আর মাত্র কয়েক পা। তাহলেই ছুঁয়ে ফেলবেন শেষলাইন। সবার আগে পেরোতে পারলেই চ্যাম্পিয়ন! কিন্তু আন্তর্জাতিক মঞ্চে এক দৌড়বিদ এমনটা করেননি। জেতার সুযোগ পেয়েও সেদিন তিনি চ্যাম্পিয়ন হননি। বরং সুযোগ করে দিয়েছিলেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে। কার কথা বলছি? এমনটা কেনই বা করেছিলেন তিনি? আসুন শুনে নিই।
খেলায় হারজিত থাকবেই। প্রতিযোগিতাতেও সেরার সেরা হন একজনই। কিন্তু সবারই লক্ষ্য থাকে জেতার দিকে। আর আন্তর্জাতিক মঞ্চে কোনও প্রতিযোগিতা হলে তো কথাই নেই! স্রেফ নিজের জন্য নয়, জিততে হবে গোটা দেশের জন্য। এমন মানসিকতা নিয়েই মাঠে নামেন খালোয়াড়রা। কিন্তু বছর দশেকের আগে এক প্রতিযোগিতায় অদ্ভুত কান্ড ঘটিয়েছিলেন এক দৌড়বিদ।
আরও শুনুন: ১৯৮৩-র জয় শুধু ক্রিকেটের নয়! সাদা-কালো অবয়ব থেকে শুরু রঙিন ইন্ডিয়ার জয়যাত্রা
কথা বলছি ২০১২ সালে স্পেনে আয়োজিত এক ক্রস কান্ট্রি রেস সম্পর্কে। এই দৌড় প্রতিযোগিতা সাধারনের তুলনায় কিছুটা হলেও আলাদা। মূলত কোনও খোলা মাঠে এই প্রতিযোগিতার আসর বসে। তথাকথিত দৌড়ের ট্রাক বা ওই জাতীয় কোনও নিদর্শন এক্ষেত্রে থাকে না। সেবছর স্পেনের এই প্রতিযোগিতায় দেশ বিদেশের অনেক দৌড়বিদই অংশ নিয়েছিলেন। যাঁদের মধ্যে লন্ডন অলিম্পিকে ব্রোঞ্জজয়ী আবেল মুতাই-ও ছিলেন। সেদিনের প্রতিযোগিতায় কেনিয়ার এই দৌড়বিদই সবার প্রথম পছন্দ ছিলেন। তাঁর দৌড় নিয়ে তখন গোটা বিশ্বের ক্রীড়া মহলে আলোচনা চলত। সেদিনের দৌড়েও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দৌড় শুরু কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাইকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে থাকেন আবেল। কিন্তু সেদিন তাঁকে জোর টক্কর দিয়েছিলেন স্পেনের এক দৌড়বিদও। তিনি ফার্নান্ডেজ আনায়া। বছর ২৪ এই দৌড়বিদের ঝুলিতে অলিম্পিকের মেডেল না থাকলেও দেশের মাটিতে তাঁর সম্মান নেহাতই কম ছিল না। সেদিনের কান্ট্রি রেসেও নিজের সেরাটুকু দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ফার্নান্ডেজ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি প্রতিযোগিতা জেতেননি। আর সেখানেই তাঁর এক অন্য রুপের পরিচয় পেয়েছিল সকলে।
আরও শুনুন: ঐতিহাসিক ২৫ জুন! বিশ্বজয়ের শ্যাম্পেন সেদিন কার থেকে নিয়েছিলেন কপিল দেব?
সেদিনের দৌড় প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার মুখে ফার্নান্ডেজ প্রায় ধরেই ফেলেছেন আবেলকে। কিন্তু শেষলাইনে পা রাখার আগেই, থেমে যান তিনি। যেন দৌড় শেষ হয়ে গিয়েছে, এমন আচরণ করতে শুরু করেন। একপ্রকার বিজয় উল্লাসই বলা চলে। পিছন থেকে আবেলের এই আচরণ দেখে সবটা বুঝতে পারেন ফার্নাণ্ডেজ। আসলে, আবেল মুতাই ‘কান্ট্রি রেসে’ তেমন অভ্যস্ত ছিলেন না। তাই দৌড় কোথায় শেষ করতে হবে তা বুঝতেই পারেননি তিনি। আগেভাগেই দৌড় শেষ করে উল্লাস শুরু করে দেন। এমন অবস্থায় চাইলেই আবেলকে টপকে প্রতিযোগিতা জিততে পারতেন ফার্নান্ডেজ। কিন্তু এমনটা তিনি করেননি। বরং আবেলের কাছে গিয়ে ইশারায় বুঝিয়ে দেন দৌড় এখনও শেষ হয়নি। সেইমতো ফের দৌড় শুরু করেন আবেল। এবং প্রতিযোগিতা জিতে যান। কিন্তু তাঁর এই জয়ের নেপথ্য নায়ক কে, তা সকলেই বুঝতে পারেন। তাই প্রতিযোগিতা না জিতেও সকলের মনে জায়গা করে নেন ফার্নান্ডেজ। এখনও ক্রীড়ামহলে এই ঘটনা উদাহরণ হিসেবে চর্চিত হয়। ভবিষ্যতে দৌড়বিদ হিসেবে যথেষ্টই নাম করেছিলেন স্পেনের ফার্নান্ডেজ। কিন্তু এই ঘটনার জেরেই সকলের মনে রয়ে গিয়েছেন তিনি।