বিশ্ব ক্রিকেট জুড়ে চর্চায় এখন একটাই নাম। মহম্মদ শামি। স্রেফ একটা ম্যাচ নয়, চলতি বিশ্বকাপের প্রায় সবকটা ম্যাচেই ম্যাজিক দেখিয়েছেন তিনি। অবশ্যই অধ্যাবসায় এবং সঠিক ট্রেনিং-এর জেরেই এমনটা হয়েছে। কিন্তু জানেন কি শামির ট্রেনিং অন্যান্য অনেক খেলোয়াড়ের থেকেই বেশ কিছুটা আলাদা। ঠিক কীভাবে? আসুন শুনে নিই।
বোলার হোক বা ব্যাটার, খেলার মাঠে ফিটনেসটাই শেষ কথা। তাই ম্যাচ থাকুক বা নাই থাকুক দলের সব খেলোয়াড়কেই নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস রাখতে হয়। ভারতীয় খেলোয়াড়রাও তার ব্যতিক্রম নন। বিরাট-রোহিত-শুভমন, সকলেই নিয়ম করে জিমে যান। তবে এঁদের অনেকেই এককালে জিমের পথ মাড়াতেন না। বলা ভালো সেই সামর্থ্য তাদের ছিল না। একেবারে গ্রাম্য পরিবেশে ‘দেশি’ ট্রেনিং-এ বড় হওয়া সেইসব খেলোয়াড়রাই বর্তমানে কিংবদন্তি হয়ে উঠেছেন। আর সেই তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে মহম্মদ শামির নাম।
আরও শুনুন: সেমিতে ৭ উইকেট শামির, ভবিষ্যদ্বাণী করেন আগেই… ফাইনাল নিয়ে কী বললেন সেই ব্যক্তি?
উইকেট পিছু এক প্লেট বিরিয়ানির চুক্তিতে একদিন ক্রিকেটজীবন শুরু করেছিলেন শামি। আলিনগরের প্রত্যন্ত এক গ্রামে বড় হওয়া। যেখানে সব বাড়িতে বিদ্যুৎ পর্যন্ত নেই, সেখানে জিমে যাওয়া বিলাসিতা মাত্র। তবু শামি স্বপ্ন দেখতেন ক্রিকেটার হওয়ার। পথপ্রদর্শক হিসেবে পেয়েছিলেন বদরুদ্দিন স্যারকে। জিম নেই তো কি হয়েছে, আরও অনেক উপায় আছে নিজেকে গড়ে তোলার। ছোট থেকে শামিকে এমনটাই শিখিয়েছিলেন বদরুদ্দিন। জিমের বদলে তাঁকে ছুটতে যেতে হত খোলা মাঠে। বাড়ির সামনে প্রায় ৪০০ মিটার লম্বা এক ফাঁকা জমিই হয়ে উঠেছিল শামির ট্রেনিং গ্রাউন্ড। সেখানে প্রতিদিন অন্তত ১০ থেকে ২০ রাউন্ড ছুটতেই হত। তাও আবার খালি পায়ে। অনেকেই হয়তো ভাবছেন, গ্রামে বড় হওয়া ছেলেদের কাছে এ খুবই সাধারণ ব্যাপার। হয়তো শামিকেও একসময় এমনই ‘সাধারণ’ তকমাতেই আটকে রাখা যেত, কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এমনটা বলা বা ভাবা কঠিন। শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বের ক্রিকেট মহলকে অবাক করেছে তাঁর আগুনে বোলিং। যে কেউ অনায়াসে ভেবে নিতে পারেন, এই বোলিং কোনও অত্যাধুনিক ট্রেনিং-এর ফসল। কিন্তু তা যে একেবারেই নয়, সে কথা মনে করিয়ে দেয় শামির এই ছোটবেলার জীবন। খালি পায়ে দৌড় শেষ হলে, চলত সাঁতার কাটার পর্ব। গ্রামের পুকুরেই চুটিয়ে সাঁতার কাটতেন সতীর্থদের সঙ্গে। সেইসঙ্গে বোলিং প্রাকটিসও চলত। যদিও সবটাই বদরুদ্দিন স্যারের কাছে। যদিও এত ট্রেনিং বা কসরতের সঙ্গে খাওয়া দাওয়ার বিশেষ সম্পর্কব ছিল না। রোজকার সাধারণ খাবারই পেট ভরে খেতেন শামি। এমনকি তাঁর পছন্দের খাবার খেতেও তেমন বাধা নিতেন না বদরু স্যর। শুধু পরিমাণটা সীমিত রাখতে হত এই যা।
আরও শুনুন: কোহলি-শামি একসঙ্গেই লেখেন দেশের রূপকথা, বিশ্বকাপ ফুরোলে দেশবাসী মনে রাখবে তো?
এইভাবেই জীবনের প্রথম ১৬টা বছর কাটিয়ে কলকাতার ট্রেন ধরেছিলেন শামি। দু-চোখে তখন একটাই স্বপ্ন, ক্রিকেটার হবেন। তারপর জীবন নদীতে বয়েছে অনেক জল। শামি সাক্ষী থেকেছেন হাজারও ওঠাপড়ার। প্রথম দিকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই। তারপর জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েও, বারবার ধর্ম নিয়ে কটূক্তি শুনেছেন শামি। উইকেট নিলে যেমন তাঁর নামে জয়ধ্বনি শোনা গিয়েছে, তেমনই একটা ক্যাচ মিস করলে তাঁর নামে ভেসে এসেছে হাজারও বিদ্রুপ। তবু বরাবর চুপ থেকেছেন শামি। উত্তর দিয়েছে তাঁর হাতের বল। যার জোরে চলতি বিশ্বকাপে ক্যাপ্টেন রোহিতের ভরসার কাঁধ হয়ে উঠেছেন মহম্মদ শামি। দেশের শ্বাসপ্রশ্বাসেও এখন শুধুই মহম্মদ শামি।