চলতি বিশ্বকাপে ম্যাথিউজের টাইমড আউটের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় ক্রিকেট দুনিয়া। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার দেখা গেল এই নিয়মের প্রয়োগ। কিন্তু এই একটিমাত্র নয়, এমন আরও আজব নিয়ম রয়েছে ক্রিকেট আইনে, যা শুনলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। আসুন, শুনে নেওয়া যাক ক্রিকেটের সেইসব অজানা কথাই।
একটিও বল না খেলে, বলা ভালো ব্যাট করার সুযোগ পাওয়ার আগেই আউট ব্যাটার! এ আবার কোনদেশি নিয়ম, বুঝেই উঠতে পারছেন না ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশ। হ্যাঁ, চলতি বিশ্বকাপে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথেউজ-এর টাইমড আউট হওয়া নিয়ে কার্যত তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু অভিজ্ঞ আম্পায়াররা বলছেন, যা হয়েছে তা আইন মেনেই। আইসিসি-র নিয়ম বলছে, একজন ব্যাটার ক্রিজ ছাড়ার ৩ মিনিটের মধ্যে নতুন ব্যাটার অথবা নন-স্ট্রাইকারকে এসে বল খেলার জন্যে তৈরি থাকতে হয়, যদি না আগে থেকে নতুন ব্যাটার আম্পায়ারের কাছে ‘টাইম’-এর আবেদন করে থাকেন। এই নিয়ম না মানা হলে, সংশ্লিষ্ট ব্যাটারকে ‘টাইম্ড আউট’ দেওয়ার অধিকার রয়েছে আম্পায়ারের। আগে এই নিয়মের প্রয়োগ কখনও দেখা যায়নি বলেই আসলে চমকে গিয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
আরও শুনুন: পাকিস্তান সেই পাকিস্তানেই! বিরাটকে স্বার্থপর বলে তুলোধোনা প্রাক্তন পাক অধিনায়কের
কিন্তু কথা হচ্ছে, আমি আপনি জানি বা না-ই জানি, এমন একাধিক নিয়ম রয়েছে এই খেলাটির দুনিয়ায়। যেসব নিয়ম শুনলে রীতিমতো চমক লাগবে। যেমন ধরুন, কেউ আপিল না করলে কোনও ব্যাটারকে আউট ঘোষণা করা যায় না। আবার, কোনও ব্যাটারকে আউট বলে ঘোষণা করেছেন আম্পায়ার, সেক্ষেত্রেও ফিল্ডিং টিমের ক্যাপ্টেন চাইলে তাঁকে মাঠে ফিরিয়ে আনতে পারেন। যেমন ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচে আউটের আপিল ফিরিয়ে নিয়ে ইয়ান বেলকে ফের খেলার সুযোগ দিয়েছিলেন ধোনি।
আবার ব্যাটার যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বলে দুবার ব্যাট ছোঁয়ান, সঙ্গে সঙ্গেই আউট হবেন তিনি। অন্যদিকে আবার স্টাম্পে বল লাগলেও, বেল না পড়লে কিন্তু ব্যাটার আউট নন। ২০১৯-এ ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া টেস্টের চতুর্থ ম্যাচে হাওয়ার তোড়েই বারবার বেল পড়ে যাচ্ছিল, তাই সেই ম্যাচটি বেল ছাড়াই খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আম্পায়ারেরা। সেখানে কী করণীয়? সোজা ব্যাপার, ব্যাটার আউট হলেন কি না, সে সিদ্ধান্ত পুরোটাই দাঁড়িয়ে ছিল আম্পায়ারদের উপরেই।
আরও শুনুন: শুধু ধর্ম ধর্ম! তোমার ক্রিকেট নেই, ভারতবর্ষ!
এদিকে উইকেটকিপার ছাড়া কোনও ফিল্ডার গ্লাভস পরলেই শাস্তি। কোনও ফিল্ডার বল না ধরেই এমন ভান করলেন যেন বল ধরেই ফেলেছেন, উইকেট খোয়ানোর ভয়ে ব্যাটারও রান নিতে পারলেন না, সেখানেও শাস্তির মুখে পড়বে ফিল্ডিং টিম। শুধু তাই নয়, ফিল্ডার ইচ্ছে করে বলকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠালেও একই শাস্তি। এই তিনটি ক্ষেত্রেই ৫ রান যোগ হবে বিপক্ষের ঘরে। তবে কোনও ফিল্ডার সেধে বিপক্ষকে কেন ওভার বাউন্ডারি উপহার দেবেন, সে কথা বোধহয় ভাবেননি আইন-প্রণেতারা। আবার শুধু নির্ধারিত বাউন্ডারিই নয়, মাঠে যদি অন্য কোনও বাধা থাকে, কোনও পশু, পাখি, এমনকি গাছ, তাকেও বাউন্ডারি বলে ধরাই নিয়ম ক্রিকেটবুকে।
এই কারণেই বোধহয়, ক্রিকেট পিচে প্রত্যেক দিন ঘাস কাটার নিয়ম। রোলার নয়, বলছি গ্রাস-মোয়ার চালানোর কথাই। এমনকি যদি একটিও ঘাস নাও থাকে, তবুও ম্যাচের প্রত্যেক দিনে মোয়ার চালাতেই হবে। নিয়ম বলে কথা!
আসলে ব্রিটিশদের যে নিয়মানুবর্তিতার কথা সকলেরই জানা, সেই নিয়মের ছাপই দেখা যায় এই খেলার সর্বাঙ্গে। সে নিয়ম শুনে মজাই লাগুক কি বিস্ময়ই হোক, সে নিয়ম মানতে আপত্তি বা সম্মতি যাই থাকুক, এইসব নিয়ম ছাড়া কিন্তু ক্রিকেট খেলা হয় না।