মাঠে তিনি ম্যাজিশিয়ান। মাঠের বাইরেও তাঁর ম্যাজিক কম নয়। লিওনেল মেসি যেমন ফুটবলের ম্যাজিক-ম্যান, তেমনই জীবনের ক্ষেত্রেও একজন বিস্ময়-মানুষও। এমনকী একবার বিপ্লবী চে গেভারার সঙ্গেও তাঁর তুলনা টানা হয়েছিল সংবাদমাধ্যমে। কী সেই ঘটনা? আসুন শুনে নিই।
ভিডিওটি অনেকেই দেখেছেন। মেসির বিশ্বকাপ জয়ের খানিক পরের মুহূর্ত। মাঠের মধ্যে তখন চলছে উচ্ছ্বাস। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রা একে অপরকে জড়িয়ে ধরছেন। টিমের সঙ্গে যুক্ত অন্যরাও নিজেদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন। ঠিক তখনই এক মহিলা মেসিকে পিছন থেকে ডাকেন। আর তাঁকে দেখেই আবেগের বাঁধ ভাঙে লিওনেলের। একই অবস্থা সেই মহিলারও। গাঢ় আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরেন পরস্পরকে। প্রথমে অনেকেই ভেবেছিলেন, ভদ্রমহিলা বোধহয়য় মেসির মা। পরে জানা গিয়েছে, তাঁর নাম আন্তোনিয়া ফারিয়াস। আর্জেন্টিনা দলের হেঁশেল সামলানোর দায়িত্ব তাঁরই উপর বর্তেছিল। প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে এই দলটার সঙ্গে বলতে গেলে তাঁর নাড়ির সম্পর্ক। আর তাই বিশ্বজয়ের মুহূর্তে তাঁকে দেখে আবেগ সামলাতে পারেননি খোদ মেসিও। প্রায় বাচ্চাদের মতোই জড়িয়ে ধরেছিলেন তাঁকে।
আরও শুনুন: মেসি কেন পেলেন গোল্ডেন বল? ‘ফিফা’র উপর রেগে আগুন ক্রোয়েশিয়ার সেই সুন্দরী
এই ঘটনা অবাক করেছে অনেককেই। মহাতারকা হয়েও মেসি যেভাবে দলের অন্যান্যদের সম্পর্ক রাখেন, তা দেখে বিস্মিত হতে হয় বইকি। আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি আগেই বলেছিলেন, তাঁর দলের অধিনায়ক হচ্ছেন মাটির মানুষ। দলের সাপোর্ট স্টাফদের সঙ্গেও যেমন তাঁর নিবিড় যোগাযোগ, তেমনই প্রতিদিন অসংখ্য অনুরাগীর আবদার তিনি হাসিমুখে মেটান। বিশেষত বাচ্চারা যেমন মেসিকে একবার কাছে পেতে উদগ্রীব, মেসিও তাঁদের সঙ্গে মিশে যান অনায়াসে। স্কালোনি বলেছিলেন, মেসি জানেন যে, তাঁর প্রভাব বাচ্চাদের উপর থেকে যাবে। আর তাই এ ব্যাপারে তিনি দারুণ সচেতন। কখনও বাচ্চাদের নিরাশ করেন না। যেমন মহাতারকা হয়েও কখনও মাটি থেকে পা তুলে নেননি। ফলে যাঁরা দলের হয়ে খেলেন না, তাঁরাও যে দলের সম্পদ, তাঁরাও যে দলের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ, এ-কথাটা সকলকে মনে করিয়ে দেন মেসি। অবশ্যই কথায় নয়, তাঁর কাজে।
শুধু দেশের জন্য নয়, ক্লাবের ক্ষেত্রেও এই কাজের নমুনা দেখিয়েছিলেন। করোনা যখন ছোবল দিল বিশ্বকে তখন মেসি এফসি বার্সেলোনায়। সেই সময় ক্লাবের কর্মীরা যাতে ঠিকঠাক বেতন পান, তা নিশ্চিত করতে মেসি নিজের বেতন ৭০ শতাংশ কম নেবেন বলে জানিয়েছিলেন। শুধু তিনি একা নন, আলোচনা করে ক্লাবের সকল খেলোয়াড়ই এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন। আর মেসি জানিয়েছিলেন, এটা কিন্তু ক্লাবের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত নয়, বরং বিপদের সময় দাঁড়িয়ে এই কাজ যে করা উচিত, তেমনটাই অনুভব করেছিলেন তিনি। মেসির এই ঘোষণা সাড়া ফেলেছিল সেদিন। ফরাসি এক সংবাদপত্রের প্রচ্ছদে তাই বিপ্লবী চে গেভারার সঙ্গে মিশে গিয়েছিল মেসির মুখ।
Lionel Messi en une du journal L’Équipe ce mardi 31 mars.
Le journal > https://t.co/fmp0BE5oAx pic.twitter.com/h2t7RHECyZ
— L’ÉQUIPE (@lequipe) March 30, 2020
আর্জেন্টিনা দলের কুকের সঙ্গে মেসির আলিঙ্গনের ভিডিও যখন নেটদুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে, তখন বহু অনুরাগীরই মনে পড়েছে পুরনো সেই দিনের কথা। ক্লাব হোক বা দেশ, দল তো তাঁকেই আপনজন মনে করে, যিনি দলের সকলকে ভালবাসেন। মেসির ম্যাজিক তাই শুধু মাঠে নয়, জারি থাকে মাঠের বাইরেও।