যুবভারতীতে ভারতসেরা মোহনবাগান। মুম্বই সিটি এফসিকে বিধ্বস্ত করে লিগ শিল্ড ঘরে তুলেছে আন্তোনিও হাবাসের ছেলেরা। স্বপ্নের শিল্ডজয়ে আবেগে ভেসেছেন মোহন সমর্থকেরা। সামনে থেকে দেখা স্বপ্নজয়ের সেই মুহূর্তের কথা লিখলেন দেবাঞ্জন নন্দী।
চুনি গোস্বামী একটা কথা বলেছিলেন, “ঝড়ঝাপটা যাই আসুক না কেন মোহনবাগান ছেড়ে কোনওদিন যাবি না”
সমর্থককুলের কাছে ক্লাবের ভালোমন্দ সব কিছুই থাকে। শুধু থাকেই না, তারা এটা নিয়েই চলতে চায়। দুবেলা খাবার না পেলেও সমর্থকদের কাছে এই ক্লাব মায়ের সমান। এখন অনেক ভালো সময় সমগ্র মোহনবাগানের। তাই খারাপ সময়ের দিনগুলোর কথা বেশি করে মনে পড়ে। রেলিগেশন-এর লড়াই, কল্যাণী স্টেডিয়ামে দুপুর দুটোয় ম্যাচ, হাতেগোনা জনাকয়েক সমর্থকের দেখা মেলে। তখন অবশ্য লড়াই ছিল ফিরে আসার। মোহনবাগান ফিরেও এসেছিল সেবার।
এই মরশুমের আগে ক্লাবে আইএসএল ট্রফি এল। মরশুমের শুরুতেই আবার জাতীয় ট্রফি ডুরান্ড এল। তবুও আইএসএল-এর লিগ চ্যাম্পিয়নটা ভীষণভাবে দরকার ছিল। ফুটবলের জমিদার যারা, তাদের শিল্ড থাকবে না হয় নাকি! কিন্তু এই যাত্রাপথ সহজ ছিল না একদমই। মরশুমের শুরুতে ৭০ কোটির দল নিয়ে মাঠে নামার চাপ, সঙ্গে বেশ কিছু নতুন খেলোয়াড়ের অন্তর্ভুক্তি। শুরুটা ভালোও করলাম, কিন্তু তারপর তাল কাটল। এমন সময় কাটল লিগে পরপর তিন ম্যাচের হার, এএফসি থেকে বাদ। দলের মাথায় এল হাবাস। হাবাসের কাজ ছিল আরও কঠিন, হাতে নিয়ে বুঝতে পেরেছিল কী কী দাওয়াই দরকার আছে এই দলটার! সব ঠিক করলেন। বদমেজাজি হুগোকে সরিয়ে আনলেন কাউকোকে। দল আবার ফিরল মেজাজে। সাহালের চোটের পর থাপা আর কাউকো জমিয়ে দিল বাকিটা। সাপ লুডোর এই লিগ ফরমেশন সবসময় জমজমাট হয়, প্রথম লেগের ৭ ম্যাচের পর মোহনবাগান এক নম্বরে গিয়েছিল একবারই ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে দ্বিতীয় লেগে। তারপর আর নয়। একদম শেষ ম্যাচেই একনম্বর আর লিগ চ্যাম্পিয়ন। পিছনের সারিতে থেকে এক নম্বরে শেষ করার এই মেজাজটা বলে দেয় মোহনবাগানের সাফল্য। একরাশ কুর্নিশ মোহনবাগানের সমস্ত ফুটবলার, কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে সবাইকে।
২০০৮ সালের সল্টলেক স্টেডিয়ামকে মোহনবাগান আর বায়ার্ন ম্যাচের কথা মনে পড়ে। যেখানে সবাই গিয়েছিল আলিভারকে দেখার জন্য। তখন যুবভারতী অনেকটা বড়। সিমেন্টের পাটাতনের উপর বসে খেলা দেখতেন সমর্থকরা। ২০১২-র সবুজ তোতার বিদায়ী ম্যাচেও প্রায় ভর্তি স্টেডিয়াম ছিল। আর কালকের যুবভারতী ছিল একদম অন্যরকম। ৬১ হাজার ভর্তি স্টেডিয়ামের প্রত্যেকটা জায়গাই ছিল মোহনবাগানের নামে। হ্যাঁ, শুধুই মোহনবাগান। যেখানে হাসি-কান্না সবটাই ছিল সবুজ-মেরুনের জন্য। মাঠের একটা ভয়ংকর দিক আছে, ওই ৯০টা মিনিটে কোনও মানুষের ভেদাভেদ নেই। জীবন বাজি রাখার মতো সবাই এক জায়গায়, সবাই এককেন্দ্রিক। বড্ড ভালো লাগার এই অনুভূতিটা।
একরাশ কুর্নিশ মোহনবাগানের সমস্ত ফুটবলার, কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে সবাইকে।