এভাবেও ফিরে আসা যায়। সদ্য প্রমাণ করেছেন বছর ৪৩-র বোপান্না। প্রবীণতম খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ডস্ল্যাম জিতেই স্ত্রী সুপ্রিয়াকে বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন। প্রকাশ্যে এনেছেন তাঁদের পুরনো কথোপকথনের কিছু অংশ। সেই কথোপকথন আর হার না মানা খেলোয়াড়ের লড়াই নিয়ে লিখলেন সুলয়া সিংহ।
কথায় বলে প্রত্যেক সফল পুরুষের নেপথ্যে একজন নারীর অবদান থাকে। অমিতাভ বচ্চন থেকে বিরাট কোহলি, সাফল্যের শিখরে পৌঁছেও একথা অস্বীকার করেন না এই বিশিষ্ট জনেরা। সেই তালিকায় যে আরও একটি নাম উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতোই বিচরণ করছিল, তা চোখে পড়ল অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালের পর। তিনি রোহন বোপন্নার স্ত্রী সুপ্রিয়া আনাইয়া বোপন্না। চল্লিশের গণ্ডি পেরিয়েও যে সেরার সেরা হওয়া যায়, সেই অনুপ্রেরণা তো বোপন্নাকে তিনিই দিয়েছিলেন।
বিশ্বের তিন নম্বর ডাবলস জুটি হয়ে অজি তারকা ম্যাথিউ এবডেনকে সঙ্গে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের কোর্টে নেমেছিলেন বোপন্না। মেলবোর্ন পার্কে সেমিফাইনালে পৌঁছেই ইতিহাসের পাতায় ঢুকে পড়েন তিনি। সবচেয়ে বেশি বয়সে টেনিসে পুরুষদের ডাবলসে এক নম্বর হওয়ার রেকর্ড ভরে ফেলেন ঝুলিতে। তার পরই পদ্মশ্রী সম্মানের জন্য ঘোষিত হয় তাঁর নাম। আর শনিবার বোপন্নার জীবনের রেড লেটার ডে। দীর্ঘ ২০ বছরের কেরিয়ারের সায়াহ্নে যখন ব়্যাকেটখানি তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথে হাঁটতে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই ইচ্ছেশক্তির উপর ভর করে নিজেই ঘটালেন মিরাকল। ৪৩ বছর বয়সে প্রথমবার অস্ট্রেলীয় ওপেন খেতাব জিতলেন। পূর্ণ হল তাঁর দীর্ঘ পরিশ্রমের বৃত্ত। তবে এ কৃতিত্ব যতখানি তাঁর, ততখানিই কোর্টের বাইরে থেকে প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিয়ে চলা সেই মানুষটিরও। সুপ্রিয়া ওই কথাগুলো না বললে যে বোপন্নার জীবনে এই দিনটা স্বপ্ন হয়েই রয়ে যেত!
ঠিক কী বলেছিলেন সুপ্রিয়া? বোপন্না গ্র্যান্ড স্লাম জিততেই সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে ভারতীয় তারকার পুরনো একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও। যেখানে স্ত্রীয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তিনি। বোপন্নার বলা কথাগুলো এরকম,
“একদিন আমার স্ত্রী দারুণ একটা কথা বলেছিল। তুমি যখন তোমার সীমা-পরিসীমাকে সুযোগে বদলে দিতে পারবে, তখন সব বদলে যাবে। সত্যিই তো আমরা সবসময় বলি ২৫ বছরে এটা হবেই, কিংবা ৩০ বছর ওটা হবেই। ৪০ বছরে এমনটাই হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। সেটা খেলা হোক কিংবা জীবনের ক্ষেত্রে। বিয়ে করা, সন্তানের জন্ম দেওয়া, যা-ই হোক না কেন, একটা সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু সুযোগকে কাজে লাগাতে পারলে কোনও সীমা-পরিসীমা থাকে না।”
স্ত্রীর এই কথাগুলোই মন্ত্রের মতো কাজ করেছে তেতাল্লিশের বোপন্নার জীবনে। তাই তো রড লেভার এরিনায় তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন, বয়স সংখ্যামাত্র।
বোপন্না এও জানান, লাগাতার হারতে হারতে আত্মবিশ্বাস হারাচ্ছিল তাঁর। একটা সময় টানা ৫ মাস জয়ের মুখ দেখেননি তিনি। গাছের সামনে দাঁড়িয়ে বারবার শাপ-শাপান্ত করলে, সেও হতাশায় নুইয়ে পড়ে। আর বোপন্না তো রক্ত মাংসের মানুষ! নিজেকে বোঝাতে বোঝাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। এমনকী ভিডিও বার্তায় স্ত্রীকে জানিয়েও দিয়েছিলেন অবসরের সিদ্ধান্তের কথা। কিন্তু ওই যে, স্বামীকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দেওয়ার কাজটা যে তখনও বাকি ছিল সুপ্রিয়ার। দিনরাত ভুলে স্বামীকে উৎসাহ দিয়েছেন। ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস জুগিয়েছেন। আর তাতেই জোর পান বোপন্না। পার্টনার বদলে, পরিশ্রমের ধরন বদলে ফেলেন। মেয়ের কাছে সেরা হয়ে ওঠার তাগিদটা আরও বেড়ে যায় তাঁর।
কত ব্যর্থতার কান্না, খাটনির ঘাম, রাতজাগা স্বপ্ন, সমালোচনার ক্লান্তি পেরিয়ে অবশেষে এল এই দিনটা। পারলেন তিনি, পারলেন। হ্যাঁ, তিনিই সেরা। কেরিয়ার সায়াহ্নেও যে এভাবে ফিরে আসা যায়, প্রমাণ করলেন বোপন্না। আপনাকে কুর্নিশ, সুপ্রিয়া আনাইয়া বোপন্নাকেও।