উইটনেস, অর্থাৎ সাক্ষী। নিজের নামকেই ব্যবহার করে আত্মজীবনীর নাম রেখে সাক্ষী মালিক বুঝিয়ে দিয়েছেন, সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য এই বইকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। কুস্তির আন্দোলন থেকে আন্দোলনে সতীর্থদের ভূমিকা, সবকিছু নিয়েই সাক্ষী দিয়ে গেলেন তারকা কুস্তিগির। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
কবি বলেন, এক দশকে সংঘ ভেঙে যায়। আর সময় বলে, দশকেরও প্রয়োজন হয় না, যে-কোনও সংঘ আরও দ্রুত ভেঙে যায় এ সময়ে। আন্দোলন গড়ে ওঠে যেমন, তেমনই আন্দোলনকে ঘিরে গড়ে ওঠা সংঘ ভাঙতে ভাঙতে চলে। সে কথাই বোধহয় আবার বুঝিয়ে দিলেন সাক্ষী মালিক।
উইটনেস, অর্থাৎ সাক্ষী। নিজের নামকেই ব্যবহার করে আত্মজীবনীর নাম রেখে সাক্ষী মালিক বুঝিয়ে দিয়েছেন, সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য এই বইকেই বেছে নিয়েছেন তিনি। কুস্তির আন্দোলন থেকে আন্দোলনে সতীর্থদের ভূমিকা, সবকিছু নিয়েই সাক্ষী দিয়ে গেলেন তারকা কুস্তিগির।
ভারতের প্রথম এবং এখনও পর্যন্ত একমাত্র মহিলা কুস্তিগির হিসাবে অলিম্পিক পদক জিতে ইতিহাস লিখেছিলেন সাক্ষী। আর কুস্তির আখড়ার বাইরেও তিনি নজির গড়েছেন। কুস্তি ফেডারেশনের সর্বেসর্বা তথা শাসক দলের বাহুবলী সাংসদ, তথা থ্রেট কালচারের সমগ্র সিস্টেমের বিরুদ্ধেই গর্জে উঠেছেন তিনি। রাজধানীর বুকে সতীর্থ কুস্তিগিরদের সঙ্গে ধরনা, পুলিশের তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছে গোটা দেশ। আত্মজীবনীতে সাক্ষী মালিক একটাই কাজ করেছেন, নিজের দেখা সেইসব ঘটনাগুলোর সাক্ষী করে তুলেছেন পাঠকদেরও। কুস্তির দুনিয়ায় আসা আর সেখান থেকে পাওয়া শিরোপার কথা যেমন বলেছেন, তেমনই বলেছেন এই দুনিয়ার অন্ধকার দিকগুলো আর সেখান থেকে পাওয়া আঘাতের কথা। ব্রিজভূষণের কীর্তির কথা খোলাখুলি লিখতে লিখতে কুস্তির আন্দোলন নিয়ে সাক্ষ্য দিয়ে গিয়েছেন তারকা কুস্তিগির।
আন্দোলন যত বড় হয়, তত সেখানে নানারকম বেনোজল ঢুকে পড়তে থাকে- এ কথা নতুন নয়। এ কথাও সকলেরই জানা যে, বড় আন্দোলনের সঙ্গে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নানারকম স্বার্থ জুড়ে যেতে চায়। সে কথা বলতেও ছাড়েননি সাক্ষী। তাঁর অভিযোগ, আন্দোলন শুরুর সময় তাঁদের উসকে দিয়েছিলেন বিনেশের আত্মীয়, আরেক তারকা কুস্তিগির ববিতা ফোগত। বিজেপি বিধায়ক ববিতা আশ্বাস দেন, নিজের দলের সাংসদ বলেই ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে তিনি প্রকাশ্যে মুখ খুলতে পারছেন না, তবে তাঁরা প্রতিবাদে নামলেই অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলে ব্রিজভূষণকে সরানোর ব্যবস্থা করে দেবেন তিনি। সাক্ষীর ইঙ্গিত, আসলে ববিতা ভেবেছিলেন ভারতের সেরা কুস্তিগিরেরা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে সরকার জবাব দেবেই। আর সেই সময় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে লাভের কড়ি গুনবেন ববিতা নিজেই।
কেবল আন্দোলনের শুরুতে নয়, পরেও আন্দোলনকারীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কথা বলেছেন সাক্ষী। স্পষ্ট বলেছেন, ‘স্বার্থপরতার জন্যই আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। বজরং ও বিনেশের কাছের মানুষরা লোভী হয়ে উঠেছেন। তাঁরা গেমসের ট্রায়াল থেকে ছাড় পাওয়ার ব্যাপারেও কথা বলেছেন। ট্রায়াল থেকে বজরং আর ভিনেশ ছাড় পাওয়ায় আন্দোলনের ক্ষতি হয়েছে। এতে কুস্তিগিরদের প্রতিবাদী ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। অনেকে ভেবে নিয়েছেন, আমরা আসলে স্বার্থপর। নিজেদের আখের গোছাতেই প্রতিবাদে ছিলাম।’ তাঁর সঙ্গী ছিলেন যে তারকা প্রতিবাদীরা, তাঁরা অ্যাড-হক কমিটির সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ায়, প্রতিবাদের উপযুক্ত ফল মেলেনি। আর এই মেনে নেওয়াকেই লোভের ফল বলে অভিযোগ সাক্ষীর।
যদিও ববিতা, গীতা তো বটেই, এমনকি বিনেশও – এক অর্থে গোটা ফোগত পরিবারই প্রায় সাক্ষীর অভিযোগের পালটা দিতে শুরু করেছেন। বিনেশের সওয়াল, যাকে ‘লোভ’ বলা হচ্ছে, তা দেশের জন্য, পরিবারের জন্য ভালো করার লোভ। কিন্তু যে যাই বলুন না কেন, সাক্ষী মালিক তো সাক্ষ্য দিতেই এসেছিলেন। গোটা আত্মজীবনী জুড়ে সে কাজটাই করে গিয়েছেন তিনি। পরবর্তী বিচারের ভার নাহয় থাকল পাঠকের হাতেই।