ঈশ্বর আরাধনার কোনও নির্দিষ্ট দিন হয় না। তবে কারও জন্মবার মিলিয়ে ঠিক করা হয়, তাঁর উপাস্য দেবতা কে। শাস্ত্রমতে এই নিয়ম মেনে কেউ যদি ইশ্বর সাধনে ব্রতী হন, তাহলে বিশেষ ফল মেলে। জানেন কি, কোন বারে জন্মালে কোন দেবতার পুজো করতে হয়? আসুন শুনে নিই।
অনেকেই বলে থাকেন হিন্দু ধর্মে দেবদেবীর সংখ্যা তেত্রিশ কোটি। কিন্তু শাস্ত্রের ব্যখ্যা ঠিক তেমনটা বলে না। তেত্রিশ কোটি এখানে সংখ্যা হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি। তাই হিন্দু ধর্মে এতজন দেবদেবীর অস্তিত্ব যে নেই, সে কথা বলাই বাহুল্য। নিয়মিত পুজোও করা হয় কয়েকজন দেবদেবীকেই। যাঁদের মধ্যে অন্যতম ত্রিদেব, তথা ব্রহ্মা-বিষ্ণু- মহেশ্বর। এরসঙ্গে দেবী মহামায়া ও তাঁর বিভিন্ন রূপ। আর রয়েছেন নবগ্রহ এবং কিছু পার্শ্বদেবতা।
আরও শুনুন: হিন্দুধর্মের পবিত্র তিথি, অক্ষয় তৃতীয়ায় কিছু নিয়ম মানলে বিশেষ ফল মেলে
এঁদের প্রত্যেকেরই পুজোর নির্দিষ্ট কিছু দিন রয়েছে। বছরে অন্তত একবার তাঁদের বার্ষিক উৎসবের তিথি থাকেই। এছাড়া প্রতি মাসেও নির্দিষ্ট একটা দিনে পুজো করা হয় বিভিন্ন দেবদেবীকে। আবার সপ্তাহের বিচারেও প্রত্যেক দিনের আলাদা অধিপতি রয়েছেন। সে প্রসঙ্গেই উঠে আসে জন্মবারের কথা। অর্থাৎ কোনও ব্যক্তি যেদিন জন্মগ্রহণ করেছেন, সেই বারের অধিপতি দেবতাকে যদি তিনি নিয়মিত পুজো করেন তাহলে তাঁর জীবনে সুখ সমৃদ্ধি নেমে আসতে বাধ্য। যেমন সপ্তাহের প্রথমদিন অর্থাৎ সোমবার হল শিবের বার। এই দিন নাকি ভোলানাথের বড়ই প্রিয়। তাই প্রতি সোমবার নিয়ম করে শিবের মাথায় জল ঢাললে বিশেষ ফল মেলে। আবার যাঁদের জন্ম সোমবার, তাঁদের ইষ্ট দেব স্বয়ং দেবাদিদেব। তাই তাঁদের ক্ষেত্রেও শিবের পুজো করা বিশেষ ফলদায়ক। সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনটিও রুদ্রদেবের এক অংশ হনুমানের। বলা হয়, এইদিনেই জন্ম হয়েছিল পবনপুত্রের। তাই মঙ্গলবার হনুমানের পুজো করলে বিশেষ ফল মেলে। এক্ষেত্রে যারা মঙ্গলবার জন্মগ্রহন করেছেন, তাঁরা যদি হনুমানের পুজো করেন তাহলে সারাজীবনে সুস্থ থাকেন তাঁরা। বুধবার যাঁদের জন্ম তাঁদের উপাস্য হলেন গণপতি। তাঁকে স্মরণ করে যে কোনও কাজ শুরু করলে সাফল্য নিশ্চিত। এমনিতেই প্রতি বুধবার তিনটি দূর্বা সহ কেউ যদি গণেশের পুজো করেন তাহলে বিশেষ ফল মেলে। তবে যাঁদের জন্মবার বুধ, তাঁরা সারাবছর গণেশের পুজো করতে পারেন। এর ফলে অবশ্যই সুখ সমৃদ্ধি লাভ করবেন সেই ব্যক্তি। বৃহস্পতি বার স্বয়ং দেবগুরুর আরাধনা করার দিন। তবে দেবাদিদেব মহাদেবও আদিযোগী। তিনিও গুরুশ্রেষ্ট। তাই এইদিনে যাঁদের জন্ম তাঁরা মহাদেবের পুজো করুলে বিশেষ ফল পান। অন্যদিকে এইদিনটি মা লক্ষ্মীরও খুবই প্রিয়। ঘরে ঘরে বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়। তাই বৃহস্পতিবারে জন্মগ্রহণ করা ব্যক্তিরা দেবী লক্ষ্মীর আরাধনাও করতে পারেন। এরপর শুক্রবারের প্রসঙ্গে আসা যাক। শাস্ত্রমতে এইদিন দেবী মহামায়ার পুজো করা যেতে পারে। বলা বাহুল্য, এইদিনে যে কোনও দেবী মূর্তির পুজো করলেই বিশেষ ফল মেলে। আবার শনিবার স্বয়ং গ্রহরাজের প্রিয় দিন। এইদিন গ্রহরাজে শনির পুজো করলে জীবনের সমস্ত অশান্তি কেটে যায়। সবশেষে রবিবার। শাস্ত্রমতে এইদিন সূর্যের বার। তবে শ্রী বিষ্ণুরও বড় প্রিয় এই দিন। তাই রবিবার সূর্যের পুজোর সঙ্গে বিষ্ণু পুজো করলেও বিশেষ ফল মেলে। যাঁদের রবিবারে জন্ম তাঁরা এই দুই দেবতার পুজো করলে যে কোনও কাজেই অনিবার্য সাফল্য লাভ করেন।
আরও শুনুন: হনুমানের আবির্ভাব তিথি, শুভ যোগে অন্য গুরুত্ব এবারের চৈত্র পূর্ণিমার
তবে এইসবই প্রচলিত শাস্ত্রের ব্যাখ্যা। অনেকেই এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন। সর্বোপরি মানুষের মনের ভক্তি আর নিজের প্রতি বিশ্বাস। শাস্ত্রে এও উল্লেখ আছে, প্রত্যেকের অন্তরেই ভগবানের বাস। তাই নিজেকে কষ্ট দিয়ে কেউ যতই পুজো করুন না কেন, কার্যত কোনও ফল পাওয়া পাবেন না। শুধু নিজেকেই নয়, অন্যদেরও সমান নজরে দেখার কথা বলে শাস্ত্র। যারা অসহায় তাঁদের সেবা করলে সাহায্য করলেও ঈশ্বর সাধনের পুণ্যই অর্জিত হয়। তাই শাস্ত্র মেনে শুধু মাত্র নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট দেবতা পুজো করলেই হবে না, সুস্থ স্বাভাবিক জীবনের জন্য সকলের প্রতি সহানুভূতিশীল, দয়াবান হওয়াও একান্ত প্রয়োজনীয়।