শাস্ত্রমতে কলিযুগে মানুষ দুর্বল চিত্ত। তাঁর আয়ু স্বল্প। ফলত দ্বাপর বা ক্রেতাযুগের ন্যায় বৈদিক কর্মকাণ্ড এই যুগে প্রায় অসম্ভব। অথচ কলিযুগের উত্তরোত্তর বেড়ে চলা অন্যায় অবিচার পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি করে তুলছে আরও জটিল। আরও ভয়ংকর। স্বাভাবিক ভাবেই যার প্রভাব পড়ছে গৃহস্থের সংসারে। অথচ শাস্ত্রে ব্যাখ্যা রয়েছে এমন কিছু নিয়ম যা পালন করলে গৃহস্থ অশান্তি থেকে সহজেই মুক্তিলাভ সম্ভব। কোন কোন নিয়ম অবশ্য পালনীয়? আসুন শুনে নিই।
আধুনিক সময়ে গৃহশান্তি খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। কলিযুগে অর্থেই তো কলহ অশান্তি। এ যুগে মানুষের স্বার্থই শেষ কথা। সহিষ্ণুতা সহমর্মিতা নেই বললেই চলে। তাই তো চারিদিকে এত খুন জখম ধর্ষণের ঘটনা। শুধু ঘরের বাইরে নয়। বিভিন্ন কারণে ঘরের ভিতরও সেই একই অশান্তির পরিবেশ। সামান্য কারণে শুরু হওয়া অশান্তি মুহূর্তের মধ্যে ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। আর সেইসব থেকে বাঁচতেই শাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে কিছু নিয়মের কথা।
আরও শুনুন: তিলক পরার ইচ্ছা জানিয়ে স্বপ্নাদেশ, স্নানযাত্রার পুণ্যলগ্নে কালীঘাটে ‘বৈষ্ণবরূপ’ জগজ্জননীর
তবে সে প্রসঙ্গে আসার আগে অবশ্যই উল্লেখ করা উচিৎ দেবী মহামায়ার দশটি বিশেষ রূপের কথা। ষড়রিপুর নিয়ন্ত্রক এই দেবীগণ। শাস্ত্রে এঁরাই দশ-মহাবিদ্যা নামে পরিচিতা। এঁদের তুষ্ট করতে পারলেই যে কোনও বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তবে আক্ষরিক অর্থে ঘরের মধ্যে এঁদের পুজো করা অসম্ভব। কারণ দশ-মহাবিদ্যা তন্ত্র চর্চার অন্যতম আধার। তাই প্রকৃত শিক্ষা না থাকলে কখনই সাধারণ কারও এঁদের পুজো করা উচিৎ নয়। নির্দিষ্ট স্থানে এক একজন দেবীর আরাধনা হয়। সেই আরাধনা পদ্ধতিও গুপ্ত। তবে ঘরের শান্তি বজায় রাখার জন্য এই দশ-মহাবিদ্যা আশীর্বাদ লাভের কিছু সাধারণ টোটকা ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রথমেই আসি দেবী বগলামুখীর প্রসঙ্গে। দেবী বাকযন্ত্রের নিয়ন্ত্রক। যে কোনও অশান্তির মূলেই থাকে মুখ নিঃসৃত শব্দ। একবার কাউকে কিছু বলে দিলে তা ফেরানো সম্ভব নয়। অনেক ক্ষেত্রেই গৃহশান্তির ব্যাঘাত ঘটে স্রেফ কথা বলার দোষে। স্বামী-স্ত্রীর যাবতীয় অশান্তির মূলেও সেই কথা বলার প্রসঙ্গই দেখা যায়। কথিত আছে, দেবী বগলার আরাধনা করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তিলাভ সম্ভব। এবার ঘরের মধ্যে দেবীর পুজো তো অসম্ভব। তাই কিছু বিশেষ নিয়ম পালন করলেই দেবীকে তুষ্ট রাখা সম্ভব। দেবীর প্রিয় রঙ হলুদ। তাই হলুদ বস্ত্র পরিধান করে বগলামুখী মন্দিরে মঙ্গলবার করে পুজো দিলে বিশেষ ফল মেলে। পূজাসামগ্রী হিসেবে অবশ্যই রাখতে হয় হলুদ ফুল ও কাঁচা হলুদ। তবে বিশেষ সমস্যা হলে জ্যোতিষের পরামর্শ মেনে বগলামুখী কবচও ধারণ করা যেতে পারে। এতে গুপ্ত শত্রুরও বিনাশ হয়।
আরও শুনুন: সোমবার মিষ্টি, মঙ্গলে ঘি! শাস্ত্রমতে কোন দিনে কোন খাবার নিষিদ্ধ?
এরপরই আসে ধনলাভের প্রসঙ্গ। গৃহে আর্থিক স্বাচ্ছল্য থাকলে অশান্তির মাত্রা অনেকটাই কমে। এক্ষেত্রে কার্যকরী দশ-মহাবিদ্যার অন্যতমা দেবী ত্রিপুরসুন্দরীর আরাধনা। মূলত শ্রী-যন্ত্রমের মধ্যেই দেবীকে কল্পনা করা হয়। তাই বাড়িতে এই যন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলে ধনলাভ নিশ্চিত। হোম যজ্ঞ সহ বিশেষ পুজোর মাধ্যমে এই যন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হয়। তারপর আর বিশেষ কোনও নিয়ম নেই। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, অশুচি অবস্থায় যন্ত্র স্পর্শ করা উচিৎ নয়। প্রতি বুধবার এই যন্ত্রের আরাধনা করলে বিশেষ ফল মেলে। এবার আসা যাক চাকরীর প্রসঙ্গে। গৃহশান্তি বজায় রাখার জন্য স্থায়ী রোজগার একান্ত কাম্য। এক্ষেত্রে অনেকেই সরকারি চাকরির আশা করেন। দশ মহাবিদ্যার নবম মহাবিদ্যা তথা দেবী মাতঙ্গীর পুজো করলে সেই অভীষ্ট সফল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে এই দেবীর পুজোও সাধারণ গৃহস্থ বাড়িতে একেবারেই নিষিদ্ধ। তবে জ্যোতিষের পরামর্শ মেনে দেবী মাতঙ্গীর কবচ ধারণ করা যেতে পারে। অন্যদিকে গুপ্তশত্রু নিধনে বিশেষ ভাবে কার্যকরী দেবী ধূমাবতীর আরাধনা। খুবই গুপ্ত পদ্ধতিতে এই দেবীর হোম করতে হয়। তবে দশ মহাবিদ্যা ছাড়াও গৃহ শান্তি বজায় থাকে নবগ্রহের দৌলতে। তাই বছরে অন্তত একবার হলেও নবগ্রহ হোম করা উচিৎ। আলাদাভাবে সমিধ প্রদান করতে হয় নব-গ্রহের উদ্দেশে। এছাড়া রোজকার সন্ধ্যা আহ্নিকেও বিশেষ ফল মেলে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় নিয়ম করে ধুপ জ্বালাতে হয় ও শঙ্খ বাজিয়ে গৃহ দেবতার পুজো করতে হয়। প্রতি বৃহস্পতিবার ধুনো জ্বাললে ঘরের মধ্যে অশুভ প্রভাব কেটে যায়। সেইসঙ্গে সপ্তাহের নির্দিষ্ট কিছু দিনে নিরামিষ খাওয়ায় বিশেষ ফল মেলে। এতেই শান্তির পরিবেশ বজায় থাকতে বাধ্য। তবে কারও সংসারে যদি বিশেষ সমস্যা পরিলক্ষিত হয়, তাহলে অবশ্যই দশ-মহাবিদ্যার বিশেষ কয়েকটি রূপের ভক্তিভরে আরাধনা করতে হবে। তাহলে সংসারে সুখ বিরাজ করিবে।