‘রিঙ্কু সিং নট আউট’ এক রূপকথারই নাম। তবে সে-রূপকথা কল্পনার তুলিতে নয়, বরং লেখা হয়েছে ঘাম আর শ্রমে। আইপিএলে দুরন্ত পারফরম্যান্সের জোরে জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ করে নিয়েছেন রিঙ্কু। কিন্তু তাঁর এই সাফল্যের নেপথ্যে মহেন্দ্র সিং ধোনি-র অবদানও রয়েছেন। সম্প্রতি সে কথা জানিয়েছেন রিঙ্কু নিজেই। আসুন শুনে নিই।
লাস্ট ওভারে ম্যাচ জেতানো। শেষ কয়েক বলে পর পর ছক্কা। গত আইপিএল-এ এমনই অবাক করা কিছু কান্ড ঘটিয়ে চর্চায় উঠে এসেছিলেন রিঙ্কু সিং। ওয়াকিবহাল মহল তখনই ভেবেছিল এবার জাতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছেন রিঙ্কু। দীর্ঘদিন ধরে তিনিও যে এই স্বপ্নই দেখে আসছেন। সম্প্রতি তা সত্যি হয়েছে। জাতীয় দলের জার্সি চাপানোর আগে ক্রিকেট জীবনের স্মৃতিচারণা করেছেন তিনি। আর সে প্রসঙ্গেই ঊথে এসেছে মহেন্দ্র সিং ধোনির নাম।
ক্রিকেট খেলার জন্য একসময় বাবার হাতে মার খেয়েছিলেন। বাবারই বা আর দোষ কোথায়! গ্যাস সিলিন্ডার ডেলিভারি করে সামান্য উপার্জন। দু-কামরার ঘরে বসে থাকা অনেকগুলো মানুষের খিদের গল্প তাঁকে তো নিয়ত তাড়া করছে। এমন সংসারে ক্রিকেট খেলার বিলাসিতা কি মানায়! রিঙ্কুর শ্রমজীবী বাবা জীবনের মার খেতে খেতেই বুঝেছিলেন, ব্যাটের ঔদ্ধত্যে বোলারকে ছক্কা মারার থেকে অনেক বেশি জরুরি পেটের ভাত জোটানো। দিনরাট ব্যাট নিয়ে পড়ে থাকার থেকে বরং পড়াশোনায় মন দেওয়া ভাল। অতএব ক্রিকেট খলতে নেমে রিঙ্কুর কপালে জুটল বাবার মার। আসলে সে মার জীবনেরই। সকলেই জানেন না, তবে রিঙ্কু জানেন, কী করে সেই মারের মুখের উপর দিয়ে ফুল তুলে আনতে হয়। এমনি এমনি তো আর জীবনের রূপকথা লেখা হয় না।
সম্প্রতি জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়ে নিজেকে ফের প্রমান করলেন রিঙ্কু। যে স্বপ্ন তিনি এতদিন ধরে তা সত্যি হওয়ায় আবেগে ভেসেছেন উত্তরপ্রদেশের এই ব্যাটার। খেলার মাঠে নিজের জাত চেনানোর পরই চর্চায় উঠে এসেছিল রিঙ্কুর পরিবারের কথা। জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েই সবার আগে সেই পরিবারকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি। জীবনের কঠিন সময় পরিবার পাশে না থকলে কিছুই করতে পারতেন না বলেই জানিয়েছেন। তাই জাতীয় দলের জার্সিতে রিঙ্কুকে দেখে তাঁর থেকেও বেশি খুশি হবেন বাড়ির লোকজন। এমনটাই মনে করছেন রিঙ্কু নিজেও। তবে যেহেতু তাঁর এই ব্যাপক পরিচিতি আইপিএল-এর সুবাদে তাই সে প্রসঙ্গেও কিছু অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করেছেন রিঙ্কু। জাতীয় স্তরের অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলার সুযোগ পাওয়ায় নিজেকে ধন্য মনে করেছেন তিনি। বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। ভারতীয় ক্রিকেটের উজ্জ্বল নক্ষত্রদের মধ্যে অন্যতম ক্যাপ্টেন কুল। একদিন তাঁর কাছেই ব্যাটিং ভালো করার পরামর্শ চেয়েছিলেন রিঙ্কু। উত্তরও দিয়েছিলেন ধোনি। ঠিক কী করলে ব্যাটিং আরও ভাল হবে এই ধরনের কথা না বলে, রিঙ্কুকে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পরামর্শই সেদিন দিয়েছিলেন তিনি। রিঙ্কুর ব্যাটিংয়ে বিশেষ ভুল নেই বলেও জানিয়েছিলেন মাহি, এমনটা বলেছেন খোদ রিঙ্কু। আর সেই পরামর্শ মেনেই নিজের স্টাইল বজায় রেখেছেন রিঙ্কু। যার ফল মিলেছে হাতেনাতে। একাধিকবার ব্যর্থ হলেও শেষ হাসি হেসেছেন তিনিই। প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনিও কোনও অংশে কম নন। তবে জীবনে যতই উন্নতি করে ফেলুন, ধোনির কথা আজীবন মনে থাকবে বলেই দাবি রিঙ্কুর। আগামীদিনে জাতীয় দলেও হয়েও একইরকম ব্যাটিং করতে চান তিনি। আর সেইকাজে ক্যাপ্টেন কুল-এর পরামর্শ যে যথেষ্টই কাজে দেবে তা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন রিঙ্কু নিজেও।