অলিম্পিকে জোড়া পদক জিতে ইতিহাস গড়েছেন মনু ভাকের। তাঁর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত গোটা দেশ। এই আবহে পুরনো দিনের কথা মনে করলেন মনুর গুরু জসপাল। কীভাবে টোকিও অলিম্পিকে মনুর হার, রাতারাতি ভিলেন বানিয়েছিল তাঁকে, স্মৃতিচারণায় ফেরালেন সেইসব। কী বলছেন জসপাল? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
চলতি অলিম্পিকে দেশকে জোড়া পদক এনে দিয়েছেন মনু ভাকের। স্বাধীনতার পরে একমাত্র ভারতীয় হিসাবে একই অলিম্পিকে জোড়া পদক জিতেছেন হরিয়ানার শুটার। শিষ্যের সাফল্যে বেজায় খুশি গুরু জসপাল রানা। অথচ কয়কে মাস আগেও সামান্য একটা চাকরি জোটাতে হিমসিম খেতে হয়েছিল পদকজয়ী শুটারের কোচকে।
আরও শুনুন:
শুধু খেলা নয়, জীবনেও পিছু হটতে নারাজ! সাক্ষী-বিনেশদের পাশে দাঁড়াতে ভয় পাননি মনু ভাকের
গীতায় ভগবান বলছেন, কর্ম করে যাও ফলের আশা কর না। সেই কর্মের প্রতি ভরসা রেখেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন মনু। দেশের হয়ে জোড়া পদক জিতে সকলের নজর কেড়েছেন। কিন্তু একদিনে এই সাফল্য আসেনি। বারবার ব্যর্থ হয়েছেন। তার জন্য সহ্য করতে হয়েছে অপমান। শুধু তিনি নন, ছাত্রীর অসফলতায় রাতারাতি ভিলেন হতে হয়েছিল মনুর কোচ জসপাল রানাকেও। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সব অপমানের জবাব দিয়েছেন মনু। এই আবহে অন্ধকার দিনে কথা মনে করেছেন তাঁর কোচ জসপাল। বেশিদিন আগের কথা নয়। ২০২০ টোকিও অলিম্পিক। সেবারও মনুর উপরে আশা করেছিলেন আপামর ভারতবাসী। কিন্তু সেখান থেকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল প্রতিভাবান শুটারকে। একেবারে শেষ মুহূর্তে পিস্তল বিকল হয়ে যায় তাঁর। সারিয়ে নিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছিলেন বটে, কিন্তু একরাশ ব্যর্থতা নিয়ে শুটিং রেঞ্জ ছাড়তে হয় মনুকে। কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নিচ্ছেন দেশের প্রতিশ্রুতিময় শুটার, সেই ছবি দেখেছিল গোটা ভারত। আর তখন থেকেই ব্যর্থতার অন্ধকার গ্রাস করেছিল মনুর কোচ জসপাল রানাকে। প্রথমেই বন্ধ হয় বেতন। অনুরোধ করেও লাভ হয়নি। কিছুদিনের মধ্যে অন্যান্য ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানের তরফে যে ভাতা পেতেন, সেইসবও বন্ধ হয়ে যায়। টানা তিনবছর ন্যাশানাল রাইফেল অ্যাসোশিয়েশনের অফ ইন্ডিয়ার থেকে কোনওরকম আর্থিক সাহায্য পাননি বলেই জানিয়েছেন জসপাল। স্বাভাবিকভাবেই আর্থিক সমস্যা চরমে পৌঁছয়।
:আরও শুনুন:
অলিম্পিকের আসরে নারীর প্রবেশ নিষিদ্ধ! নিয়ম ভাঙার শাস্তি ছিল মৃত্যু
স্রেফ আর্থিক সমস্যা নয়, মানসিকভাবেও রীতিমতো হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন জসপাল। তাঁর কথায়, রাতারাতি সবার চোখে ভিলেন হয়ে যান তিনি। কোনও স্পোর্টস ইভেন্টে আমন্ত্রণ পেতেন না। সাক্ষাতকার নিতে চাইত না কেউ। ফলত নিজের অর্থ সমস্যার কথাও কাউকে জানাতে পারতেন না জসপাল। যদিও সেদিকে মাথা দেওয়ার সময় ছিল না তাঁর। হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজতেন। পাশাপাশি চলত মনুর কোচিং। সেদিকে কোনও কার্পন্য করেননি জসপাল। বেতন না পেলেও, নিজের সবটা উজাড় করে মনুর কোচিং চালিয়ে গিয়েছেন। গুরুর এই অবদান বৃথা হতে দেননি মনু। অলিম্পিকে জোড়া পদক জিতে সকলকে নিজের জাত চিনিয়েছেন। আর সেইসঙ্গে চওড়া হয়েছে জসপালের মুখের হাসি। চাকরি নেই, বেতন নেই, তাতে কি! প্রিয় ছাত্রী দেশের মান রেখেছে, এটাই তো চেয়েছিলেন তিনি এতদিন ধরে। একজন গুরুর আর কীই বা চাওয়ার থাকতে পারে!