খেলার মাঝে মাঠে ঢুকে কোহলিকে প্রণাম। গ্রেপ্তার হলেও রাতারাতি হিরো হলেন বিরাট ফ্যান! চর্চায় উঠে এল তাঁর ভালোবাসার কথা। অনেকের কাছেই কোহলি ঈশ্বর ছিলেন, এই ঘটনায় সেই স্থান আরও উঁচুতে উঠল। তবে একই কাণ্ড রিয়ান পারেগের সঙ্গে হলেই যত সমস্যা। নেটদুনিয়ার সাম্প্রতিক চর্চা অন্তত তেমনটাই বলছে।
আইপিএলের প্রথম ম্যাচ। কেকেআর বনাম আরসিবি। মাঠে রয়েছেন তারকা কোহলি। খেলার মাঝেই নিরাপত্তা ভেঙে তাঁর দিকে ছুটে এলেন এক ভক্ত। পা ছুঁয়ে প্রণাম করলেন। উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল গোটা গ্যালারি। ঘটনার জন্য যুবক গ্রেফতার হলেন ঠিকই তবে রাতারাতি হিরোর তকমা পেলেন। চর্চার উঠে এল একটাই তত্ব, কোহলি এবং তাঁর ফ্যানের ভালোবাসা।
একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আইপিএলের অন্য একটি ম্যাচে। এবারও একদিকে কেকেআর। তবে বিপক্ষে রাজস্থান রয়্যালস। খেলার মাঝে মাঠে ঢুকে রাজস্থানের ক্যাপ্টেন রিয়ান পরাগের পা ছুঁয়ে প্রণাম করলেন এক ভক্ত। গ্যালারিতে সেই চেনা উচ্ছ্বাস। বিষয়টা দুঃসাহসিক তা একবাক্যে মেনেছেন সবাই। তাই অবাক হয়েছেন দর্শকরা। সোশাল মিডিয়াও এই নিয়ে চর্চায় মেতেছে। কিন্তু এবার আর ফ্যানের ভালোবাসা নয়, বরং অন্যরকম এক তত্ত্ব খাড়া করা হয়েছে।
বলা হচ্ছে, বিষয়টা আসলে ‘পিআর স্ট্যান্ট’। অর্থাৎ ইচ্ছা করেই এমনটা করানো হয়েছে। কেউ কেউ এমন দাবিও তুলছেন যে আলাদা করে টাকা দিয়ে এই কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। অভিযোগের তীর রিয়ানের বিরুদ্ধেই। তিনিই নাকি টাকা দিয়ে ওই ফ্যানকে এমন নির্দেশ দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গ ধরেই মিমের বন্যা। আদতে কটাক্ষ। পরোক্ষ ভাবে বোঝাতে চাওয়া, এই ধরনের ঘটনা স্রেফ বিরাটের মতো খেলোয়াড়ের সঙ্গেই হতে পারে। কেবলমাত্র তাহলেই বিষয়টা সঠিক এবং প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য হবে, নাহলে না। আর সেখানেই উঠে আসছে কিছু প্রশ্ন। প্রথমত, নেটদুনিয়ার এই ইঙ্গিত কি আদৌ যুক্তিসঙ্গত? রিয়ানের পা ছুঁয়ে কেউ প্রণাম করলে, বিরাটের ঈশ্বরত্ব হয়তো কমে যায় না। কিংবা তাঁকে অপমান করাও হয় না। এক্ষেত্রেও একইভাবে ভক্তের ভালোবাসাই আলোচ্য হতে পারত। কিন্তু না, রিয়ান তো তারকা নন! তাঁর সম্পর্কে এই ধরনের মন্তব্য করলে কতজনই বা রে রে করে তেড়ে আসবে!
অথচ একটু ভেবে দেখলেই বিষয়টার সঠিক তত্ত্ব খুঁজে পাওয়া যেত। এদিনের খেলা ছিল, গুয়াহাটিতে। রিয়ানের বাড়িও সেখানেই। তাই তাঁকে ঘিরে গুয়াহাটির উন্মাদনা থাকাটাই স্বাভাবিক। এদিকে, রিয়ানই অসমের প্রথম ক্রিকেটার যিনি আইপিএল ফ্রাঞ্চাইজির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সে নিয়েও আলাদা উত্তেজনা কাজ করছে গুয়াহাটির। ঘরের ছেলের এমন সাফল্য নিয়ে এমনিতেই তাঁরা উচ্ছ্বসিত, তাই তাঁকে ঘরের মাঠে পেয়ে হয়তো নিজেকে সামলে রাখতে পারেননি জনৈক ফ্যান। ছুটে গিয়ে প্রণাম করেছেন।
এইভাবে ভাবলে বিষয়টা নিয়ে চলতে থাকা যাবতীয় চর্চা আর যাইহোক, বিতর্কের মোড় নিত না। তবে এইসব সরিয়ে রাখলেও অন্য একটা প্রশ্ন এড়ানো যাচ্ছে না। তা হল, নিরাপত্তা। যেভাবে আইপিএলের ম্যাচ চলাকালীন নিরাপত্তার বেড়া টপকে মাঠে ঢুকে পড়ছেন ফ্যানরা, তাতে মাঠের নিরাপত্তা বড়সর প্রশ্নের মুখে পড়ছে বইকী। যে আইপিএলে ঘিরে এত চাকচিক্য, এত আলো, সেখানে নিরাপত্তায় এমন গলদ! দুটি ক্ষেত্রে নাহয় ফ্যানরাই মাঠে ঢুকেছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য নাহয় খারাপ কিছু ছিল না, কিন্তু আগামীতে একইভাবে কোনও সন্ত্রাসবাদী যে মাঠে ঢুকে পড়বেন না, তা বলা কঠিন। সেই নিয়েও জোরদার আলোচনা হবে ঠিকই, কিন্তু ততদিনে হয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে। চাইলেই যে ক্ষতি অনায়াসে আটকানো যেত, তা আর আটকানো যাবে না।