পরনে শাড়ি। হাতে টেনিস র্যাকেট। এভাবেই অলিম্পিকে হাজির হয়েছিলেন ভারতীয় মহিলা। শুধু তাই নয়, শাড়ি পরেই অলিম্পিকে টেনিস খেলেন তিনি। প্রথম ভারতীয় টেনিস প্লেয়ার হিসেবে তিনিই অলিম্পিকে অংশ নেন। কার কথা বলছি? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
একসময় এ দেশের মহিলারা মূলত শাড়িই পরতেন। বর্তমানে সে নিয়ম বা চল অনেকটাই বদলেছে। তবে শাড়ির প্রতি ভালোবাসা এতটুকু কমেনি। কিন্তু শাড়ি পরে মাঠে নেমে খেলার কথা শুনেছেন? তাও আবার টেনিসের মতো খেলা! ইতিহাস সাক্ষী আছে এমন ঘটনারও। অলিম্পিক্সে শাড়ি পরেই টেনিস খেলতে হাজির হয়েছিল এক ভারতীয় মহিলা।
কথা বলছি মেহেরবাই টাটা সম্পর্কে। মহীশূরের বিখ্যাত ভাবা পরিবারে জন্ম। বিবাহসূত্রে জামসেদজি টাটার পরিবারের সদস্য হন মেহেরবাই। বাবা ছিলেন পশ্চিমি সংস্কৃতির পৃষ্টপোষক। তাই শখ করে মেয়ের নাম রেখেছিলেন ‘মেরি’। এদিকে মেয়ের এই নাম এক্কেবারে পছন্দ ছিল না। বরাবরই ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি তাঁর ভালোবাসা। তাই একটি বড় হতেই মেরি নাম বদলে হন মেহরি। সেখান থেকে মেহেরবাই। শুধু ইংরাজি নয়, ফারসিতেও রীতিমতো দখল ছিল মেহেরবাই-এর। একইসঙ্গে ছিলেন দুর্দান্ত পিয়ানিস্ট। একসময় তাঁর পিয়ানো বাজানোর অনুষ্ঠান টিকিট কেটে দেখতে আসত অনেকে। তবে মেহেরবাই-এর আসল ভালোবাসা ছিল টেনিস। তা অবশ্য স্বামী দোরাবজি টাটার জন্য। জামসেদজি টাটার জ্যেষ্ঠপুত্রের বরাবরই এই খেলার প্রতি রীতিমতো ভালোবাসা ছিল। তাঁকে সঙ্গ দিতেই স্ত্রী মেহেরবাই টেনিস খেলা শুরু করেন। প্রথমে ঘরোয়াভাবে বন্ধুবৃত্তে খেলা চলত। ধীরে ধীরে বাইরের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে শুরু করেন। সেকালে মেয়দের এইভাবে বাইরে গিয়ে খেলার চল ছিল না, কিন্তু মেহেরবাই-এর টেনিস খেলা চালিয়ে যাওয়ায় সবসময় সহযোগিতা করতেন স্বামী দোরাবজি টাটা। পয়সার কমতি ছিল না। তাই বিদেশেও পাড়ি দিতেন টেনিস টুর্নামেন্টে অংশ নিতে। খেলেছেন উইম্বলডনেও। এভাবেই একদিন সুযোগ আসে অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার। ১৯২৪ এর প্যারিস অলিম্পিক্সে ভারতীয় মহিলা টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে অংশ নেন মেহেরবাই।
এখানেই আরও একটা চমক রয়েছে। স্রেফ অলিম্পিক্সে খেলতে যাওয়া প্রথম ভারতীয় মহিলা টেনিস প্লেয়ারই নয়, মেহেরবাইকে মনে করার আরও এক বিশেষ কারণ রয়েছে। ছোট থেকেই দেশীয় সংস্কৃতির প্রতি তাঁর যে ভালোবাসা ছিল, অলিম্পিক্সে তা গোটা বিশ্বকে বুঝিয়েছিলেন মেহেরবাই। শাড়ি পরেই নেমেছিলেন টেনিস কোর্টে। একবার নয়, সবকটি ম্যাচ শাড়ি পরেই খেলেছিলেন তিনি। যা অবাক করেছিল গোটা বিশ্বকে। সেকালে মহিলাদের মধ্যে শাড়ির চলই সবথেকে বেশি ছিল। কিন্তু শাড়ি পরে টেনিস খেলার কথা ভাবতেই পারতেন না কেউ। মেহেরবাই তা সম্ভব করে দেখান। দেশের প্রতি তাঁর অবদান এখানেই শেষ নয়। শেষ জীবনে মেয়েদের জন্য অনেক কাজ করেছেন। নারীশিক্ষার প্রসার থেকে মহিলা অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়েছেন দীর্ঘদিন। মেহেরবাই-এর মৃত্যুর পর স্ত্রীর স্মৃতিতে টাটা ক্যানসার হাসপাতাল তৈরি করেন দোরাবজি। যেখানে আজও হাজার হাজার মুমুর্ষু রোগী চিকিৎসা পেয়ে আসছেন। সুতরাং স্রেফ অলিম্পিক্সে অংস নিয়ে দেশের নাম উজ্জ্বল করাই নয়, তাঁকে মনে রাখার একাধিক কারণ রেখে গিয়েছেন মেহেরবাই টাটা।