প্যারিস অলিম্পিক্সে লিঙ্গ বিতর্কের জেরে শিরোনামে উঠে এসেছেন বক্সার ইমান খেলিফ। কিন্তু তিনিই প্রথম নন, এর আগেও এহেন বিতর্কে জড়িয়েছেন একাধিক অলিম্পিয়ান। যৌন পরিচয় নিয়ে অপমানও জড়িয়ে আছে সে ইতিহাসের সঙ্গে। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
পুরুষ হয়েও মহিলাদের বিভাগে অংশ নিয়েছেন। এই অভিযোগেই আপাতত চর্চার কেন্দ্রে আলজেরিয়ার বক্সার ইমান খেলিফ। জানা যাচ্ছে, খেলিফের শরীরে টেস্টোস্টেরনের পরিমাণ বেশি। তাঁর শরীরে পুরুষের মতো এক্সওয়াই ক্রোমোজোম রয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে। আর এই শারীরিক অবস্থার দরুন তিনি মহিলাদের চেয়ে বেশি সুবিধা পাচ্ছেন, এই দাবিতেই তোলপাড় গোটা দুনিয়া। যদিও নারী হিসেবেই নিজেকে চিহ্নিত করে এতদিন বক্সিং রিংয়ে নেমেছেন খেলিফ। এও শোনা যাচ্ছে, তিনি ডিএসডি অর্থাৎ ‘ডিফারেন্সেস ইন সেক্স ডেভেলপমেন্ট’-এ আক্রান্ত বলেই তাঁর শরীরে হরমোনের ভারসাম্য ঠিক ‘নারীসুলভ’ নয়। কিন্তু সেইসব তথ্য বিশ্লেষণের আগেই যৌন পরিচয় নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে বিতর্ক।
:আরও শুনুন:
অলিম্পিকের আসরে নারীর প্রবেশ নিষিদ্ধ! নিয়ম ভাঙার শাস্তি ছিল মৃত্যু
অলিম্পিক্সের দুনিয়ায় লিঙ্গ বিতর্ক অবশ্য নতুন নয়। খেলিফের পাশে দাঁড়িয়ে ভারতের অ্যাথলিট দ্যুতি চাঁদ যেমন মনে করেছেন, কীভাবে তাঁর দিকেও একই অভিযোগের আঙুল উঠেছিল। ২০০ মিটার স্প্রিন্টের পর তাঁকে অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের পক্ষ থেকে তলব করা হয়েছিল। ফেডারেশনের কথামতোই সেক্স টেস্ট করাতে হয় দ্যুতিকে এবং দেখা যায় তাঁর শরীরে পুরুষ হরমোনের পরিমাণ বেশি।
অথচ পলিসিস্টিক ওভারি সহ নানারকম অসুখের কারণেও নারী শরীরে পুরুষ হরমোনের মাত্রা বাড়তে পারে। আবার কেউ যদি রূপান্তরকামী কিংবা ট্রান্সজেন্ডার হন, সেক্ষেত্রেও হরমোনের মাত্রাভেদ ঘটা স্বাভাবিক। যেমন স্প্যানিশ হার্ডলার মারিয়া পাতিনো ছিলেন ইন্টারসেক্স। যিনি লিঙ্গের দিক থেকে পুরুষ বা মহিলা ব্র্যাকেটে পড়েন না। ১৯৮৩ সালে আইএএএফ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে তাঁর লিঙ্গ পরীক্ষা হয়েছিল, সেই সময় তাঁকে নারী হওয়ার সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। তবে ১৯৮৫ সালে তিনি সেক্স ক্রোমাটিন টেস্টে ব্যর্থ হন। সেই সময় ক্রোমাটিন পরীক্ষা ছিল সেক্স পরীক্ষার প্রথম ধাপ। তাতে ব্যর্থ হওয়ার দরুন ১৯৮৬-র অলিম্পিক থেকেই বাদ পড়ে যান তিনি।
তবে এর শুরুটা সম্ভবত ১৯৩৬-এর বার্লিন অলিম্পিকে। যেখানে মহিলাদের বিভাগে অংশ নিয়েছিলেন জার্মান হাইজাম্পার রাটজেন। বছর দুই পর তিনি খেলা ছেড়ে দেন এবং পুরুষ হিসেবে জীবন কাটাতে শুরু করেন। আর সেখান থেকেই এই গল্প ছড়িয়ে পড়ে যে, পুরুষ হয়েও নাৎসিদের চাপে মহিলা বিভাগে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। যদিও টাইম ম্যাগাজিন জানাচ্ছে, আসলে তাঁকে ইন্টারসেক্স বলাই উচিত হবে। জন্মের সময় তাঁকে মহিলা বলে চিহ্নিত করা হলেও, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিচয়কে অস্বীকার করতেই চাইছিলেন তিনি। নাৎসিদের চাপ কেবল তাঁকে সেই সুযোগ করে দিয়েছিল।
:আরও শুনুন:
শেষবেলায় স্বপ্নভঙ্গ! অলিম্পিকে তীরে এসে তরী ডুবেছিল যে ভারতীয়দের
যদিও রাটজেনের ঘটনার পর ১৯৩৮ সালেই নিয়ম হয়ে যায়, সমস্ত মহিলা প্রতিযোগীদের সেক্স টেস্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে জার্মানির পতন হলেও এই নিয়মের শেষ হয়নি। অলিম্পিকে মহিলা এবং রূপান্তরকামীদের বৈষম্য নিয়ে দেখার শুরুও হয় তখন থেকেই, এমনটাই মনে করেন ক্রীড়া বিশেষজ্ঞরা।