স্বপ্ন পূরণের জন্য মাত্র ১১ বছর বয়সে মুম্বই পাড়ি দিয়েছিলেন। দিনের পর দিন আধপেটা খেয়ে রাত কাটিয়েছেন। সেই ছেলেই এখন ক্রিকেট দুনিয়ার বিস্ময়। তাঁর দুরন্ত ব্যাটিং দেখে মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছেন তাবড় সব ক্রিকেটাররা। আসুন শুনে নিই, সেই তরুণ ব্যাটার যশস্বী জয়সওয়ালের কথা।
স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখতে কে না ভালবাসে? যে বা যারা নিজের স্বপ্নপূরণের জন্য নিজের সর্বস্ব দিয়ে লড়ে যায় ,তাদের স্বপ্ন একদিন নিজে থেকেই তাদের কাছে এসে ধরা দেবে। এ-কথা কিন্তু আমি বলছি না , বলেছেন ‘ওম শান্তি ওম’-এর শাহরুখ খান। আর কথাটা যে কতটা সত্যি সেটা শাহরুখের দলের বিরুদ্ধেই আইপিএল ইতিহাসের দ্রুততম ৫০ করে আবারও বোঝালেন যশস্বী জয়সওয়াল।
আরও শুনুন: কুস্তিগিরদের হেনস্তা-ধরনাতেও ক্রিকেটারদের মুখে কুলুপ! বিরাটদের নিয়ে বিরাট প্রশ্ন ভিনেশের
তবে এই স্বপ্নপূরণের জন্য কিছু শর্ত তো নিশ্চয়ই আছে। স্বপ্নকে ধাওয়া করে যেতে হবে। অর্জুনের লক্ষ্যভদের মতোই নিজের লক্ষে অটল থাকতে হবে। সময় অনেক পরীক্ষা নেবে, ধৈর্যের পরীক্ষা, মানসিক শক্তির পরীক্ষা- হেরে গেলে চলবে না। নিজের উপর বিশ্বাস হারালে চলবে না। কারণ ওটাই যে সব! এই সব কটা শর্ত পালন করে, যশস্বী কিন্তু সেই অনমনীয় মানসিকতার পক্ষেই জোর সওয়াল করছেন। তাই তো কোনও একদিন ফুচকা বিক্রি করা থেকে আজকের বিধ্বংসী জয়সওয়ালের গল্প ঘুরছে ৮ থেকে ৮০ সকলের মুখে মুখে। বৃহস্পতিবার কলকাতার বিরুদ্ধে খেলতে নেমে মাত্র ১৩ বলে আইপিএলে ইতিহাসের দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি করে ফেললেন বছর একুশের এই টগবগে তরুণ। জয়ের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ছিল মাত্র ১৪৯ রানের। তিনি একাই করলেন ৯৮ রান, মাত্ৰ ৪৭ বলে। ৬৭ হাজারের গোটা ইডেন সাক্ষী থাকল এই জয়সওয়াল-ঝড়ের।
এই মুহূর্তে যশস্বী সবথেকে বেশি রান করা ব্যাটারদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। তাঁর সংগ্রহ ৫৭৫ রান। প্রথমে রয়েছেন ব্যাঙ্গালোরের অধিনায়ক ডুপ্লেসি, ৫৭৬ রান করে। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে, এই মুহূর্তে ভারতীয় ক্রিকেট যে সব তরুণ ক্রিকেটারদের দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখছে, যশস্বী তাঁদের মধ্যে উজ্জ্বলতম। সমস্ত লাইমলাইট এখন তারই উপরে। কিন্তু জানেন কি, কেমন ছিল এই ছেলেটির স্বপ্নপূরণের পিছনের কঠিন লড়াইটা?
আকাশ চোপড়ার সঙ্গে পুরনো এক সাক্ষাৎকারে এখন বেশ ভাইরাল যেখানে যশস্বী তাঁর লড়াইয়ের কথা বলছেন তাঁর সংগ্রামের কথা বলছেন। জয়সওয়াল ডেবিউ করেন ২০১৮ সালে, ১৭ বছর বয়সে। খুবই সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা যশস্বীকে লড়াইয়ে টিকে থাকতে কখনও ফুচকা আর ফল বিক্রি করতে হয়েছে, তো কখনও খালি পেটেই ঘুমোতে হয়েছে দিনের পর দিন। নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য মাত্র ১১ বছর বয়সে ঘর ছেড়ে মুম্বই পাড়ি দেন উত্তরপ্রদেশের ভাদোহি গ্রামের এই ছেলেটি। প্রশিক্ষণের বছরগুলিতে তাঁবুই ছিল তাঁর মাথা গোঁজার একমাত্র আশ্রয়। গরমের দিনে যখন তাঁবুতে আর থাকা যেত না, খোলা আকাশের নিচেই শুয়ে পড়তেন তিনি। যাতে ভাল ঘুম হয় আর পরের দিন প্র্যাক্টিসে তরতাজা থাকা যায়। ভাবতে পারেন? এইসব নিয়ে আমাদের কত অভিযোগ থাকে। কিন্তু যশস্বী সে সব গায়ে মাখেননি। জীবনে ওঠাপড়া তাঁকে বিক্ষত করেছে, কিন্তু আমল দেননি। কেননা তাঁর লক্ষ্য ছিল অর্জুনের মতোই, কাহির চোখে- ক্রিকেটে। কোনও পিছুটান নেই, কারোর কোনও চাপিয়ে দেওয়া নেই, কোনও শর্ত নেই; শুধু আছে স্বপ্ন, আছে নির্মম, নিরন্তর, নিখাদ পরিশ্রম। শুনলে অবাক হবেন একটা ডায়েরির দোকানে মনোযোগ দিয়ে কাজ না-করায় এই ছেলেটিকেই একদিন ঘাড় ধাক্কা খেতে হয়েছিল।
আরও শুনুন: আইপিএল-এর ক্যামেরা শুধু মহিলাদেরই খোঁজে! এবার বিরক্ত খোদ মহিলারাই
২০২০-এর অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। নিজের জাত চেনালেন যশস্বী। যদিও তখন খুব কম লোকই জানতেন কতটা কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়েছে এই ছেলেটিকে। তাঁর জীবনের মোড় ঘুরতে শুরু করে যখন যশস্বী কোচ জ্বালা সিং-এর নজরে আসে। ওই বিশ্বকাপে ৪০০ রান করে ছেলেটি, তার রানের ঝুলিতে ছিল ১টি সেঞ্চুরি ও ৪টি হাফ সেঞ্চুরি। টুর্নামেন্টে সেরার শিরোপাও ওঠে যশস্বীর মাথায়। আর তারপরই রাজস্থান রয়্যালস নিলামে ২.৪ কোটি টাকায় দলে সামিল করে যশস্বীকে। বাকিটা তো সবারই জানা।
পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই- এ কথা তো আমাদের সকলেরই জানা। আমরা প্রত্যেকে চেষ্টাও করি যে যার মতো পরিশ্রম করতে। কিন্তু তবুও কখনও সখনও সব আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী না হলে , খুব সহজেই হাল ছেড়ে দিই। যশস্বী যেন এলেন হাল না-ছাড় তরুণের স্বপ্ন হয়েই।