নিম করোলি বাবার আশীর্বাদ নেওয়ার পর থেকেই যেন তাঁর আধ্যাত্মিক ইনিংসের দিকে নজর যায় সকলের। খেলার পৃথিবীতে সেবার বিরাট আবার ফিরে আসেন স্বমহিমায়। যে পরিশ্রম আর নিষ্ঠায় বিরাট নিজেকে ডুবিয়ে দিয়ে ফিরে এসেছিলেন, তার সত্যিই তুলনা হয় না। তবে, এর সঙ্গেই তাঁর আধ্যাত্মিক চর্চার জায়গাটিও খেয়াল করার মতো।
পথিক তুমি কি পথ হারাইয়াছ? এক সময় বিরাট কোহলিকে দেখে অনেকেই বিস্ময়ে এই প্রশ্ন করতেন। তখন রানের খরা চলছে তাঁর ব্যাটে। এমন আশ্চর্য ভাবে আউট হচ্ছিলেন তিনি, যে, নিজেই বিশ্বাস করে উঠতে পারছিলেন না। জীবনের সেই খারাপ সময়ে একজন মানুষের ‘সান্নিধ্য’ তাঁকে যেন আবার কোহলিয়ানায় ফিরিয়ে এনেছিল। তিনি নিম করোলি বাবা। অনেকেই তাঁকে ‘মহারাজজি’ বলে চেনেন।
বিরাট কি আধ্যাত্মিক? কোহলিভক্তরা অনেকেই এর আগে সেভাবে বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামাননি। তবে, সেই রানের খরার দিনে বিরাট অবশ্য বলেছিলেন, ‘দিলে ঈশ্বরই যা দেওয়ার তা দেন। নইলে আর কারও কোনও ক্ষমতা নেই। কেউ কিছু করে উঠতে পারে না।’ অনেকেই সেদিন চমকে গিয়েছিলেন। নিত্য নতুন হেয়ারস্টাইলে ব্যাট হাতে মাঠ শাসন করার বিরাটের মুখে এমন কথা যে শোনা যেতে পারে, তা সেভাবে কেউ ভাবেননি। তবে, বিরাট বরাবর ব্যতিক্রমি। সে ব্যাট হাতে হোক বা ব্যাট ছাড়া। নিম করোলি বাবার আশীর্বাদ নেওয়ার পর থেকেই যেন তাঁর আধ্যাত্মিক ইনিংসের দিকে নজর যায় সকলের। খেলার পৃথিবীতে সেবার বিরাট আবার ফিরে আসেন স্বমহিমায়। বিশ্বক্রিকেট এখন জানে, বিরাটের তুলনা বিরাট নিজেই। যে পরিশ্রম আর নিষ্ঠায় বিরাট নিজেকে ডুবিয়ে দিয়ে ফিরে এসেছিলেন, তার সত্যিই তুলনা হয় না। তবে, এর সঙ্গেই তাঁর আধ্যাত্মিক চর্চার জায়গাটিও খেয়াল করার মতো। নেহাত একটা ব্যাড প্যাচ কাটাতে যে তিনি ঈশ্বরবিশ্বাসী হয়েছিলেন, তা কিন্তু নয়। তাঁর এই চর্চাও একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।
আরও শুনুন: ভিড়ের মাঝেও ‘বিরাট’ একা, লড়াইয়ের সঙ্গে ভালোবাসার মন্ত্রও শেখান কিং কোহলি
বহুবার বিরাট নিজেই তা প্রমাণ করেছেন। লন্ডনে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে সেবার ট্রফি হাতছাড়া হয় ভারতের। আর তারপরই বিলেতে কীর্তনের আসরে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী অনুষ্কা শর্মা। হৃষিকেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গুরু দয়ানন্দ গিরির আশ্রমে যেতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। আবার সস্ত্রীক বিরাট উজ্জয়ীনির মহাকালেশ্বর মন্দিরেও গিয়ে পুজো দিয়ে সেছেন। একটা সময় গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে বেজায় ঝামেলা চলছিল বিরাটের। সেই সময় একদিন তাঁকে মন্দিরে গিয়ে পুজো দিতে দেখা যায়। অনেকেরই ধারনা, জীবনের সংকট মুহূর্তে যেমন নিজেকে আরও কঠোর পরিশ্রমের দিকে ঠেলে দেন তিনি, তেমনই শরণ নেন আধ্যাত্মিকতারও। হয়তো এই চর্চার দরুণই বিরাট খুঁজে পান নিজেকে।
এই অতি সম্প্রতিও সেই একই দৃশ্য দেখা গেল। নিউজিল্যান্ডের কাছে টেস্টে সিরিজের গোড়াতেই ভরাডুবি হল ভারতের। ঠিক তারপরেই কৃষ্ণদাসের কীর্তনের আসরে দেখা গেল বিরাটকে। অর্থাৎ বিরাটের এই আধ্যাত্মিক চর্চা যে লম্বা ইনিংস তা বলার অপেক্ষা রাখে না। খেলার মাঠ এবং মাঠের বাইরে বিরাটকে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই অনুসরণ করেন। আদর্শ হিসাবে মানেন। তাঁদের কাছে বিরাটের এই অন্য ইনিংসও কি একই রকম গুরুত্ব বহন করে? বিরাট ভক্তদের মনে ভক্তির এই প্রশ্নও নিশ্চিতই তোলা আছে।