ফুটবল কারও কাছে নিছক খেলা, আর কারও কাছে ধর্ম। আর সেই ফুটবল-ধর্ম পালনে ভক্তরা কী না কী করে থাকেন! জীবনের যাবতীয় সঞ্চয় ব্যয় করেও হাজির হন ফুটবলের সেরা মঞ্চ অর্থাৎ বিশ্বকাপে। আর এই বিশ্বকাপের আসরেই টানা ১১ বার হাজির হয়ে গিনেস বুকে নাম তুলতে চলেছেন এক ব্রাজিলীয় বৃদ্ধ।
আর্জেন্টিনা থেকে কাতার। ১৯৭৮ থেকে ২০২২। মাঝে ৪৪টি বছর ১১ খানা বিশ্বকাপ। তাঁর উপস্থিতি প্রত্যেকটাতেই। ব্রাজিলীয় ফুটবলপ্রেমী ড্যানিয়েল ব্রাজ্জির বিশ্বকাপের নেশা আসলে রেকর্ড। সবথেকে বেশি সংখ্যক বিশ্বকাপে দর্শক হিসাবে উপস্থিত থেকে গিনেস বুকে নাম তুলতে চলেছেন তিনি।
আরও শুনুন: মেসি-ম্যাজিকে বুঁদ বিশ্বে ফুল ফোটাচ্ছেন নীরবেই, স্ক্যালোনি যেন আর্জেন্টিনার অন্য নায়ক
৭৫ বছরের এই তরতাজা ‘যুবক’কে চলতি বিশ্বকাপেও অনেকেই দেখেছেন। পরনের পোশাকে প্রিয় ব্রাজিলের হলুদ রং। আর সেই পোশাকের উপরই দেওয়া আছে তাঁর বিশ্বকাপ হাজিরার খতিয়ান। কাতার নিয়ে মোট ১১টি বিশ্বকাপে তিনি যে উপস্থিত থেকেছেন, আয়োজক দেশের পতাকা দিয়েই তা বুঝিয়ে দিয়েছেন এই ফুটবলভক্ত। বিশ্বকাপের দৌলতেই ঘুরেছেন এতগুলো দেশে। প্রত্যেকটা দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে হয়েছে তাঁর নিবিড় পরিচয়। আর যেহেতু তিনি ব্রাজিলের অধিবাসী, তাই সব দেশে গিয়েই নিজের সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছেন। এই যেমন তাঁর পোশাকের ধরন অনেকটা মহিলাদের মতো। এটিও তাঁর দেশের সংস্কৃতিরই অঙ্গ। তাই শুধু খেলা দেখা নয়, তিনি বহু দেশের মানুষকে নিজের সংস্কৃতির সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। বিশ্বকাপ যে শুধু নব্বই মিনিটের লড়াই নয়, সংস্কৃতি আদানপ্রদানের মঞ্চও সে কথাও বিশ্ববাসীকে মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
আরও শুনুন: ২৪ বছর বিশ্বকাপে অংশ নেয়নি আর্জেন্টিনা, কিন্তু কেন?
ব্রাজিলের পাঁচ বারের বিশ্বজয় যেমন রেকর্ড, তেমনই তাঁর ১১ বার বিশ্বকাপের আসরে হাজিরা দেওয়ায় বিশ্বরেকর্ড হতে চলেছে। তবে নিজের রেকর্ডের থেকেও তিনি বেশি উচ্ছ্বসিত ফুটবলের প্রতি মানুষের ভালবাসা নিয়ে। তাঁর প্রজন্মের মানুষ শুধু নয়, আগামী প্রজন্মকেও ডাক দিচ্ছেন তিনি। আরও বেশি মানুষ ফুটবল-ধর্মে শামিল হোন, এই তাঁর চাওয়া।
আরও শুনুন: বিছানার নিচে জুতোর বাক্সে লুকোনো ছিল বিশ্বকাপের ট্রফি, কিন্তু কেন?
অবশ্য নিজের জন্য আর এক চাওয়াকেও তিনি মনের গভীরে লালন করছেন। যদিও তাঁর বয়স ৭৫, তবু তাঁর ইচ্ছা ২০২৬ বিশ্বকাপেও তিনি উপস্থিত থাকবেন। শরীর সঙ্গ দেবে কিনা জানেন না। তবে এই স্বপ্ন তিনি দেখেন। নিজের রেকর্ড তিনি নিজেই ভাঙবেন, এমনটাই বাসনা এই ব্রাজিলীয় ফুটবলপ্রেমীর।