বাটলার শুধু নিজের দলকে জিতিয়েই ক্ষান্ত হননি। ক্রিকেটের পাঠশালায় নতুন এক অধ্যায়ই খুলে দিয়েছেন। ভবিষ্যৎ সেখান থেকে লড়াইয়ের পাঠ নিতে পারে। নিজের জীবনের সেরা আইপিএল ইনিংসটি খেলে ক্রিকেটকেও যেন নতুন মাত্রা দিয়েছেন বাটলার।
নিজের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ। পরিস্থিতি যেমনই হোক না কেন, বিশ্বাস হারাতে নেই। বিশ্বাসের জোর থাকলে লড়াইয়ের ময়দানে টিকে থাকা যায়। আর তাহলেই খেলা বদলাতে থাকে। জয়ের মাইলস্টোনও তখন আর দূরে থাকে না। অতএব, কাজ একটাই। বিশ্বাস বজায় রেখে টিকে থাকো আর লড়ে যাও। ব্যাট হাতে নাইটদের স্বপ্নভঙ্গ করতে করতে এই কথাই ভাবছিলেন জোস বাটলার। আর সেই বিশ্বাসের মন্ত্র তাঁকে দিয়েছিলেন, আর কেউ নন স্বয়ং মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং বিরাট কোহলি।
আরও শুনুন: ফিনিক্স পাখির মতো ফিরে আসাটা অভ্যেস করে ফেলেছেন দীনেশ কার্তিক
নাহ্, যদি ভাবা হয় যে, রাজস্থানের ব্যাটিং-এর সময় ধোনি-কোহলি গিয়ে বাটলারের কানে কানে এ কথা বলে এসেছেন, তাহলে বিলকুল ভুল ভাবা হবে। আসলে ক্রিকেট তো নিজেই একটা বিশ্ব। সে বিশ্বে কখন যে কোথায় পাঠশালা বসে, আর কে গুরুমশাই হন, তার ঠিক না। আপাত ভাবে দেখলে দেশে-দেশে, দলে-দলে ভাগ হয়ে খেলা হয় বটে। তবে খেলার পৃথিবীতে শেষমেশ এইসব প্রতিদ্বন্দ্বিতা মুছে যায়। সেখানে যা জেগে থাকে, তাকেই বলে বিশুদ্ধ ক্রিকেট। আর সেই ক্রিকেটীয় বিজ্ঞান বলে, অসম্ভবকে বদলে ফেলা যায় সম্ভাবনায়। ঘাড়ের উপর ২২৪ রান ছোঁয়ার লক্ষ্য নিয়ে যখন ব্যাট করছিলেন বাটলার, ভাবছিলেন সেই ক্রিকেটীয়-উপনিষদ। যা মন্ত্রণা দেয় অসম্ভবের গুমর ভেঙে তাকে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়ার। তখনই নতুন কিছুর জন্ম হয়। যেমন নতুন এক ক্রিকেটীয় মুহূর্তের জন্ম দিয়েছেন বাটলার নিজে।
আরও শুনুন: ‘মান্না-পিকে-চুনির ছবি বিরাট সম্বল’ কেন? সিলেবাসে সেই ইতিহাস জানা জরুরি
নারিন ঝড়ে যখন মরুশহরের দলের আশা-ভরসা সব উড়ে যেতে বসেছিল, তখন কে জানত যে, সামনে অপেক্ষা করে আছে বাটলার-বিস্ফোরণ! বাটলার কি নিজেও ভেবেছিলেন? না, ইনিংসের গোড়ার দিকে বরং ভাবছিলেন, যে ছন্দ তিনি চাইছেন, তা সেভাবে পাচ্ছেন না। তাহলে কী করণীয়? মনে ভেসে ওঠে ক্রিকেটের স্মরণীয় মুহূর্তের সব ছবি। ভাবতে থাকেন, ধোনি-কোহলির মতো তাবড় ব্যাটাররা এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে কী করতেন? উত্তরও পেয়ে যান সহজেই। সেটি হল, নিজের উপর বিশ্বাস রেখে হাল না ছাড়া। যাঁরা ইতিহাস তৈরি করেন, তাঁরা এরকম পরিস্থিতিরই সামনে পড়ে যান। তবে পালিয়ে যান না। বরং চোয়াল চাপা জেদে সেই পরিস্থিতিকেই পরাস্ত করেন। তা যতই বাউন্সার ছুড়ুক না কেন, মন্ত্র একটাই যে, উইকেট হারালে চলবে না। লড়াইয়ে অর্থাৎ ক্রিজে টিকে থাকতে হবে। রানের মেশিনটা সচল রাখতে হবে। ধারাবাহিক দক্ষতায় যদি এই কাজটি করে যাওয়া যায়, তাহলেই একসময় খেলার রং বদলে যাবে। এই একই বিষয়ে কুমার সাঙ্গাকারার সঙ্গেও কথা হয়েছিল বাটলারের। সারমর্ম সেই একটাই, লড়াইয়ে টিকে থাকতে হবে। কোনও ভাবেই নিজের উপর বিশ্বাস হারানো যাবে না। অতএব বাটলারও ঠিক করে নেন যে, তিনি নিজের খেলার উপর বিশ্বাস হারাবেন না। লড়াই চালিয়ে যাবেন। আর ক্রিকেট যদি সত্যিই আকস্মিকের খেলা হয়, তাহলে কিছুক্ষণ আগেও যা অসম্ভব মনে হচ্ছিল, তা ঠিক সম্ভব হয়ে উঠবে। এই জেদের ফলাফল যে কী হতে পারে তার সাক্ষী ছিল ইডেন, সাক্ষী থাকবে আগামীর ইতিহাস।
১০৭ রানের ইনিংসে বাটলার শুধু নিজের দলকে জিতিয়েই ক্ষান্ত হননি। ক্রিকেটের পাঠশালায় নতুন এক অধ্যায়ই খুলে দিয়েছেন। ভবিষ্যৎ সেখান থেকে লড়াইয়ের পাঠ নিতে পারে। নিজের জীবনের সেরা আইপিএল ইনিংসটি খেলে ক্রিকেটকেও যেন নতুন মাত্রা দিয়েছেন বাটলার। আর সেই সাফল্যগাথায় থেকে গিয়েছেন ধোনি-কোহলিও। ক্রিকেটের মাধুর্য বোধহয় এখানেই। একজনের লড়াইয়ের আগুন ছড়িয়ে পড়তে পারে অন্য জনের সংগ্রামে। একজনের গড়ে যাওয়া মাইলস্টোন থেকেই আর একজন শুরু করতে পারেন নতুন পথচলা। দলে থেকেও যে দল অতিক্রম করা যায়, তা এভাবেই শিখিয়ে দিতে পারে ক্রিকেট। যেমন শিখিয়ে দিলেন বাটলার, ধোনি-কোহলির থেকে বিস্ফোরণের মন্ত্র পেয়ে। সাধে কি আর ক্রিকেট আজও চিররহস্যময়!