যে কোনও ফুটবল ম্যাচেরই নির্ধারিত সময় ৯০ মিনিট। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য যোগ হয় বাড়তি সময়, তবে ৯০ মিনিটের কম সময়ে ম্যাচ সম্পূর্ণ হয় না কখনোই। বিশেষত আন্তর্জাতিক ফুটবলের ক্ষেত্রে কোনোভাবেই এই নিয়মের বদল অসম্ভব। তবু বিশ্বকাপের এক ম্যাচে ৯০ মিনিট শেষ হওয়ার আগেই মাঠ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এক দেশ। কোন দেশের জাতীয় দল করেছিল এমন কাজ?
তখনও ম্যাচ শেষ হতে বাকি রয়েছে বেশ কিছুটা সময়। ফ্রান্সের কাছে দুই গোল খেয়ে পিছিয়ে রয়েছে কুয়েত। হঠাৎ গোটা দল নিয়ে মাঠ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন কুয়েত অধিনায়ক। সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাঠ ছেড়ে প্রায় বেরিয়েই যাচ্ছিলেন তাঁরা। শেষে রেফারির বাধা পেয়ে আবার মাঠে ফিরে আসতে হয় তাঁদের।
আরও শুনুন: বিছানার নিচে জুতোর বাক্সে লুকোনো ছিল বিশ্বকাপের ট্রফি, কিন্তু কেন?
হ্যাঁ, এমনই এক অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী ছিল ১৯৮২-র স্পেন বিশ্বকাপ। কিন্তু হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ওই দলের অধিনায়ক?
আসলে সে বছর কুয়েতের জাতীয় দল প্রথমবারের জন্য বিশ্বকাপের মূল পর্বে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। প্রথম ম্যাচে চেকোস্লোভাকিয়ার সঙ্গে ড্র করার পর ফ্রান্সের মুখোমুখি হয়েছিলেন কুয়েতের ফুটবলাররা। ফ্রান্সের জাতীয় দল তখন বেশ ভয় ধরানো। বিশ্বের তাবড় ফুটবলাররা ফ্রান্সের হয়ে খেলছেন। এহেন প্রতিপক্ষের সামনে খেলতে নামাই বেশ চিন্তার ব্যাপার ছিল কুয়েতের কাছে। তার ওপর সেদিনের ম্যাচে দর্শক আসনের বেশিরভাগটাই ভরে ছিল ফ্রান্স সমর্থকদের ভিড়ে। ফলত কুয়েতের কাছে মাঠের লড়াই আরও কঠিন হয়ে পড়ে। প্রথম থেকেই জোর আক্রমণ শুরু করে দেয় ফ্রান্স। যার দরুন ম্যাচের প্রথমার্ধেই ফ্রান্সের খাতায় যোগ হয় দুটি গোল। হাফটাইমের পর খেলা শুরু হলেই আরও একটি গোল করে ফ্রান্স। ম্যাচের এমন পরিস্থিতি দেখে কুয়েতের খেলোয়াড়রা ধরেই নিয়েছিলেন তাঁরা হেরে যাবেন। তবু হারার আগে হার মানেননি তাঁরা। অনেক চেষ্টা করে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে একটি গোলও করেন কুয়েতি খেলোয়াড়রা। এভাবেই যখন ৮০ মিনিট খেলা হয়ে গিয়েছে, তখন ফ্রান্সের তরফ থেকে আরও একবার কুয়েতের দিকে আক্রমণ ধেয়ে আসে। গোলও হয়। কিন্তু সেই গোলের পর রেফারির বদলে দর্শক আসনে থাকা কেউ খেলা শেষের সাংকেতিক বাঁশি বাজান। যা শুনতে পেয়ে কুয়েতি খেলোয়াড়রা মনে করেন খেলা শেষ। সুতরাং হারের বোঝা মাথায় নিয়ে দলের সকলকে মাঠ ছেড়ে বেরোনোর নির্দেশ দেন কুয়েত অধিনায়ক। তাঁর নির্দেশে মাঠের শেষ প্রান্তে পৌঁছেও যান দলের বাকি খেলোয়াড়রা। প্রথমে তাঁদের এহেন আচরণ দেখে কিছু বুঝতে পারেননি মাঠে থাকা রেফারি ও ফ্রান্সের ফুটবলারেরা। পরে কুয়েতের খেলোয়াড়রা মাঠ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন দেখে তাঁদের আটকে দেন রেফারি। তিনি অধিনায়ককে জানান খেলার এখনও বেশ কিছুটা সময় বাকি। এবং রেফারির নির্দেশে আবারও শুরু হয় খেলা।
আরও শুনুন: সিগন্যাল দেখেই এল ভাবনা, ফুটবলে চালু হল লাল আর হলুদ কার্ডের শাসন
৪-১-এর ব্যবধানে সেদিন ফ্রান্সের কাছে হেরেছিল কুয়েত। তবু কুয়েতের ফুটবল দলের এই অদ্ভুত আচরণের জেরে ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা হয়ে থেকে গিয়েছে ফ্রান্স-কুয়েতের এই ম্যাচ।