দেবীর পুজোয় সিঁদুর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রচলিত বিশ্বাস বলে, দেবী মূর্তিতে ছোঁয়ানো সিঁদুর ব্যবহার করলে বিশেষ ফল লাভ হয়। তাই অনেক সধবা মহিলাই এমনটা করে থাকেন। কিন্তু এক পুরুষ দেবতার পুজোতেও সিঁদুরের ব্যবহার করা হয়। বলা ভালো, সেই দেবতার গোটা মূর্তিটাই সিঁদুর দিয়ে রাঙিয়ে দেওয়া হয়। বলছি শ্রী হনুমানের কথা। আসুন শুনে নিই, তাঁর সারা শরীরে সিঁদুর মাখানোর নেপথ্যে কী বিশেষ কারণ রয়েছে।
হনুমানের মূর্তিতে সিঁদুর দিয়ে পুজো দিতে হয়। দেশের অনেক মন্দিরেই এই নিয়মের প্রচলন রয়েছে। তবে একজন পুরুষ দেবতাকে কেন সিঁদুর দিয়ে পুজো দেওয়া হয়, সে প্রসঙ্গে রয়েছে একটি অদ্ভুত ভক্তির কাহিনি।
আরও শুনুন: মহাদেবের দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ, কোন শিবক্ষেত্র দর্শনে কী বিশেষ ফল মেলে?
যে কোনও দেবতার মূর্তি নির্দিষ্ট করা হয় তাঁর ধ্যানমন্ত্র অনুসারে। তাঁর মূর্তির আকার, গাত্রবর্ণ কিংবা ওই মূর্তিতে কী অস্ত্র থাকবে, সেই সবই উল্লেখ করা থাকে ধ্যান মন্ত্রে। সেইভাবে শ্রী হনুমানের মূর্তির আকার কেমন হবে তা নির্দিষ্ট করা আছে তাঁর ধ্যানমন্ত্রে। আবার হনুমানের উল্লেখ রামায়ণেও ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়। সেখানে তাঁর বিশেষ কিছু ঐশ্বরিক ক্ষমতা প্রকাশ পেলেও তাঁর রূপ বর্ণনায় বিশেষ কিছুর উল্লেখ নেই। বরং অন্যান্য বানরের মতোই তাঁর চেহারার বর্ণনা মেলে। অথচ হনুমানের প্রচলিত মূর্তিতে দেখা যায় তাঁর গায়ের রং লাল। অনেকে সেই লালের উপর আরও বেশি করে সিঁদুর লেপে দেন। মনে করা হয় এতেই নাকি বিশেষ প্রসন্ন হন পবননন্দন। কিন্তু একজন পুরুষ দেবতা হয়েও তাঁর মূর্তিতে সিঁদুর দেওয়া হয় কেন? নেপথ্যে রয়েছে শ্রী হনুমানের প্রভুভক্তির এক অদ্ভুত কাহিনি।
আরও শুনুন: রামনবমীর উন্মাদনা নেই, সীতানবমী পালনের সঙ্গে জড়িয়ে আত্মত্যাগের কাহিনি
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, স্বামীর মঙ্গলকামনায় সিঁদুর পরেন স্ত্রী। হিন্দুধর্মের অধিকাংশ দেবীই সধবা। তাই তাঁদের মূর্তিতেও সিঁদুর দেওয়া হয়। কিন্ত হনুমান তো একজন পুরুষ। তার ওপর এমনটাও প্রচলিত আছে, যে তিনি ব্রহ্মচারী। সুতরাং তাঁর সঙ্গে সিঁদুরের সম্পর্ক না থাকাটাই স্বাভাবিক। এখানেই লুকিয়ে আছে হনুমানের রামভক্তির এক অপূর্ব কাহিনি। রামায়ণ অনুযায়ী, শ্রী রামচন্দ্রের ঘরনি অর্থাৎ মা সীতা একজন পতিব্রতা নারী ছিলেন। স্বামীর মঙ্গলার্থে যাবতীয় ব্রত তিনি অবশ্যই পালন করতেন। তা এমন একজন মহিলা যে প্রতিদিন সিঁদুর পরবেন এ কথা বলা বাহুল্য। এদিকে প্রভু রামের মতো তাঁকেও দেবী জ্ঞানে শ্রদ্ধা করতেন হনুমান। সীতার যে কোনও আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন তিনি। কোনও একদিন মা সীতাকে সিঁদুর পরার সময় হনুমান দেখে ফেলেন। সীতা যত্ন সহকারে সিঁদুর পরছেন দেখে হনুমানের মনে বেশ কৌতূহল জন্মায়। এদিকে তাঁর কোনও ধারণা ছিল না কেন এই কাজ করা হয়। তাই সরাসরি সীতাকে তিনি প্রশ্ন করেন, এমন সিঁদুর পরার আসল কারণ কী? উত্তরে স্মিত হেসে সীতা জবাব দেন, স্বামীর মঙ্গলকামনায় সধবা নারীদের এই সিঁদুর পরতে হয়, এতে স্বামীর আয়ু বৃদ্ধি হয়। সেইসঙ্গে সীতা তাঁকে বলেন, রামকে ভালোবেসে রোজ এই সিঁদুর কপালে ছোঁয়ান তিনি। তা হনুমান তো আর সধবা নন! কিন্তু শ্রী রামকে তিনিও যথেষ্ট ভালোবাসেন। তাই সীতার কাছে এমন যুক্তি শোনার পরক্ষণেই গোটা সিঁদুর কৌটো নিজের মাথায় ঢেলে দেন হনুমান। তাঁর দাবি, যদি একচিলতে সিঁদুর পরলে প্রভু রামের মঙ্গল হয়, তাহলে সারা শরীরে সিঁদুর মাখতে রাজি তিনি। সেই থেকেই হনুমান প্রভু রামের উদ্দেশে সিঁদুর মাখা আরম্ভ করেন। মনে করা হয় এই কারণেই হনুমানের মূর্তিতে সিঁদুর দেওয়া হয়। প্রভু রামের রাম করলেই তিনি খুশি, তাই রামের উদ্দেশে তাঁর মূর্তিতে সিঁদুর দিলেও বড়ই আনন্দিত হন শ্রী হনুমান। তবে এই সবই প্রচলিত বিশ্বাস। শাস্ত্রে এর সঠিক ব্যাখ্যা নেই বললেই চলে। হনুমানের মূর্তিতে সিঁদুর দেওয়ার নেপথ্যে আরও কারণ থাকতেই পারে। তবে সর্বাধিক প্রচলিত কাহিনিটি রামভক্তির কথাই নির্দেশ করে।