ডার্বি বাংলার ফুটবলের প্রাণ। অক্সিজেন। তবে, সেই ডার্বিতেই যদি একপেশে খেলা হয়, তাহলে সমর্থকদের ধৈর্যই বা কতদিন থাকবে! সাম্প্রতিক ডার্বিতেই লাল-হলুদের খেলায় হতাশ হয়েছেন তাঁদের দলের সমর্থকরাই। এতে আখেরে ক্ষতি হচ্ছে বাংলা ফুটবলের! এমনটাই মনে করেন মোহনবাগানের প্রাক্তন সচিব শ্রী সৃঞ্জয় বোস। ঠিক কী বললেন তিনি?
বাঙালির চির আবেগের ডার্বি। সমর্থকদের গলা ফাটানো চিৎকার। জেতার আনন্দে চোখে জল। বাজারে ইলিশ-চিংড়ির দাম বাড়া। সবমিলিয়ে ক্যালেন্ডারে লাল দাগ নেই, তবু উৎসবের পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারে ডার্বি। খেলায় হার-জিৎ থাকে। তবে খেলাটাই যদি একপেশে হয়ে যায় তাহলে কোথাও গিয়ে ম্যাচের উত্তেজনাটাই হয়তো ফিকে হয়ে পড়ে। সদ্য শেষ হওয়া ডার্বির পর এ প্রসঙ্গে বাংলা ফুটবলের ক্ষতির কথাই তুলে ধরলেন মোহনবাগানের প্রাক্তন সচিব শ্রী সৃঞ্জয় বোস।
বাংলার ফুটবল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সবার আগে সমর্থকদের আবেগকেই গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। বাঙালির ডার্বি ঘিরে আবেগ বহু বছরের পুরনো। আর সেখানে খেলা যেমন কেন্দ্রে রয়েছে তেমনই তাকে ঘিরে রয়েছে হাজার হাজার সমর্থক। যে দলেরই হোক, স্রেফ ডার্বি বলে ম্যাচের গুরুত্ব আলাদা হয় সমর্থকদের কাছে। তাঁরা সকলেই হয়তো জানেন খেলায় হার-জিত রয়েছে। কিন্তু তাই বলে নিজের পছন্দের দলকে হারতে দেখলে কার ভালো লাগে? প্রাক্তন মোহনবাগান সচিবের কথায়, “ডার্বি মানেই তো বাংলা ভাগ হয়ে যাওয়া দুটো দলে, সেই ম্যাচ একপেশে হয়ে গেলে সমস্যা।” সাফ জানালেন, ডার্বি বলেই গ্যালারিতে দুই দলের সমর্থকদের সমান সমান ভিড় হয়। এমনকি একটা দল যারা পয়েন্ট টেবিলে তলার দিকে রয়েছে তাদের খেলা দেখতেও মাঠে হাজির হন হাজার হাজার মানুষ। তাঁর কথায়, “ডার্বি-কে কখনই স্রেফ ৯০ মিনিটের ফুটবল ম্যাচ বলা যায় না। এরপর থেকে যায় একটা উন্মাদনা। থেকে যায় একটা সুস্থ প্রতিযোগিতা।” যা বাঙালির ফুটবল আবেগকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ডার্বি না থাকলে হয়তো এই উন্মাদনাটাই অনেকটা ফিকে হয়ে যেত। তাঁর কথায়, “ডার্বি যদি কখনও শেষ হয়ে যায় তাহলে ফুটবলটাই শেষ হয়ে যাবে। মৃত্যু ঘটবে বাঙালির আবেগের।” এরপরই অবশ্য ডার্বি নিয়ে এই আশঙ্কার প্রসঙ্গে ফিরেছেন তিনি। তাঁর কথাতেও উঠে এসেছে শেষ দশবছরের মোহন-ইস্ট ডার্বির পরিসংখ্যান।
সাম্প্রতিক সময়ের কথা যদি ধরা হয় সেখানে মোহন বাগানের ধারে কাছে ঘেঁষতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। বিগত ১০ বছরের হিসাব বলছে, মোহনবাগানের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইয়ে ইস্টবেঙ্গল জিতেছে ৭ বার। আর সেখানে মোহনবাগান সমর্থকদের মুখে হাসি ফুটেছে ১৬ বার। শুধু ডার্বি নয়, এমনিতেও লাগাতার হারের মুখ দেখছে লাল হলুদ শিবির। যাতে আখেরে ক্ষতি হচ্ছে বাংলার ফুটবলের। শেষ ডার্বিতে ৩-১ গোলে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়েছে মোহনবাগান। পরিসঙ্খান যেটা বলেনা সেটা হল, প্রায় পুর ম্যাচেই আধিপত্য ছিল মহনবাগানের, ধারে ভারে খেলায় অনেক জজন পিছিয়ে ছিল ইস্ট বেঙ্গল। সাভাবিক ভাবেই সেটা সমর্থকদের কাছে খুবি হতাশা জনক । এমনটাই যদি চলতে থাকে তাহলে আবেগের তাগিদেও ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা ভবিষ্যতে কতটা মাঠে ভিড় জমাবেন সেই নিয়ে সন্দেহ আছে! আর এমনটা হলে ক্ষতি কিন্তু সেই বাংলা ফুটবলের। একপেশে ম্যাচ হলে গ্যালারি ভরবে না সেইভাবে। আর ফুটবলে দর্শকই যদি না থাকে তাহলে খেলোয়াড়রাই বা খেলবে কার জন্য?