ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি নাকি নতুন ইতিহাস- এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই গোয়ার দিকে চোখ ছিল গোটা দেশের ফুটবলপ্রেমীদের। ক্ল্যাশ অফ টাইটানে শেষমেশ বাজিমাত সবুজ-মেরুনেরই। রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল। নাটকীয় পট-পরিবর্তন। শেষমেশ প্রীতম-পেত্রাতোসদের সামনে নতজানুই হল সুনীল-রয় কৃষ্ণর বেঙ্গালুরু।
প্রত্যাশার পারদ ছিল তুঙ্গে। সমর্থকদের মধ্যে উন্মাদনা ছিল বাঁধভাঙা। ফিরেছে সেই আট বছর আগের রাত। সেবার আই লিগের ফাইনালে মোহনবাগানের ভাততসেরা হওয়ার সামনে প্রাচীর তুলে দাঁড়িয়েছিল বেঙ্গালুরু। এবার প্রেক্ষাপট সামান্য আলাদা। ফাইনাল আইএসএল-এর, তবে এবারও সবুজ-মেরুনের মুখোমুখি সেই বেঙ্গালুরু। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি নাকি নতুন ইতিহাস- এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই গোয়ার দিকে চোখ ছিল গোটা দেশের ফুটবলপ্রেমীদের। ক্ল্যাশ অফ টাইটানে শেষমেশ বাজিমাত সবুজ-মেরুনেরই। রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল। নাটকীয় পট-পরিবর্তন। শেষমেশ প্রীতম-পেত্রাতোসদের সামনে নতজানুই হল সুনীল-রয় কৃষ্ণর বেঙ্গালুরু।
একদিকে সুনীল ছেত্রী, রয় কৃষ্ণরা। অন্যদিকে প্রীতম কোটাল, পেত্রাতোসরা। সেরার শিরোপা আদায়ের মঞ্চে যুদ্ধ যে সেয়ানে সেয়ানে হবে তা প্রায় নিশ্চিতই ছিল। ফাইনালে সুনীলের প্রথম থেকে খেলা নিয়ে গোড়ায় একটু ধন্দই ছিল। তবে ম্যাচের একেবারে তিন মিনিটের মাথাতেই মাঠে নামতে হয় তাঁকে। আর তিনি মাঠে নামার মুহূর্তে বেঙ্গালুরু সমর্থকদের সিংহগর্জনই বুঝিয়ে দিচ্ছিল এই ম্যাচের উত্তাপ ঠিক কতখানি। ম্যাচের দশ মিনিটেই মোহনবাগান দুর্গে আক্রমণ শানায় বেঙ্গালুরু। তবে ডিফেন্সের জঙ্গলে সে আক্রমণ হারিয়ে যায়। ১১ মিনিটের মাথাতেই পালটা আক্রমণে গিয়ে কর্নার আদায় করে নেয় মোহনবাগান। আর সেই কর্নার থেকেই রয় কৃষ্ণর ভুলে পেনাল্টি আদায় করে নেয় সবুজ-মেরুন শিবির। নিখুঁত লক্ষে বেঙ্গালুরুর জালে বল জড়িয়ে দেন পেত্রাতোস। ফলে ম্যাচের ১৪ মিনিটেই খেলার রাশ চলে যায় সবুজ-মেরুনের হাতে। ২৪ মিনিটে গতির দ্রুততায় সবুজ-মেরুন ডিফেন্সকে খানিক ব্যতিব্যস্ত করেন সুনীল ছেত্রী। জাভির দুরন্ত একটি শট সেভ করে সবুজ-মেরুন সমর্থকদের নিশ্চিন্ত করেন বিশাল। ঠিক তারপরেই হেড করে মোহনবাগানের গোলে বল রাখতে ব্যর্থ হন সন্দেশ ঝিঙ্গন। পরপর সুযোগ নষ্ট করে ক্রমাগত চাপে পড়ে যায় বেঙ্গালুরু। পালটা আক্রমণে বেঙ্গালুরু ডিফেন্সে তখন ঝড় তোলে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। বাঁ-দিকে বারবার নজর কাড়েন তরুণ আশিক। চল্লিশ মিনিটে জাভি হার্নান্ডেজের দূরপাল্লার শট আবারও দারুণ দক্ষতায় রুখে দেন বিশাল। ঘাত-প্রতিঘাতে ম্যাচ গড়ায়, বেশ উত্তপ্ত পরিস্থিতিও তৈরি হয়। আসে নাটকীয় পট-পরিবর্তন। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে পেনাল্টি আদায় করে নেয় বেঙ্গালুরু। শট নিতে আসেন বহু যুদ্ধের নায়ক সুনীল ছেত্রী। গড়ানে শটে মোহনবাগানের জালে বল জড়িয়ে দিতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি তিনি। সুনীলের শট বুঝতেই পারেননি বিশাল। প্রথমার্ধের শেষে খেলার ফলাফল ১-১।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সহজ সুযোগ মিস করেন বাগানের লিস্টন কোলাসো। চাপ ক্রমশ বাড়াতে থাকে বেঙ্গালুরু। ৬০ মিনিটে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন পেত্রাতোস। লিস্টনের জোরালো শট-ও আটকে যায় বেঙ্গালুরুর গোলরক্ষকের হাতে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে মোহনবাহান দুর্গে বারংবারই আক্রমণ শানাতে থাকেন সুনীলরা। ফল মেলে হাতেনাতে। ৭৮ মিনিটে বাগানের জালে বল জড়িয়ে দেন মোহনবাগানেরই প্রাক্তনী রয় কৃষ্ণ। ৮৩ মিনিটে ফের পট-পরিবর্তন। এবার পেনাল্টি আদায় করে নেয় মোহনবাগান। আবার দাঁড়ান পেত্রাতোস এবং আবার গোল। ফাইনালের সমস্ত নাটকীয়তাই ছিল এদিনের ম্যাচে। মুহূর্তে মুহূর্তে ম্যাচের রং বদলায়। নির্ধারিত সময়ে খেলার ফলাফল ২-২। অতিরিক্ত সময়ে দুই দল চেষ্টা চালালেও ফলপ্রসূ কিছু করে উঠতে পারেনি। অবধারিত ভাবে খেলা গড়ায় পেনাল্টিতে। সেখানেও জমা ছিল নাটকীয় মুহূর্ত। তবে শেষ মুহূর্তে পরিত্রাতা হয়ে ওঠেন সেই ফ্লাইং কাইট বিশাল। দুরন্ত সেভে বেঙ্গালুরুর স্বপ্নভঙ্গ করেন তিনি। শেষমেশ পেনাল্টিতে ৪-৩ ফলাফলে ভারতসেরার খেতাব জিতল মোহনবাগানই।