মাঠে তাঁর উপস্থিতি মানেই ছড়িয়ে পড়ত অন্যরকম সৌন্দর্য। ধারাভাষ্য দেওয়া বা ক্রিকেটারদের প্রশ্ন করার ক্ষেত্রেও তিনি ছক-ভাঙা। টেলিভিশন ভারতীয় ক্রিকেটকে যত হাজির করেছে জনতার ড্রয়িং রুমে, তাঁর ঝকঝকে উপস্থিতি ততই বাড়িয়েছে বিনোদনের মাত্রা। তিনি মন্দিরা বেদী। তবে ক্রিকেটে তাঁর অবদান কিন্তু এইটুকু মাত্র নয়। মহিলা ক্রিকেটের উন্নতির জন্য তিনিও লড়াই করেছিলেন বিস্তর। এমনকী নিজের পারিশ্রমিকের বিনিময়েও চেয়েছিলেন স্পনসর আসুক মহিলা ক্রিকেটে। আসুন শুনে নিই সেই গল্প।
তিনি অভিনেত্রী। তবে তার থেকেও বোধহয় তিনি বেশি পরিচিত ক্রিকেট মাঠে তাঁর সৌন্দর্যময় এবং মার্জিত উপস্থিতির জন্য। মন্দিরা বেদী মানেই ভারতীয় ক্রিকেটের ঝলমলে অধ্যায়। টেলিভিশনের দৌলতে আমরা দেখেছি, পুরুষদের ক্রিকেটের সঙ্গেই মন্দিরার সম্পর্ক বেশি। তা হলেও, মহিলা ক্রিকেটের সঙ্গেও কিন্তু মন্দিরার নিবিড় সখ্য। স্বনির্ভর, স্বাধীনচেতা মন্দিরা আজীবন চাইতেন, উন্নতি হোক মহিলা ক্রিকেটের। পুরুষদের ক্রিকেট যেমন জনপ্রিয়, সেই আলো-উন্মাদনা এসে পড়ুক ভারতীয় মেয়েদের ক্রিকেটের অন্দরমহলেও। সে লড়াইয়ের পথটা অবশ্য সহজ ছিল না।
আরও শুনুন: বিরাট-স্মৃতিদের বেতনের বৈষম্য ঘুচল, শাহরুখ-দীপিকাদের বৈষম্য দূর হবে কবে?
এই হালে লিঙ্গসাম্যের পথে এক ধাপ এগিয়ে পুরুষ ও মহিলা ক্রিকেটারদের সমবেতনের কথা ঘোষণা করেছে ক্রিকেট বোর্ড। আগামী বছর থেকে মহিলাদের আইপিএল-ও শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু মন্দিরা যখন মেয়েদের জন্য লড়াইয়ে নেমেছিলেন, তখন এসব দূর কল্পনাতেও যেন ছিল না। একদিকে পুরুষদের ক্রিকেট নিয়ে দেশজোড়া উন্মাদনা, স্পনসরের ভিড়। অন্যদিকে প্রদীপের নীচে অন্ধকারের মতো রয়েছে মেয়েদের ক্রিকেট। সে আজ থেকে প্রায় দু-দশক আগের কথা। সেবার একটি হিরের অলংকার সংস্থার সঙ্গে বিজ্ঞাপনী কাজ করছিলেন মন্দিরা। সেসময় ভারতীয় মেয়েদেরও একটা সিরিজ খেলার কথা। কিন্তু স্পনসর নেই। স্পনসর ছাড়া সিরিজিটাই প্রায় মুলতুবি হয়ে জোগাড়। শুনেই মাঠে নামলেন মন্দিরা। যে সংস্থার তিনি ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর, তাদের প্রস্তাব দিলেন, যে, তাঁর নিজের পারিশ্রমিক বরং কমিয়ে দেওয়া হোক। কিংবা তাঁকে যে অর্থ দেওয়ার কথা তার বিনিময়ে যেন ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের স্পনসর হয় সংস্থাটি। সংস্থাটি যে কারণে মন্দিরাকে তাঁদের অলংকারের মুখ করেছিল, সেই একই কারণে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের স্পনসর হতেও আপত্তি জানায়নি। উইমেনস ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন সেক্রেটারি মন্দিরার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।
আরও শুনুন: ‘শুধু প্রশংসা! আর্থিক সাহায্য কোথায়?’ সরকারকে প্রশ্ন কমনওয়েলথে পদকজয়ীর
এখন ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা অনেকটাই ঊর্ধ্বমুখী। বিরাট-রোহিতদের মতোই দর্শক বুঁদ স্মৃতি-হরমনপ্রীতদের খেলাতেও। তবে ঝুলন-মিতালীদের লড়াইটা বেশ কঠিনই ছিল। আর সেই বন্ধুর পথে বন্ধু হয়েই সেদিন এসেছিলেন মন্দিরা।