ফুটবলের যদি কোনও দেশ হয়, সে দেশের জাতীয় সম্পদ নিঃসন্দেহে পেলে।দারিদ্র্যকে ড্রিবল করতে করতেই তাঁর উঠে আসা। একসময় বল কেনার পয়সা ছিল না।মোজায় কাগজ ভরেই চলত খেলা। শোনা যায়, চায়ের দোকানে কাজ করা থেকে জিনিসপত্র ফেরি করা, রুটি জোগাতে সবই করতে হয়েছে তাঁকে। দারিদ্র্য যত আঁকড়ে ধরেছে, তিনি তত আঁকড়ে ধরেছিলেন ফুটবলকে। সেই ফুটবলেই তাঁর উত্তরণ।
ফুটবলের যদি কোনও দেশ হয়, সে দেশের জাতীয় সম্পদ নিঃসন্দেহে পেলে। এই অভিধা তাঁকে দিয়েছিলেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট। সত্যিই তো, যে দেশের ইতিহাসে একজন পেলে আছেন, সে দেশ তার জাতীয় সম্পদকে নিয়ে গর্ব করবে নাই-বা কেন! আর তিনি, স্বয়ং ফুটবলসম্রাট, যখন ফুল ফোটাচ্ছেন পায়ের জাদুতে, তখন নিজের দেশের নামই তো জগতের সামনে উড়িয়ে দিয়েছিলেন নিশান করে। তবু আজ পিছু ফিরে দেখলে মনে হয়, পেলে নিজেই যেন নিশান হয়ে পেরিয়ে গিয়েছেন ব্রাজিলের গণ্ডি। আসলে তিনি নিশান হয়ে উঠেছেন সেই দেশের, যে দেশের নাম ফুটবল।
দারিদ্র্যকে ড্রিবল করতে করতেই তাঁর উঠে আসা। একসময় বল কেনার পয়সা ছিল না। তাতে অবশ্য খেলার নেশায় ঘাটতি হয়নি। মোজায় কাগজ ভরেই চলত খেলা। শোনা যায়, চায়ের দোকানে কাজ করা থেকে জিনিসপত্র ফেরি করা, রুটি জোগাতে সবই করতে হয়েছে তাঁকে। দারিদ্র্য যত আঁকড়ে ধরেছে, তিনি তত আঁকড়ে ধরেছিলেন ফুটবলকে। সেই ফুটবলেই তাঁর উত্তরণ। শুধু উত্তরণ নয়, এই যে ফুটবল আর পেলে প্রায় সমার্থক হয়ে উঠল সে যেন এক লড়াইয়ের ইতিহাস। হার না মানার, ভালবাসাকে আঁকড়ে ধরার। পেলে আসলে সেই উত্তরণের নিশান হয়েই ধরা দিলেন বিশ্বের সামনে।
অথচ তাঁর নামটাই তো পেলে নয়। এটা তো নেহাতই ডাকনাম। বন্ধুদের দেওয়া। যত এই নাম শুনে তিনি রেগে যেতেন, ততই খেপিয়ে তুলত বন্ধুরা। সেই নামই সোনার অক্ষরে লেখা হল ইতিহাসের পাতায়। এমন সব কীর্তি তিনি গড়লেন, যে এই নামই পেল অমরত্ব। এমনকী ব্রাজিলে পেলে দিবসও পালিত হয়। তাঁর মূর্তি থেকে মিউজিয়াম – কী নেই! আসলে পেলে হলেন সেই নিশান, যে নিশান জানান দেয়, নামের সীমানা পেরিয়ে কেউ কেউ হয়ে ওঠেন ঘরানা।
ফুটবল যদি শিল্প হয় পেলে নিশ্চিতই সে শিল্পের অভিজাত ঘরানা। সেই ঘরানা, যা শুধু সাফল্যের খতিয়ানে সীমাবদ্ধ নয়। ফুটবল সম্রাটের সাফল্যগাথা তো বিশ্ববাসীর অজানা নয়। হয়তো মুখস্থও। কিন্তু পেলে কি শুধু পরিসংখ্যান! না, পেলে আসলে এক জীবনদর্শন। দারিদ্র্যকে ড্রিবল করে যা ছিনিয়ে আনতে পারে সাফল্য। সাফল্যের তুঙ্গ স্পর্শ করেও যার পা ওঠে না মাটি থেকে। বিতর্ক নয়, দামাল ঝড়ের দাপট নয়, মহীরুহের গাম্ভীর্যে যে বনস্পতি ছায়া দিতে পারে দীর্ঘদিন। খ্যাতি তো আপেক্ষিক! দেশ আর কালের গণ্ডি পেরিয়ে সম্রাট হয়ে থেকে যেতে পারেন আর কতজন! পেলে পেরেছেন। অসংখ্য মানুষকে ভালবাসার বাঁধনে বেঁধে তিনি নিজেই হয়ে উঠেছিলেন যেন আস্ত একটা দেশ।
মৃত্যু তাঁকে কেড়ে নিতে পারে না। ভালবাসার সেই দেশে উজ্জ্বল এক নিশান হয়েই চিরকাল থেকে যাবেন পেলে।