রে যাতে কোনও লিঙ্গবৈষম্য তৈরি না হয়, সে বিষয়ে তাঁরা সচেতন ছিলেন। দুশো ছয় জনের দল থেকে তাই তাঁরা একজন পুরুষ এবং একজন মহিলাকে বেছেছেন। গতবারের রিও ডি জেনেরো-র আসরে, পতাকাবাহক ছিলেন অলিম্পিকের একমাত্র সোনাজয়ী শ্যুটার অভিনব বৃন্দা। মেরি কম তৃতীয় ভারতীয় নারী, যিনি এই পতাকাবাহক হওয়ার সম্মান অর্জন করলেন। এর আগে সিনি উইলসন এবং অঞ্জু ববি জর্জ এই সম্মান পেয়েছিলেন।