সর্বকালের সেরাদের তালিকায় নিজের নাম লিখতে পারেন প্রতিভাবানরাই। সাফল্যের খেতাব হাতে নিয়ে বারেবারেই এ কথা শুনেছেন ফেডেরার। কিন্তু কেবল প্রতিভাই কি শেষ কথা বলে? কী বললেন কিংবদন্তি তারকা?
লোকে বলে, র্যাকেট নয়, তুলির টানে টেনিস কোর্টে নকশা আঁকতেন সেই সুইস তরুণ। এত সহজ, এত অনায়াস, আর এত শৈল্পিক সুন্দর। টেনিসের যান্ত্রিক আধুনিকীকরণের সামনে যিনি ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন বছর কুড়ি। লোকে যাঁকে জানে রজার ফেডেরার নামে, আর চেনে ঘাসের কোর্টের রাজা বলে। একের পর এক গ্র্যান্ড স্লামে ফেডেরারের নাম খোদাই হয়ে যাওয়া দেখতে দেখতে তারা বারবার বলেছে, এ এক বিস্ময় প্রতিভা। না হলে কোনও মানুষের পক্ষে কি সম্ভব এমন ঐতিহাসিক জয়! কিন্তু ফেডেরার নিজে তাঁর সাফল্যকে কি সেই চোখেই দেখেছেন? প্রতি জয়ে প্রতিভার অলৌকিক ছোঁয়া লেগে রয়েছে বলেই কি বিশ্বাস ছিল তাঁরও? না। আদৌ নয়। সম্প্রতি নিজের বিশ্বাস থেকেই সাফল্যের তিন মন্ত্র ছেনে আনলেন ফেডেক্স। যা আরও একবার, আরও একটু উজ্জ্বল করে দিয়ে গেল তাঁকে।
আরও শুনুন:
ছোট্ট পনিটেল, হেডব্যান্ড আর উইম্বলডনের সেই রজার রাজার গল্প
সম্প্রতি ফেডেরারকে সাম্মানিক ডক্টরেট দিয়েছে আমেরিকার ডার্টমাউথ কলেজ। আর সেই উপাধি গ্রহণের ভাষণেই ফেডেরার জানালেন সাফল্যের রহস্য। তাঁর খেলার মতোই, তাঁর এই ভাষণের ভিডিও মুগ্ধ হয়ে দেখেছেন বিশ্বজোড়া মানুষ। নিজের জীবনে যিনি অসংখ্যবার প্রতিভার জয়গান শুনেছেন, তিনিই বলে দিচ্ছেন, আসলে প্রতিভা নয়, পরিশ্রমেই সাফল্যের আসল কথা লুকিয়ে। ফেডেরার সাফ বলছেন, কোনও কিছুই অনায়াস হয় না। আয়াস বা পরিশ্রম ছাড়া কোনও কিছুর ফল মেলে না। আসলে লোকের কাছে যা অনায়াস বলে মনে হয়েছে, খেলাকে সেই দক্ষতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁকে বছরের পর বছর ধরে ঘাম ঝরিয়ে যেতে হয়েছে।
ফেডেরারের এই বক্তব্য শুনে থেকে সাফল্যের সেই তিন মন্ত্র স্পষ্ট করে তুলে এনেছেন শিল্পপতি রাধিকা গুপ্তা। প্রথম কথা হল, শক্তি আর গতি ধরে রাখতে পারলে প্রথম দু’ঘণ্টা যে কেউ ভালো খেলতে পারেন। কিন্তু খেলা ঘুরে যায় তারপরেই, তখন শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। তখন নিজের শরীর মনকে আয়ত্ত রাখাই সাফল্য পাওয়ার প্রথম কথা। দ্বিতীয় কথা হল, প্রতিভা আসলে অলৌকিক কোনও উপহার নয়। প্রতিভা কোনও জাদুমন্ত্রও নয়, যা অনায়াসে কাউকে জয় এনে দেয়। আসলে জয়ের খিদেকেই প্রতিভা বলা যায়। নিজেকে বিশ্বাস করা, ধৈর্য ধরা, নিয়মানুবর্তিতা এবং এই সমগ্র প্রক্রিয়াটার মধ্যে দিয়ে নিজেকে গড়ে তোলা, একেই প্রতিভা বলে দেখেন ফেডেরার।
ফেডেরার হিসেব দিয়েছিলেন, সারাজীবনে তিনি যত ম্যাচ খেলেছেন, তার ৮০ শতাংশ ম্যাচ তিনি জিতেছেন। কিন্তু তাঁর ঝুলিতে এসেছে মাত্র ৫৪ শতাংশ পয়েন্ট। আসলে প্রত্যেক পয়েন্ট জিততেই হবে, এ কথা মনে করেন না চ্যাম্পিয়নরা। বরং পয়েন্ট না পাওয়া আর সেই না পাওয়ার ব্যর্থতাকে সামলে নিতে শেখেন যিনি, তিনিই সেরা হয়ে উঠতে পারেন।
আরও শুনুন:
অপেক্ষার ভারতবর্ষ জানে কামব্যাকের নাম শাহরুখ খান
গোটা কেরিয়ার জুড়ে সেরা হওয়ার স্বাদ পেয়েছেন ফেডেরার। কিন্তু সেই স্বাদের উপাদানে পাওয়া না-পাওয়া সবই যে জুড়ে আছে, তা মনে করিয়ে দিলেন ফেডেরার। টেনিস দুনিয়া ছাড়িয়ে জীবনের মাঠেও সাফল্য পেতে যে সেই মন্ত্র জরুরি, সে কথা শিখিয়ে দিলেন রজার ফেডেরার।