অনেকেই বলেন, আজকের যুগে সবাই নাকি সারাক্ষণ নিজেরটা নিজে বুঝে নিতেই ব্যস্ত। তবে তার মধ্যেও কি মানবিকতার ছবি, পরোপকারের দৃষ্টান্ত চোখে পড়ে না? পড়ে বইকি। সম্প্রতি তেমনই নজির রাখলেন টোকিও অলিম্পিকের মেডেলজয়ী এক জ্যাভলিন থ্রোয়ার। শুনে নিন সেই আশ্চর্য গল্প।
টোকিও অলিম্পিকে রুপোর মেডেল জিতেছেন। তারপর কেটেছে মাত্র পাঁচ দিন। আর এর মধ্যেই নাকি সেই অমূল্য পুরস্কারটিকে নিলামে তুললেন মারিয়া আন্দ্রেজেক! উদ্দেশ্য? একটি শিশুর প্রাণরক্ষার তাগিদ।
আরও শুনুন: Special Olympics: এবার ভারতের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর Sonu Sood
অলিম্পিকে যে জ্যাভলিন থ্রো বলে একটি ইভেন্ট রয়েছে, নীরজ চোপড়ার সোনা জয়ের পর থেকে সে কথা আর আমাদের কারও অজানা নেই। মারিয়াও সেই একই ইভেন্টের খেলোয়াড়। পোল্যান্ডের জ্যাভলিন থ্রোয়ার মারিয়ার বয়স এখন ২৫। আরও অল্প বয়সে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগের কবলে পড়েছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে তিনি জানতে পারেন, তিনি অস্টিওসারকোমা-র শিকার। অর্থাৎ তাঁর হাড়ের মধ্যে বাসা বেঁধেছে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। একজন খেলোয়াড়ের কাছে এমন অসুখ যে কী ভয়ংকর বার্তা নিয়ে আসে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সার্জারিও হয় তাঁর। সেরে ওঠেন ক্রমশ। কিন্তু এ সবকিছুর পরেও টোকিও অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেন মারিয়া। রিও অলিম্পিকে শেষ করেছিলেন চতুর্থ স্থানে। আর এবার ৬৪.৬১ মিটার জ্যাভলিন ছুড়ে দখল করে নেন দ্বিতীয় স্থান। বোঝাই যাচ্ছে, এই অলিম্পিক পদকটি তাঁর কাছে কতখানি স্পেশাল ছিল। অথচ একটি শিশুর প্রাণ বাঁচানোর জন্য সেই পদক ত্যাগ করতেও দ্বিধা করেননি মারিয়া।
আরও শুনুন: অলিম্পিকে হিটলারের সঙ্গে হ্যান্ডশেক, এক ছবিতেই প্রাণ বেঁচেছিল এই অ্যাথলিটের
১১ আগস্ট ফেসবুকে মারিয়া ঘোষণা করেন যে পদকটি নিলামে তুলছেন তিনি। সেখানেই এ কথাও জানান, প্রাপ্ত অর্থ ব্যয় করা হবে মিলোজেক মালিসা নামে একটি আট মাসের বাচ্চা ছেলের জন্য। আশ্চর্য কথা এই যে, বাচ্চাটি বা তার পরিবারকে মারিয়া চিনতেন না পর্যন্ত। নেট দুনিয়ার সূত্রেই তাঁর চোখে পড়ে বাচ্চাটির হার্ট সার্জারির জন্য অর্থের আবেদন। বাচ্চাটি এমন বিরল অসুখে আক্রান্ত ছিল যে পোল্যান্ডে তার সার্জারি হওয়া সম্ভব ছিল না। পোল্যান্ড থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত যাতায়াত এবং চিকিৎসা, সব মিলিয়ে প্রয়োজন ছিল ১.৫ মিলিয়ন পোলিশ মুদ্রা, অর্থাৎ প্রায় তিন লাখ ৮৫ হাজার ডলার। যার মাত্র অর্ধেক জোগাড় করা সম্ভব হয়েছিল বাচ্চাটির পরিবারের পক্ষে। আর সেই পরিবারের সাহায্যের আবেদন দেখা মাত্রই এগিয়ে আসেন প্রাক্তন ইউরোপিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন মারিয়া আন্দ্রেজেক।
সুখবর, ১৬ আগস্ট মারিয়া আরেকটি পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। উঠে এসেছে প্রয়োজনীয় অর্থ। সৌজন্যে পোল্যান্ডেরই একটি convenience store chain, Zabka। নিলামে সর্বোচ্চ বিড করেছিল তারাই। আর আরও আনন্দের কথা, Zabka ঘোষণা করেছে, মারিয়ার এহেন আবেদনে মুগ্ধ হয়েই তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু অলিম্পিক পদকটি নিয়ে নেওয়ার কোনও ইচ্ছা তাদের নেই। সুতরাং, পদকটি থেকে যাবে মারিয়ার কাছেই।
চারিদিকের হিংসা হানাহানির খবরের মাঝে এমন মানবিকতার ছবি দেখলে মন ভাল হয়ে যায়, তাই না?