ধোনি কি ম্যাজিক জানেন? ব্যাট হাতে বা উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে তিনি যে ইন্দ্রজাল করেন, এ নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই। তবে, তরুণ ক্রিকেটারদের রাতারাতি বদলে দেন কোন মন্ত্রবলে? আসুন শুনে নেওয়া যাক সে কথা।
খ্যাপা খুঁজে ফেরে পরশপাথর। তবে, চাইলেই আর তা পাওয়া যায় নাকি! ভারতের আধুনিক ক্রিকেটে অবশ্য মহেন্দ্র সিং ধোনির ডাকনাম অনায়াসে হতে পারে সেই পরশপাথর। আইপিএল-এ অন্য টিমে যে প্লেয়ারকে নড়বড়ে দেখায়, হয়তো আত্মবিশ্বাসের অভাবে ধুঁকছেন; ফ্র্যাঞ্চাইজি তাঁকে ছেড়ে দিয়েছে; সেই প্লেয়ারই চেন্নাইয়ের এলে বদলে যান অবিশ্বাস্য ভাবে। অবশ্য অসম্ভব কিছু নয়, বদলে দেওয়ার কারিগর স্বয়ং ধোনি।
আরও শুনুন: চোখে পড়েছিলেন বিপক্ষ কোচের, গতির মায়ায় হারিয়ে যাবেন না তো মায়াঙ্ক?
ভারতীয় ক্রিকেটের বদলের ইতিহাস লিখতে হলে ধোনির জন্য আস্ত এবং মস্ত একটি অধ্যায় রাখতে হবে। আধুনিক ক্রিকেটের প্রায় সব পরিস্থিতি সামলানোর অভিজ্ঞতা তাঁর তালুবন্দি। কী করে কোন প্লেয়ারকে চাঙ্গা রাখতে হয়, কীভাবে তাঁর ভিতর থেকে সেরাটা বের করে আনতে হয়, তা তিনি খুব ভালোই জানেন। চেন্নাইয়ের সিজনে সিজনে যে তরুণ ক্রিকেটাররা আসেন, তাঁদের তাই এক ঝটকায় বদলে দিতে পারেন ধোনি। যেমন শিবম দুবের কথাই ধরা যাক। আরসিবি, রাজস্থান রয়ালস ঘুরে শিবম আসেন চেন্নাইয়ে। এখানে এসে যেন তাঁর ভোল পালটে যায়। কারণ কী? জানা গেল, চেন্নাইয়ে যোগ দেওয়ার পর ধোনি তাঁর সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন। তাঁর কোথায় সমস্যা হচ্ছে জেনে নেন এবং সেখান থেকে বেরনোর উপায়ও বাতলে দেন। এরপর টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁকে নির্দিষ্ট দায়িত্ব দেয়। একটা স্ট্র্যাটেজিও ঠিক করে দেয়। এরপর আর পারফর্ম করতে অসুবিধা হয়নি শিবমের। একই কথা প্রযোজ্য সমীর রিজভির জন্যও। তাঁকে একটি ছোট্ট পরামর্শ দিয়েছিলেন ধোনি- ‘প্রাইস ট্যাগের কথা ভুলে যাও।’ ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটারদের উপর অর্থ বিনিয়োগ হয়। সেই চাপ গিয়ে পড়ে খেলায়। ধোনি রিজভির মাথা থেকে সেই চাপের প্রসঙ্গটাই উধাও করে দিয়েছেন। বলেছেন, “সব ক্রিকেটারের জন্য আলাদা অর্থ বিনিয়োগ হয়। ফলে, ওসব নিয়ে ভেবে লাভ নেই। ভাবার একটাই বিষয়- কীভাবে খেলছ, কীভাবে চাপ সামলাচ্ছ। শেষ কথা হল পারফরম্যান্স।” মন্ত্রের মতোই কাজ দিয়েছে ধোনির কথায়। সমীর রিজভির খেলাতেও বড় বদল এসেছে।
আরও শুনুন: ‘পরাগ’রেণু আপনি জাগে আইপিএল-এ! নাকি নেপথ্যে সেই ঘরোয়া ক্রিকেটে?
অনেকেই মনে করেন যে, চেন্নাইয়ে গেলেই তরুণ ক্রিকেটাররা ভালো পারফর্ম করতে শুরু করেন। তা কিন্তু এমনি এমনি নয়। নেপথ্যে থেকে যান ধোনি। তরুণরা বলেন, ধোনি সবাইকে এমন ভাবে তাতিয়ে দেন যে, তাঁরা আর আত্মবিশ্বাসের অভাব বোধ করেন না। অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ এরকম একজন ব্যক্তিত্বের থেকে টিপস পাওয়ার গুরুত্ব আলাদা। আর শুধু খেলার কলাকৌশল তো নয়; ধোনি বদলে দেন ক্রিকেটের দর্শন; একজন তরুণের পিছনে দাঁড়িয়ে ভরসা জোগান। তার ফল মেলে হাতেনাতে। শুধু আইপিএল নয়, তরুণদের এই পারফরম্যান্স কাজে লাগে ভারতীয় ক্রিকেটেরও। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে আইপিএল হল তরুণ ক্রিকেটারদের তৈরি হওয়ার আর নিজেকে প্রমাণ করার জায়গা। চূড়ান্ত গন্তব্য হল জাতীয় দল। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ড্রেসিংরুম থেকেই দেশের জন্য সেই কাজ করে চলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।