ক্রিকেট খেলাটা পুরুষেরাই বোঝেন। মেয়েরা আবার তা নিয়ে প্রশ্ন করবেন কী! ক্রিকেট সঞ্চালনা করতে গিয়ে এমনই বৈষম্যের মুখে পড়েছিলেন মন্দিরা বেদি। সম্প্রতি সে কথাই জানিয়েছেন তিনি। শুনে নেওয়া যাক।
লিঙ্গসাম্য। সমানাধিকার। নারী ও পুরুষের সমান অবস্থান।
কথাগুলো শুনতে যতটা ভালো, কাজে তা অভ্যাস করা ঠিক ততটা সহজ নয়। তাই, বাস্তব জগতে কখনও প্রত্যক্ষে, কখনও পরোক্ষে টানা হতে থাকে লিঙ্গবৈষম্যের এক গাঢ় রেখা। এমনকি খেলার দুনিয়া, যা বেঁধে বেঁধে থাকার কথাই বলে, সেখানেও বিভাজন টানতে থাকে এই প্রখর বৈষম্য। তেমনই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন খোদ মন্দিরা বেদি।
মন্দিরা বেদি মানেই ভারতীয় ক্রিকেটের ঝলমলে অধ্যায়। টেলিভিশনের দৌলতে আমরা দেখেছি, পুরুষদের ক্রিকেটের সঙ্গেই মন্দিরার সম্পর্ক বেশি। অভিনেত্রী পরিচয়ের থেকেও বোধহয় তিনি বেশি পরিচিত ক্রিকেট মাঠে তাঁর সুন্দর এবং মার্জিত উপস্থিতির জন্য। কিন্তু সেই ঝলমলে উপস্থিতির পিছনে যে গল্পগুলো লুকিয়ে, তা কিন্তু অতটা সুন্দর নয়, সহজও নয়। ক্রিকেট সঞ্চালনা করতে এসে একটা বড় সময় জুড়ে অবহেলা আর অপমানই জুটেছিল মন্দিরার ভাগ্যে। না, তিনি যোগ্য নন বলে নয়। স্রেফ তিনি একজন নারী বলে।
হ্যাঁ, মন্দিরা জানিয়েছেন, তাঁর কথার জবাব দেওয়ারই প্রয়োজন বোধ করতেন না তাবড় তাবড় পুরুষ ক্রিকেটার বা ক্রিকেটবোদ্ধারা। তাঁদের মনোভাবটা ছিল যেন, মেয়েরা প্রশ্ন করবে কেন! আর তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ারই বা কী আছে! একজন নারী কোনও প্রতিষ্ঠিত পুরুষকে প্রশ্ন করছে, এ ঘটনাই যেন অন্যায়। অন্তত তাঁদের আচরণ দেখে তেমনটাই মনে হত মন্দিরার। বড় খেলার মরশুমে লাইভে খেলা নিয়ে কাঁটাছেঁড়া করতেন ক্রিকেট বিশ্লেষকেরা, আর সেখানেই সঞ্চালনার ভার পড়ত মন্দিরার। কিন্তু এঁরা তো প্যানেলে একজন মহিলাকে দেখতে অভ্যস্ত নন। ফলে মন্দিরাকেও তাঁরা মেনে নিতে পারতেন না। তিনি কোনও প্রশ্ন করলে তাঁর দিকে একবার তাকাতেন বড়জোর, তারপরই ক্যামেরার দিকে মুখ ফিরিয়ে কথা বলে যেতেন নিজেদের মতো করে। অথচ মন্দিরার সঙ্গে যে পুরুষ সঞ্চালক ছিলেন, তাঁর প্রশ্নে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েই উত্তর দিতেন সেই অতিথিরা।
প্রথম এক সপ্তাহ এই দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে দিয়েই যেতে হয়েছিল মন্দিরাকে। তিনি বলছেন, প্রতিদিন কেঁদে ফেলতেন তিনি, অসহায় বোধ করতেন। কিন্তু তাঁর উপরে ভরসা রেখেছিল তাঁর তৎকালীন সংস্থা। সপ্তাহখানেক পরে তারাই মন্দিরার শো-এর ধরনে খানিক বদল আনে, যাতে তিনি আরও কথা বলতে পারেন। নিছক শুকনো কথা চালাচালির বদলে মন্দিরা মজা করুন, ঠাট্টা করুন, এমনও বলা হয়। ফলে অন্য কারও জবাবের উপর তাঁর কথা বলা নির্ভর করছিল না আর। তাঁকে সহজে এড়িয়ে যাওয়াও যাচ্ছিল না। এইভাবেই পরিস্থিতি পালটাতে থাকে আস্তে আস্তে। এতটাই, যে, টাইগার পতৌদি স্টুডিওতে এসেই জিজ্ঞেস করেছিলেন, সবাই যাঁর কথা এত বলেন, সেই মন্দিরা বেদি তিনিই কি না।
ক্রিকেট দুনিয়া হালে এক পা এক পা করে বৈষম্যের বিরুদ্ধে মাঠে নামছে। ব্যাটসম্যান শব্দ বদলাচ্ছে ব্যাটারে, কিংবা পুরুষ ও মহিলা ক্রিকেটারদের সমবেতনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, পুরুষদের মতোই মহিলাদের আইপিএল-ও শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ক্রিকেট উন্মাদনার ঝকঝকে আলোর নিচে অন্ধকারও যে কম জমে ছিল না, সে কথাই আরও একবার মনে করিয়ে দিলেন মন্দিরা বেদি।