কেউ তাঁকে বলেন আধুনিক ফুটবলের ঈশ্বর। কেউবা বলেন, তিনি ফুটবলের শিল্পী, জাদুকর। তিনি লিওনেল মেসি। মাঠে তিনি ম্যাজিক করেন বটে, তবে সেই ম্যাজিক যে অক্লান্ত পরিশ্রমেই সম্ভব হয়ে ওঠে, তা কে না জানে! সেই কথাটাই ধরিয়ে দিলেন মুকেশ আম্বানি। মেসিকে মহাভারতের অর্জুনের সঙ্গেই তুলনা করলেন তিনি। কেন? আসুন শুনে নিই।
সৌদি আরবের কাছে অপ্রত্যাশিত হার। বিশ্বকাপের শুরুতে সেই কাঁটার আঘাত রক্ত ঝরিয়েছিল আর্জেন্টিনার সমর্থকদের বুকে। ভেঙে পড়েছিলেন অনেকে। আরও একবার ব্যর্থতার প্রহরের সাক্ষী হতে হবে, এমনটা ধরেই নিয়েছিলেন প্রায়। কিন্তু তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন। ভক্তদের উদ্দেশে জানিয়েছিলেন, একটু ভরসা রাখুন। ধৈর্য ধরুন। আমরা হেরে যেতে আসিনি, ঠিক ঘুরে দাঁড়াব। বক্তা তো স্বয়ং লিওনেল মেসি। আধুনিক ফুটবলের ইতিহাসে যিনি রূপকথার জন্ম দিয়েছেন। আবার তিনিই আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। অনুরাগীরা তাই তাঁর কথায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন। তিনিও ছাড়েননি ভরসার হাত। বিশ্বকাপের বাকিটা জুড়ে সারা বিশ্ব দেখল, একজন অধিনায়ক কীভাবে তাঁর দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। কীভাবে পৌঁছে দিতে পারেন বিশ্বজয়ের মঞ্চে। লিওনেল মেসি, যা বলেছিলেন, তা করেও দেখিয়েছিলেন। কেননা লক্ষ্য থেকে একমুহূর্ত বিচ্যুত হননি তিনি। ঠিক এই কথাটাই ধরিয়ে দিলেন মুকেশ আম্বানি।
আরও শুনুন: নতুন বছরেও বিপর্যয়! ২০২৩ নিয়ে কী কথা শুনিয়ে গিয়েছিলেন বাবা ভাঙ্গা?
ধীরুভাই আম্বানির জন্মদিন উপলক্ষে, তাঁর সংস্থার কর্মচারীদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন মুকেশ আম্বানি। আর সেখানেই তিনি টেনে আনেন, আর্জেন্টিনার বিশ্বজয় ও মেসির অধিনায়কত্বের প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, “আর্জেন্টিনা কী করে বিশ্বকাপ জিতল? দলগত পরিশ্রম এবং সঠিক নেতৃত্বের মিশ্রণেই এল সাফল্য। আর্জেন্টিনা যেমন মেসিকে ছাড়া বিশ্বকাপ জিততে পারত না, তেমনই মেসিও আর্জেন্টিনা দলকে ছাড়া তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছতে পারতেন না।” সাফল্যের জন্য এই রসায়ন যে আবশ্যক, তা মনে করিয়ে দেন আম্বানি। তিনি বলেন, “মেসি এবং তাঁর দল যেন মহাভারতের যোদ্ধা অর্জুনের মতো। পাখির চোখ ছাড়া তাঁরা আর কিছুই দেখেননি। তাই লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছেন। যে লক্ষ্যে তিনি পৌঁছাতে চান, সেটা অর্জনের জন্য যা যা দরকার তাই-ই করেছেন তাঁরা। এটাই সাফল্যের মূলমন্ত্র।”
আরও শুনুন: বারাণসী নাকি হরিদ্বার! ২০২২-এ কোন ধর্মস্থানে ভক্তরা ভিড় জমালেন বেশি?
জাদুকর মেসি, শিল্পী মেসিকে নিয়ে আমাদের যত আগ্রহ, প্রায় ততটাই অনালোচিত থেকে যায়, তাঁর পরিশ্রম, হার-না মানার কাহিনিগুলো। লক্ষ্যে স্থির থাকা সহজ নয়। স্বয়ং মেসিও হতাশায় ডুবে একবার সব ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে আবার ফিরেও এসেছেন। নয়া ইতিহাস রচনা করেছেন। নেপথ্যে অবশ্যই আছে তাঁর পরিশ্রম, জেদ এবং অবিচল লক্ষ্য। পেপ গুয়ার্দিওয়ালা বলেছিলেন, মাঠে নেমে মেসি মিনিট পাঁচেক ক্রমাগত মাথা ঘোরাতে থাকেন। চারপাশটা লক্ষ্য করতে থাকেন। মাঠের মানচিত্র মাথায় আঁকা হয়ে গেলে, এমন ফাঁকফোকর তিনি খুঁজে বের করেন, যা অন্যের কল্পনার অতীত। আমরা তাকে ম্যাজিক বলি। বলতে ভালবাসি, কিন্তু ম্যাজিক আচমকা ঘটে না। ধৈর্য-পরিশ্রমে কোনও একজনকে ম্যাজিক করতে হয়। লিওনেল মেসি ব্যক্তিগত ভাবে তা করেন, করে থাকেন। আবার যখন দলগত সাম্যের দরকার ছিল, তখন নিজেকে বদলে ফেলে দলকে চাঙ্গা করার কাজও তিনি করেছেন। একটা গোটা দল খেলেছে মেসির জন্য, আর মেসি খেলেছে দলের জন্য। এই রসায়ন এনেছে সাফল্য। আর তার জন্য জরুরি লক্ষ্যে অবিচল থাকা। যা শুধু খেলা নয়, খেলার বাইরে, এমনকী কর্পোরেট দুনিয়াতেও উদাহরণযোগ্য। মেসিকে অর্জুনের সঙ্গে তুলনা করে সে কথাই মনে করিয়ে দিলেন মুকেশ আম্বানি।