খেলা একটাই- ফুটবল। কিন্তু অংশগ্রহণকারী দেশ তো অনেক, আর তাই পদে পদে টের পাওয়া যায় সাংস্কৃতিক বৈচিত্র । এদিকে আয়োজক দেশ কাতারে যেন জারি একুশে আইন। তার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে বারেবারেই হোঁচট খাচ্ছেন ভিন দেশের অতিথিরা। ঠিক সেভাবেই বিতর্কের মুখে পড়লেন ক্রোয়েশিয়ার এক মডেল। কারণ, বিকিনি থেকে খোলামেলা পোশাক, সবকিছু পরেই ঘুরছেন তিনি। আর তাতেই বেজায় চটেছে কর্তৃপক্ষ।
কাতার আয়োজিত বিশ্বকাপ গোটা বিশ্বের কাছে যেন নতুন নিয়ম শেখার পাঠশালা হিসাবে ধরা দিয়েছে। আসলে নিয়ম নতুন নয়। কিন্তু কাতারের রক্ষণশীল নিয়মকানুনের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে হাঁসফাস করতে হচ্ছে অন্য দেশের মানুষকেও। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আছে ধর্মের দোহাই। কিন্তু কথায় বলে, বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো। অর্থাৎ যত নিয়মের কড়াকড়ি, ততই নিয়ম ভাঙার হিড়িক। আর তাই প্রায়শই খোলামেলা পোশাকে খেলার মাঠে হাজির হচ্ছেন ভিন দেশের সুন্দরীরা। শনাক্ত করতে পারলে তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তবু দমবার পাত্রী নন তাঁরা। প্রতিবাদে আরও সাহসি পোশাক পরে বেরিয়ে পড়ছেন রাজপথে। তেমনই নজির গড়লেন এক ‘ক্রোয়েশীয় সুন্দরী’।
আরও শুনুন: সঙ্গিনীর সঙ্গে সঙ্গমের উত্তেজনায় মৃত্যু বৃদ্ধের, দেহ লোপাটে সহায়তা খোদ মহিলার স্বামীর
জাতীয় দলের দ্বিতীয় ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার পতাকা আঁকা আঁটসাঁট পোশাক পরে হাজির হয়েছিলেন। উন্মুক্ত তাঁর বক্ষভাঁজ, যদিও তা নিয়ে চিন্তিত নন তিনি মোটেই। সেই ছবি নিজেই প্রকাশ করেছিলেন সামাজিক মাধ্যমে। কিন্তু এমন ছবি দেখেই ধেয়ে আসে নেটিজেনদের ‘হুমকি’। সেখানে কড়া ভাষায় তাঁর উদ্দেশে লেখা হয়, কাতারে এমন পোশাক পরে খেলা দেখলে জেল হতে বাধ্য। যদিও সেসবের পরোয়া করেননি তিনি। বরং বিকিনি পরে হাজির হয়েছিলেন সমুদ্র সৈকতে। সেই লাস্যময়ী ছবি নেটদুনিয়ায় ঝড় তুললেও ব্যাপারটি মোটেও পছন্দ হয়নি কাতার কর্তৃপক্ষের।
বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা এই মহিলার নাম ইভানা নল, তিনি পেশায় মডেল। ৩০ বছর বয়সি ইভানা এক সময়ে ক্রোয়েশিয়ার সেরা সুন্দরী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। জাতীয় দলকে সমর্থন করতেই তিনি কাতারে এসেছেন। কিন্তু নতুন দেশটিতে প্রচলিত কোনও নিয়মকেই তিনি মানতে চান না। আর তার জেরেই তাঁকে কেন্দ্র করে ঘনিয়েছে বিতর্ক। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই কাতার প্রশাসন জানিয়েছিল তাঁদের দেশের প্রচলিত পোশাকবিধির কথা। যা অধিকাংশ পাশ্চাত্যের দেশগুলির সঙ্গে মেলে না। বলা হয়ছে, খেলা দেখতে আসা পর্যটকরা যেন খোলামেলা পোশাক পরা থেকে বিরত থাকেন। বিশেষত মহিলারা যেন কাঁধ ঢাকা পোশাক পরেন। মিনি স্কার্ট বা যে পোশাকের দৈর্ঘ্য হাঁটুর উপরে,তা পরায় নিষেধাজ্ঞা জারি। সে নিষেধাজ্ঞা জারি পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই। কিন্তু সেসবের পরোয়াই করেননি ইভানা। আল বায়াত স্টেডিয়ামে মরক্কো বনাম ক্রোয়াশিয়ার ম্যাচে তথাকথিত নিয়মবিরুদ্ধ পোশাক পরেই হাজির হন তিনি। সেই ছবি নেটমাধ্যমে প্রকাশ করায় অনেকেই তাঁকে কাতার প্রশাসনের প্রবর্তিত নিয়মের কথা মনে করিয়ে দেন। কিন্তু সেসব কথাতেও পাত্তা না দিয়ে আবার বিকিনি পরে কাতারের সমুদ্র সৈকতে ঘুরে বেড়ালেন তিনি। শুধু তাই নয় সেখানে গিয়ে ভিডিও বার্তায় কাতার সম্পর্কে নানা অভিযোগও করেছেন তিনি। সরাসরি কাতার প্রশাসনকে বিশ্বকাপের ‘জঘন্য আয়োজক’ বলেও তোপ দেগেছেন তিনি।
আরও শুনুন: লটারিতে স্বামী জিতেছেন ১.৩ কোটি, টাকা নিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধতে চললেন স্ত্রী
কাতারের প্রচলিত পোশাকবিধি নিয়ে বেশ চিন্তায় প্রায় সকলেই। ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের স্ত্রী ও বান্ধবীরা তো পড়েছিলেন মহা মুশকিলে। কী পরা চলবে আর চলবে না, তা বুঝতে না পেরে তাঁরা অভিজ্ঞ স্টাইলিস্টদের পরামর্শ নেন। তবে এই ক্রোয়েশিয়ার এই মডেল কি শাস্তির মুখে পড়বেন? তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপই হয়তো তা ঠিক করে দেবে। বিশ্বকাপে ফুটবলের বাইরেও পোশাক কিংবা নিয়মকানুন নিয়ে এত চর্চা, সম্ভবত কাতারের আগে আর কোথাও দেখা যায়নি।