সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন! গুকেশের জয়ে এমনই শিরোনামে ভরে উঠেছিল চারদিক। কিন্তু সত্যিই কি তাই? এমন দাবিও উঠছে , গুকেশ আদৌ সর্বকনিষ্ঠ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নন। সেই জায়গায় কার নাম উঠে আসছে? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
মাত্র ১৮ বছর বয়সেই বিশ্বসেরা! জয়ের আনন্দে কেঁদেই ফেলেন ভারতের তরুণ দাবাড়ু ডি গুকেশ। সেই আবেগঘন মুহূর্তের ভিডিও ভাইরাল হয় সোশাল মাধ্যমে। চারিদিকে শুরু হয় তাঁকে নিয়ে চর্চা। কিন্তু এই চর্চা যে শুধুমাত্র গুকেশের গুণগান গাইছে তা নয়, বরং তিনিই কনিষ্ঠতম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কি না, সেই নিয়ে প্রশ্নও তুলছে!
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। নেটদুনিয়ায় অনেকেই এমন দাবি করছেন, যে গুকেশ আদৌ সর্বকনিষ্ঠ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন নয়। বরং সেই দাবিদার অন্য কেউ। চর্চায় যার নাম উঠে আসছে তিনি ইউক্রেনের বাসিন্দা। নাম রাসলান পোনোমারিওভ। কিন্তু কেন তাঁর সঙ্গে গুকেশের তুলনা করা হচ্ছে?
তাহলে খুলেই বলা যাক। আসলে, খেলার দুনিয়ায় এমন অনেক কিছুই হয় যা চিরকাল সবার মনে থাকে না। যে সময় হচ্ছে তখন তার জনপ্রিয়তা প্রবল হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা হারিয়ে যায়। দাবার ইতিহাসেও এমনই এক ভুলে যেতে বয়া অধ্যায় হল ১৯৯৩-২০০৬ এই সময়টা। এই কবছর দাবার বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের দুটি আলাদা ইভেন্ট হত। যার নেপথ্যে ছিলেন গ্যারি কাসপারভ। এককালে তিনিই ছিলেন সেরার সেরা দাবাড়ু। লাগাতার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন গ্যারি। তবে তাঁর সঙ্গে তৎকালীন বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজক সংস্থার কিছু সমস্যা দেখা দেয়। আর তাতেই গ্যারি নিজ উদ্যোগে শুরু করেন অন্য এক প্রতিযোগিতা। এর নিয়ম বেশ খানিকটা আলাদা ছিল, তবে গুরুত্বর দিক দিয়ে কিছু কমতি ছিল না। বলাই বাহুল্য, যে ইভেন্টের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিশ্বসেরার নাম জড়িয়ে, সেই প্রতিযোগিতাকে গুরুত্ব দিতেই হয়। তবে কেউ কেউ এই প্রতিযোগিতাকে তেমন আমল দিতেন না। আর সেই আমল না দেওয়ার প্রবণতা আরও স্পষ্ট হয়, যখন ২০০৬ সালে আবারও দুটি ইভেন্ট এক হয়ে একটিমাত্র বিশ্বব্যাপী দাবাড়ু নির্বাচনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। বর্তমানে ফিদে আয়োজিত সেই প্রতিযোগিতায় জয় লাভই যে কোনও দাবাড়ুর স্বপ্ন থাকে। গুকেশ নিজেও এতেই জিতেছেন। কিন্তু ওই যে মাঝের কয়েক বছর আরও একটা বিশ্বসেরা দাবাড়ুর প্রতিযোগিতা চলত, সেখানে একবার জিতেছিলেন রাসলান। তাও আবার মাত্র ১৪ বছর বয়সে। সেই হিসাবে তাঁকেই সর্বকনিষ্ঠ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বলা উচিৎ।
কিন্তু না, রাসলান যে প্রতিযোগিতায় জিতেছিলেন তার কোনও অস্তিত্বই আর নেই। সুতরাং তাঁকে সর্বকনিষ্ঠ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বলা বিতর্কিত। তাহলে কি সব বিতর্কের অবসান এখানেই, মানে গুকেশকে যেভাবে কনিষ্ঠতম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বলা হচ্ছে সেটাই সঠিক? আসলেই তাই। বর্তমানে যে প্রতিযোগিতা গোটা বিশ্বে পরিচিত সেখানে গুকেশের চেয়ে কম বয়সী আর কেউ জেতেননি। ফলত তাঁকেই সর্বকনিষ্ঠ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বলা উচিৎ, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।