৪ নাহলে ৬। ক্রিকেটে এর বেশি রান একটা বল থেকে নেওয়া যায় না বললেই চলে। কিন্তু এক ব্যাটার একবারেই নিয়েছিলেন ২৮৬ রান। তাও আবার একটা মাত্র বল থেকেই! ঠিক কীভাবে? আসুন শুনে নিই।
খেলার আর মাত্র একটা ওভার বাকি। এদিকে রান দরকার যথেষ্টই। সবাই বুঝে গিয়েছে কে জিতবে! কিন্তু ওভার শেষে সে হিসেব আদৌ মিলল না। ঝোড়ো ব্যাটিং-এ অনায়াসে কাঙ্ক্ষিত রান তুলে ফেললেন দুই ব্যাটার। ক্রিকেট মাঠে এমন ঘটনা আশ্চর্যের নয়। কিন্তু একটা বলে ২৮৬ রান নেওয়ার কথা শুনেছেন?
আরও শুনুন: এক দেশ এক আইন নয়, এক দেশ এক উন্নয়নের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন নেহরু
মাঠ সাক্ষী থেকেছে এমন ঘটনারও। নিয়ম অনুযায়ী ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান ৬। তার নীচে চার। মাঠের নির্দিষ্ট সীমারেখা বা বাউন্ডারির বাইরে বল পাঠাতে পারলেই মিলবে সেই রান। এর মধ্যে মাঠে একবারও ড্রপ না খেয়ে বল যদি বাউন্ডারির বাইরে চলে যায়, তাহলে মিলবে ছয় রান। আর ড্রপ খেলে চার। এছাড়া আরও এক উপায়ে রান নেওয়া যায়। যাকে ক্রিকেটের ভাষায় বলে ‘সিঙ্গেলস’। নিয়ম অনুযায়ী, কোনওভাবে ব্যাটে-বলে সংযোগ হলেই এই পদ্ধতিতে রান নেওয়া যায়। সাধারণত যিনি ব্যাট করছেন তাঁর প্রাথমিক উদ্দেশ্য থাকে বল মেরে বাউন্ডারির দিকে পাঠানো। আর সেই বল আটকানোর জন্য মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকেন ফিল্ডার। একবার বল মারার পর যতক্ষণ না ফিল্ডার তা ক্রিজের দিকে ছুঁড়ছেন ততক্ষণ দৌড়ে রান নিতে পারেন ব্যাটার। এক্ষেত্রে ক্রিজের দুদিকে থাকা ব্যাটারকেই ছুটতে হয়। এ প্রান্তের খেলোয়াড় অপর প্রান্তে পৌঁছালেই মিলবে এক রান। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ রানের নিয়ম নেই। যতবার দৌড়াতে পারবেন ব্যাটার, ততবারই মিলবে রান। কিন্তু মাঠ তো আর বিরাট মাপের হয় না, তাই ফিল্ডার একবার বল ধরে নিলে দৌড়ে রান নেওয়ার সুযোগ কমে যায়। তবু ছুটে ছুটে দুই বা তিন রান নেওয়ার ঘটনা হামেশাই চোখে পড়ে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস একবার এইভাবেই ৮ রান নিয়েছিলেন। যদিও সেক্ষেত্রে সাইমন্ডস নিজে দৌড়ে চার রান নেন, আর বাকি চার রান এসেছিল ওভার থ্রো থেকে। সুতরাং এটাও নাহয় মানা গেল। কিন্তু এর কোনওটিই এক বলে সব থেকে বেশি রান হওয়ার রেকর্ড নয়। ক্রিকেট ইতিহাসে এক বলে ২৮৬ রান নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
আরও শুনুন: বাজির শব্দে পাখিদের যেন কষ্ট না হয়, দীপাবলিতেও ‘নীরব’ থাকে দেশের সাত গ্রাম
ব্রিটেনের পত্রিকা ‘পল মল গেজেট’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৮৯৪ সালের ১৫ জানুয়ারি এই আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছিল। সেদিন খেলার আসর বসেছিল দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায়। ম্যাচে মুখোমুখি ভিক্টোরিয়া একাদশ এবং স্ক্র্যাচ একাদশ। আর এই অনন্য নজির গড়েছিলেন স্ক্র্যাচ একাদশের ব্যাটাররা। সেদিন প্রথমে বল করতে আসে ভিক্টোরিয়া। প্রথম বলেই স্ক্র্যাচ একাদশের এক ব্যাটারের মারা বল মাঠের ভিতরে থাকা একটি গাছে উঠে যায়। বিপক্ষের ফিল্ডাররা তক্ষনি বল নামাতে ছুটে যান। এদিকে দৌড়ে রান নিতে শুরু করে দেন স্ক্র্যাচ একাদশের দুই ব্যাটার। এক-দুই করে রান নিতেই থাকেন ওই দুজন। এদিকে বল কিছুতেই নামানো যাচ্ছে না। উপায় না বুঝে ফিল্ডাররা বল হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ আনেন। নিয়ম অনুযায়ী এমনটা হলে দৌড়ে রান নেওয়ার উপায় থাকে না। কিন্তু সেদিনের ম্যাচে বল হারানোর অভিযোগ মানা হয়নি। কারণ বলটি উঁচুতে আটকে থাকলেও, স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিল। শোনা যায়, মগডাল থেকে বল পাড়তে গাছ কাটার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতেও বিপত্তি। কিছুতেই নাকি কুড়ুল পাওয়া যায়নি। আর অন্য দিকে স্ক্র্যাচ-এর ব্যাটাররা দৌড়েই যাচ্ছেন। অবশেষে গুলি ছুড়ে বল গাছ থেকে নামানো হয়। কিন্তু ততক্ষণে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। দেখা যায় দুই ব্যাটার দৌড়ে নিয়ে ফেলেছেন ২৮৬ রান। যা দেখে স্বেচ্ছায় হার মেনে নেয় ভিক্টোরিয়া। এমন ঘটনা ক্রিকেট ইতিহাসে বিরলতম বললেও ভুল হয় না। কিন্তু ওই প্রতিবেদন ছাড়া এর কোনও প্রামাণ্য নথি নেই। তাই অনেকেই এই ঘটনা বিশ্বাস করতে চান না।