প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতিযোগিতা। ক্রীড়াদুনিয়ায় এ তো খুব চেনা শব্দ। ক্রীড়াবিদদের মধ্যে যে তা যে প্রখর হবে, তা নিয়েও কোনও সন্দেহ নেই। তবে, সে সব পেরিয়েও পড়ে থাকে মানবিকতার এক প্রসারিত ভূমি। বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জয়ের পর সেরকমই এক সোনার মুহূর্ত উপহার দিলেন সোনার ছেলে নীরজ চোপড়া। কী করলেন তিনি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
ভারত বনাম পাকিস্তান। ক্রীড়াদুনিয়ায় এমন প্রতিযোগিতা মানেই হাই-ভোল্টেজ উত্তেজনা। টানটান প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং দেশের জন্য সম্মান ছিনিয়ে আনার অদম্য ইচ্ছে। এই সবকিছুরই সাক্ষী থেকেছে দুনিয়া। যখন চলছিল নীরজ চোপড়া বনাম আর্শাদ নাদিমের ডুয়েল। সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শেষ হাসি হেসেছেন নীরজই। তবে নজির গড়ে জয় হাসিলের পরেই বিশ্বের সামনে সৌহার্দ্যের উজ্জ্বল নমুনা তুলে ধরেছেন নীরজ।
ততক্ষণে বিশ্ব অ্যাটলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ইতিহাস গড়েছেন নীরজ। প্রথম ভারতীয় হিসাবে ছিনিয়ে এনেছেন সোনা। নীরজের থেকে মাত্র ০.৩৫ মিটার কম দূরত্বে জ্যাভলিন ছুড়ে পাক ক্রীড়াবিদ আর্শাদ নাদিম ছিলেন দ্বিতীয় স্থানে। তৃতীয় স্থানে ছিলেন চেক প্রজাতন্ত্রের ক্রীড়াবিদ। খেলা শেষে যখন তাঁরা ছবি তুলছিলেন, তখন দেখা গেল নাদিমের কাছে নেই তাঁর দেশের পতাকা। তিনি নীরজের পাশেই একটু দূরে দাঁড়িয়েছিলেন। দেখে সঙ্গে সঙ্গেই নাদিমকে পাশে ডেকে নেন নীরজ। নাদিমও চলে আসেন। দুই পড়শি দেশের শীর্ষ ক্রীড়াবিদ বাঁধা পড়েন এক ফ্রেমে, মনের বন্ধনে।
আসলে রাজনীতির কারণেই ভারত-পাকিস্তান মানেই যেন একটা বৈরিতার আবহ ফুটে ওঠে। প্রশাসনিক স্তরে নানা তিক্ততা নিশ্চিতই আছে। কিন্তু ক্রীড়া তো প্রতিযোগিতার সূত্রে একে অন্যকে মিলিয়ে দিতেই সাহায্য করে। সেখানে কোনও শত্রুতা থাকে না। প্রতিদ্বন্দ্বিতা পেরিয়ে জীবন অনেক বড়। সাফল্যের থেকেও অনেক বড় মানবিকতা। সেখানে দুই দেশের তিক্ততা থাকা উচিত নয়। নীরজ তা রাখেনওনি। বরং বন্ধুত্বের যে বাতাবরণ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তা দুই দেশের জন্যই কাঙ্ক্ষিত।
এই ক-দিন আগে ইন্টার মায়ামিকে চ্যাম্পিয়ন করে মেসি তাঁর ক্যাপ্টেনের আর্ম ব্যান্ড তুলে দিয়েছিলেন দলের পূর্বতন অধিনায়কের হাতে। এবার নীরজও অনায়াসে পাশে ডেকে নিলেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে। আসলে বড় ক্রীড়াবিদ তো তাঁরাই, যারা প্রতিযোগিতা জেতার মধ্যে নিজেকে সীমায়িত রাখেন না। মেসিও রাখেননি, নীরজও না। প্রতিযোগিতার থেকেও যে সৌহার্দ্য অনেক বড়, সোনার মুহূর্তে সে কথাটিই যেন মনে করিয়ে দিলেন দেশের সোনার ছেলে।