ভারত-পাকিস্তানে ম্যাচে হিন্দি কমেট্রি নিয়ে সমালোচনার ঝড় নেটদুনিয়ায়। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে খোলাখুলি কটাক্ষ করেছেন। তাতে বেজায় চটেছেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার হরভজন সিং। সমালোচনার ভাষা তাঁর কাছে ‘ভাষার’ সমালোচনা হিসেবে ধরা দিয়েছে, কড়া ভাষায় পালটা জবাব দিয়েছেন। ব্যাপারটা ঠিক কী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
কমেন্ট্রি ছাড়া ক্রিকেট, যেন আলু ছাড়া বিরিয়ানি। কিন্তু সেই আলু যদি সুসিদ্ধ না হয়, তাহলে বিরিয়ানি খাওয়ার মজাটাই নষ্ট হবে। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের শেষে এমনই অভিযোগে উত্তাল নেটদুনিয়া। ভারত জিতেছে, বিরাট সেঞ্চুরি করেছেন, সব হয়েছে, স্রেফ মনের মতো হয়নি সেদিনের ম্যাচের কমেন্ট্রি। সবটা নয় অবশ্যি, অভিযোগ স্রেফ হিন্দি ধারাভাষ্যের প্রতি। অনেকেই বিষয়টা নিয়ে খোলাখুলি কটাক্ষ করেছেন। কেউ কেউ, বিশ্বের অন্যতম ‘জঘন্য’ বিষয় হিসেবেও দাগিয়ে দিয়েছেন এদিনের ম্যাচের হিন্দি ধারাভাষ্যকে। আর তাতেই বেজায় চটেছেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার হরভজন সিং। সমালোচনার ভাষা তাঁর কাছে ভাষার সমালোচনা হয়েই ধরা দিয়েছে। তাই বিষয়টাকে বেশ গুরুতর ভেবে নিয়েছেন পাজি। পালটা জবাবে, সমালোচকদের ‘ইংরেজ’ বলে কটাক্ষ করেছেন। তাতে অবশ্য হাসির পাত্র হয়েছেন তিনিই। সমালোচকরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, এই নিন্দা নির্দিষ্ট কোনও ভাষার নয়, বরং সেই ভাষায় করা ধারাভাষ্যের।
খুব বেশিদিনের ঘটনা নয়, ২০১৯-এর বিশ্বকাপ। গোটা দেশ তৃতীয় কাপজয়ের আশায় বুক বেঁধেছে। একটা রানআউট। মুহূর্তে বদলে গেল সবকিছু। চোখের কোনে টলটলে জল নিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন ধোনি। এইসময় একটু দূরের কমেন্ট্রি বক্সে বসে এককালের ভারত অধিনায়ক সৌরভ বলে উঠলেন, উইকেট আর ধোনির ব্যাটের মধ্যবর্তী ওই ইঞ্চিকয়েক দূরত্বই আসলে ভারত আর ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নের ফারাক। সেদিন ভারত হারলেও, কমেন্ট্রি বক্সে বসে সৌরভের বলা সেই কথা নিয়ে চর্চা হয়েছিল। সমালোচনা নয় মোটেও, বরং ‘তারিফ পে তারিফ’। উদাহরণ এই একটা নয়। বরং তালিকা বেশ দীর্ঘ। হর্ষ ভোগলে থেকে চারু শর্মা, কপিল দেব থেকে আকাশ চোপড়া, সকলেই কমেন্ট্রি বক্সে নজর কেড়েছেন। প্রশংসিত হয়েছেন। খেলা দেখার আনন্দ যে তাঁরাই কয়েকগুণ বাড়িয়েছেন তা বলাই যায়। আসলে, কমেন্ট্রি মানে যে স্রেফ কী হচ্ছে তার বিবরণ দেওয়া তা নয়। বরং খেলার মাঠে একসময় দাপিয়ে বেড়ানো সৌরভ গাঙ্গুলি কিংবা কপিল দেব, স্বচ্ছন্দে বলে চলেন এরপর কী হতে চলেছে। পরে ওভারে কে বল করতে পারেন, সেক্ষেত্রে ফিল্ডিং সাজানো হবে কীভাবে, এইসবই আগাম বলে যেতেন তাঁরা। আশ্চর্যের বিষয়, অনেক সময় দেখা যেত ঠিক তেমনটাই হচ্ছে। তাহলে কমেন্ট্রি শুনে মাঠের মধ্যে বদল হল? একেবারেই নয়, বরং নিজেদের অভিজ্ঞতার জোরে এঁরাই আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করতে পেরেছেন। এবং তা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যেতেই, আনন্দে হাততালি দিয়েছেন দর্শক।
কিন্তু এই কমেন্ট্রি বক্স থেকেই যদি এমন কিছু ভেসে আসে, যা শুনে আর যাই হোক কমেন্ট্রি মনে হচ্ছে না, তাহলে তো আপত্তি উঠতে বাধ্য। প্রাক্তন জনপ্রিয় ভারতীয় ব্যাটার যদি বলেন, ‘প্রতিপক্ষকে মহিলাদের মতো নাচাতাম’, তাহলে সেই কথা কানে বাজবেই। দর্শকের মন সেই কথার দিকে যাবে। তাঁরা থামবেন। কমেন্ট্রির ভাষা বদলানোর কথাও ভাববেন। আর এই কাজ যদি বারেবারে করতে হয়, কিংবা করতে বাধ্য হতে হয়, তাহলে ক্ষোভ হওয়াটাও স্বাভাবিক। এদিনের ভারত-পাক ম্যাচেও এমন কিছুই ঘটেছে বইকি। হিন্দি ধারাভাষ্যের দায়িত্বে থাকা হরভজন সিং, নভজ্যোত সিং সিধু-রা এমন কিছু বলেছেন যা একেবারেই পছন্দ হয়নি অনেকের। হয়তো হরভজনদের কাছে ওই ধরনের ধারাভাষ্য একেবারেই স্বাভাবিক। কিন্তু তার মানে এমনটা কখনই হতে পারে না, যে সকলেরই সেটা স্বাভাবিক মনে হবে, কিংবা পছন্দ হবে। আর সেই নিয়ে কেউ সমালোচনা করলেও আপত্তি থাকা চলে না। যদিও, হরভজন যেভাবে প্রতিবাদ করেছেন, তাতে এই প্রসঙ্গ নেই। বরং বিষয়টাকে হিন্দি ভাষার সমালোচনা হিসেবে দেখেছেন তিনি। তাই ভাষাকে অপমানের জবাব দিয়েছেন, কড়া ভাষায়। কিন্তু এমনটা করে যে নিজেই উপহাসের পাত্র হবেন, তা বুঝলে হয়তো অন্যকিছু পদক্ষেপ করতেন হরভজন। বিষয়টা ভাষার সমালোচনা নয়, বরং ভাষ্যের সমালোচোনা, তা বাংলা-ইংরাজি কিংবা অন্য কোনও ভাষায় করা হলেও, আপত্তি উঠত, হিন্দি বলে সাত খুন মাফ নয়।