চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজক দেশ হিসেবে নিজেদের সফল বলেই দাবি করছে পাকিস্তান। অথচ পাকভূমে একটিও ম্যাচ খেলেনি ভারত। এছাড়া বৃষ্টির কারণে ম্যাচ বাতিলের মতো অনেক সমস্যাই হয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন এমন দাবি পাকিস্তানের? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বৃষ্টির জন্য বাতিল হয়েছে তিনটি ম্যাচ, সেমি ফাইনালের আগেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে জাতীয় দল, নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যা, চরম অব্যবস্থার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজনে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে বেজায় খুশি সে দেশের বিশেষজ্ঞরা। এর প্রভাবেই আগামীদিনেও আরও বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের বরাত পাবে পাকিস্তান, এমনটাই তাঁদের আশা।
:আরও শুনুন:
ঘরে হিন্দুর প্রবেশ নিষেধ, নমাজ পড়েন গোপনে, ম্যাচ জিততে আর কী ‘টোটকা’ পাক অধিনায়কের?
যে কোনও দেশই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে চায় ভবিষ্যতের কথা ভেবে। তাতে স্রেফ আর্থিক মুনাফা নয়, সামগ্রিক লাভও হয়। পাকিস্তানও মোটের উপর এইসব লাভের কথা ভেবেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। যতই পরিকাঠামোর অভাব থাকুক, টুর্নামেন্ট আয়োজনে কোনও খামতি রাখবেন না, এমনটাই পন করেছিলেন পাক ক্রিকেট বোর্ডের আধিকারিকরা। বাস্তবে যা দেখা গিয়েছে, তাতে এটুকু বলা যায় যে চেষ্টার ত্রুটি হয়তো ছিল না। অন্তত খরচের দিক দিয়ে তো নয়ই। কোটি কোটি টাকা খরচ করে নতুন স্টেডিয়াম তৈরি করা হয়। নতুন করে সেজে ওঠে পাকিস্তান। কিন্তু এতকিছু করেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি। বরং পাকিস্তানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজন আর বিতর্ক, এ যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ হয়ে ওঠে অল্পদিনে। একের পর এক বিভ্রাট, বৃষ্টিতে ম্যাচ বাতিল, ফিল্ডিং করতে গিয়ে আলোর অভাবে খেলোয়াড়ের চোট, সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফ্রি আয়োজক দেশটি। এক্ষেত্রে বড় একটা সমস্যা ছিল ভারতের পাকিস্তানে খেলতে না যাওয়া। একপ্রকার বাধ্য হয়েই হাইব্রিড মডেলে খেলার জন্য রাজি হতে হয় পাকিস্তানকে। তাতে প্রথমে আপত্তি না থাকলেও, পরের দিকে আপত্তি তোলেন অনেকেই। কারণ ভারত একমাত্র দল হিসেবে একই জায়গায় সমস্ত ম্যাচ খেলার সুবিধা পেয়েছে। এদিকে অন্যান্য দলগুলিকে বারবার যাতায়াত করতে হয়েছে পাকিস্তান-দুবাই। এদিকে যে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে পাকভূমে পা রাখেনি ভারতীয় দল, সেটিও উপেক্ষা করার উপায় নেই।
তাহলে, পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজনকে কেন সফল মনে করছেন সে দেশের বিশেষজ্ঞরা?
:আরও শুনুন:
রোহিত শর্মার চেহারা খেলার যোগ্য কি না, ঠিক করবে সোশাল মিডিয়া?
একটা নয়, তার অনেক কারণ রয়েছে। বিষয়টা অনেকটা, ‘নেই মামার চাইতে কানা মামা ভালো’ এরকম। আসলে, পাকিস্তান ২৯ বছর পর বিশ্বমানের কোনও টুর্নামেণ্টে ফিরল। স্রেফ এটুকুই সে দেশের অনেকের কাছে রীতিমতো গর্বের মনে হয়েছে। কূটনৈতিক কারণে বিশ্বের দরবারে বর্তমানে পাকিস্তান যেভাবে পরিচিত, তাতে এমন টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়াটাই বড় কথা। সেখানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির অন্যতম আয়োজক দেশ হওয়ার সুযোগ পেয়েছে পাকিস্তান। শুধু তাই নয়, এর জন্য যথেষ্ট খরচ ও পরিকল্পনা করেছে পাক ক্রিকেট বোর্ড। এই বিষয়টাকেও ইতিবাচক মনে করছেন সে দেশের ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। খেলায় তো হার-জিত থাকবেই, তাই টুর্নামেন্ট থেকে পাকিস্তানের ছিটকে যাওয়াটাকে তেমন আমল দিতে নারাজ অনেকেই। আয়োজক দেশ হিসেবে কতটা গুরুত্ব পেল পাকিস্তান, এটাই মূল আলোচ্য হয়ে উঠছে পাকভূমে। সেখানেও কাঁটার মতো বিঁধেছে ভারতের খেলতে না যাওয়া বা পরিকাঠামো নিয়ে অন্যান্য দেশের অভিযোগ। তবু সব খেলা যে নিরাপদে সম্পন্ন করা গিয়েছে, এই নিয়েই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন পাকভূমের ক্রিকেট প্রেমীরা। জানা গিয়েছে, সেমি-ফাইনালের যে ম্যাচটি পাকিস্তানে হয়েছিল, তার ঠিক আগের দিন স্টেডিয়ামের অনতিদূরে জঙ্গিহামলা হয়। তার এতটুকু আঁচ পড়েনি খেলোয়াড়দের গায়ে। এই ধরনের ঘটনাকেই উদাহরণ হিসেবে দেখতে চাইছেন সে দেশের বিশেষজ্ঞরা। যেহেতু নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ কোনও অভিযোগ ওঠেনি, তাই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আয়োজনকে বড় সাফল্য হিসেবেই দেখছেন তাঁরা।