তালিবান শাসনে মহিলাদের হওয়া সওয়াল করা আখেরে বিপজ্জনক হয়ে যেতে পারে। সেই সত্যি জেনেও ক্ষীণ আশা করে চলেছেন দু’জনে। যদি ক্রিকেট একদিন ফিরিয়ে দিতে পারে আফগান-ভূমে মহিলাদের অধিকার!
খেলা শুধু খেলামাত্র নয়। জীবনের ঘাম-রক্তের গল্প বলে ক্রীড়া। আর তাই ক্রীড়া আর সাহিত্য যেন কোনও এক বিন্দুতে মিলেমিশেও যায়। ক্রিকেটও এর ব্যতিক্রম নয়। একটি জাতির পুনরুত্থান যেমন একটি ক্রিকেট ম্যাচের হাত ধরে হতে পারে। তেমনই, এই ক্রিকেটের দিকে তাকিয়েই নারীমুক্তির স্বপ্ন দেখতে পারেন কেউ কেউ। অন্তত এখন সেই স্বপ্নই দেখছেন আফগানিস্তানের দুই মহিলা ক্রিকেটার।
ফিরোজা আমিরি ও বেনাফসা হাশিমি। না, মাতৃভূমে তাঁদের থাকা হয়নি। তালিবানের রক্তচক্ষু যখন পুনরায় আফগানিস্তান জুড়ে, তখন স্বদেশ ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে তাঁদের। বর্তমানে তাঁদের বাস অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে ক্লাব ক্রিকেট খেলছেন। আর দূরে বসে স্বপ্ন দেখছেন, একদিন দেশের হয়ে তাঁরা খেলতে পারবেন। তালিবানের হাতে যাওয়ার পর থেকেই আফগান নারীদের অবস্থা হয়েছে শোচনীয়। প্রায় সমস্ত অধিকারই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে তাঁদের। এমনকী নারীদের সামনে একচিলতে জানলা রাখতেও নারাজ তালিবান। সেখানে ক্রিকেট তো বহু দূরের স্বপ্ন। আক্ষরিক অর্থে দূরে বসে সেই স্বপ্ন দেখছেন এই দুই মহিলা ক্রিকেটার।
:আরও শুনুন:
অস্বস্তির নাম করুণ নায়ার! ঘরোয়া ক্রিকেট কি বোর্ডের কাছেই গলার কাঁটা?
আফগান পুরুষদের দল ক্রিকেট খেলছে। তবে, প্রতিবন্ধকতার মুখেও পড়তে হচ্ছে। আইসিসি টুর্নামেন্ট বাদ দিলে, অস্ট্রেলিয়ার মতোই দল তাঁদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেটে রাজি হয়নি। রাজনীতি কবজা করেছে ক্রিকেটকে। সেখানেই আক্ষেপ তাঁদের। তাঁদের আশা, পুরুষদের দল আরও খেলার সুযোগ পাক। সাফল্য আসুক। এই সামগ্রিক সাফল্য হয়তো একদিন নারীদের খেলার রাস্তাও খুলে দেবে। আর একবার যদি তা সম্ভব হয়, তাহলে হয়তো ভাগ্য বদলাবে আফগান নারীদের। আবার একটু একটু করে পড়াশোনার অধিকার ফিরে পাবেন তাঁরা। প্রবাসে বসে আপাতত এটুকুই আশা তাঁদের। আর সেই আশার আলো তাঁরা দেখছেন ক্রিকেটের সূত্রেই।
পুরুষের দলের কাছেও তাঁদের একই আরজি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁরা আরও সফল হয়ে উঠুক। আর গলা তুলুক মেয়েদের জন্য। দুই মহিলা ক্রিকেটার বলছেন, পুরুষ ক্রিকেটাররা এই মুহূর্তে দেশে বিখ্যাত। তাঁদের কথা শোনার জায়গা আছে। ফলত তাঁরা যদি একবার মহিলাদের সমর্থন করতে শুরু করেন, তাঁদের হয়ে কথা বলতে শুরু করেন, তাহলেই মহিলারা আবার খেলার সুযোগ পাবেন। আফগানিস্তান আর আফগান মহিলাদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠুক পুরুষদের ক্রিকেট দল। এমনটাই তাঁদের আশা।
তবে, সে কাজ যে সহজ নয়, তা তাঁরা জানেন। এমনকী বিখ্যাত ক্রিকেটার হলেও তালিবান শাসনে মহিলাদের হওয়া সওয়াল করা আখেরে বিপজ্জনক হয়ে যেতে পারে। সেই সত্যি জেনেও ক্ষীণ আশা করে চলেছেন দু’জনে। যদি ক্রিকেট একদিন ফিরিয়ে দিতে পারে আফগান-ভূমে মহিলাদের অধিকার! নিজেদের সবথেকে ভালোবাসার ক্রীড়াকে অবলম্বন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখা ছাড়া তাঁরা আর কীই-বা করতে পারেন!