‘জগন্নাথঃ স্বামী নয়নপথগামী ভবতু মে’, রাজপথে এগিয়ে চলেছে মহাপ্রভু জগন্নাথের রথ। চারিদিকে ঘিরে রয়েছেন অসংখ্য ভক্তকুল। সম্মিলিতভাবে টান পড়ছে রথের রশিতে। কথিত আছে, প্রভুর রথের রশি একবার ছুঁলেই জীবনের যাবতীয় দুর্ভোগ ঘুচে যায়। কিন্তু রথযাত্রা দিনটিরও রয়েছে বিশেষ মাহাত্ম্য। এদিন সামান্য কিছু নিয়ম পালনেই মিলতে পারে বিশেষ ফল। কী সেই নিয়ম? আসুন শুনে নিই।
রোজকার জীবনে লেগেই আছে অশান্তি। ঘরে বাইরে জড়িয়ে পড়তে হচ্ছে একাধিক সমস্যায়। চিন্তা নেই, প্রভু জগন্নাথের স্মরণ নিলে মিটতে পারে এর সবকিছুই। তিনি গনধর্মের গণদেবতা। নির্দিষ্ট কোনও ধর্মীয় বিশ্বাসে তিনি আবদ্ধ হন। বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত, বৌদ্ধ, জৈন সর্বধর্মের সমন্বয় ধরা পড়ে তাঁর মধ্যেই।
আরও শুনুন: রথের রশি ছুঁলেই কাটে দুর্ভোগ! কী বিশেষত্ব পুরীর রথের?
তাই শাস্ত্রে, জগন্নাথের রথযাত্রার দিনটিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এইদিন যারা রথের রশিতে টান দেন, তাঁদের পুনর্জন্মের ভাবনা থাকে না। সেইসঙ্গে যাবতীয় অশান্তির হাত থেকেও রেহাই মেলে। তবে স্রেফ রথের রশিতে টান দেওয়া নয়। রথযাত্রার দিনও কয়েকটা নিয়ম অবশ্যই পালন করা উচিত। প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে, প্রভুর কাজে শুদ্ধাচার আবশ্যক। তাই রথযাত্রার দিনটি শুরু করতে হবে ভোরবেলা স্নান সেরে। স্নানের পর পরতে হয় শুদ্ধবস্ত্র। এরপর বাড়িতেই ব্যবস্থা করতে হয় জগন্নাথের পুজোর। অনেকের বাড়িতেই প্রভু জগন্নাথের মূর্তি বা ছবি থাকে। সারাবছর সেই মূর্তিতে পুজো না করা হলেও, রথের দিন তা অবশ্যই পরিষ্কার করা উচিত। তারপর ঠাকুর ঘরে পরিষ্কার কাপড় পেতে সেই ছবি বা মূর্তি রাখতে হবে। সাজাতে হবে ফুল চন্দন দিয়ে। এক্ষেত্রে মনের ভক্তিই আসল। কিন্তু কেউ চাইলে জগন্নাথের নির্দিষ্ট মন্ত্র পাঠ করে বা ব্রাহ্মণ দিয়েও পুজোর ব্যবস্থা করতে পারেন। বাড়ির ছোটরা এইদিন নিজেদের মতো করে রথের ব্যবস্থাও করে। পুজোর পর জগন্নাথ মূর্তি স্থাপন করতে হয় সেই রথে। তবে যাঁদের বাড়িতে জগন্নাথ মূর্তি নেই, তাঁরাও রথের দিন কয়েকটি নিয়ম পালন করতে পারেন।
আরও শুনুন: নীল বর্ণের জগন্নাথ, মহিলারাও অংশ নেন প্রভুর এই বিশেষ রূপের পুজোয়
এক্ষেত্রেও সকাল সকাল স্নান সেরে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করা উচিত। তারপর এলাকার কোনু বিষ্ণু বা কৃষ্ণমন্দিরে ফুল,ফল, মিষ্টি নিয়ে পুজো দিতে হবে। অন্তত পাঁচ প্রকার ফল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুজোর সময় মনে মনে স্মরণ করতে হবে প্রভু জগন্নাথকে। তাঁর বিচরণ জগতের সর্বত্রই। তাই যে কোনও অবস্থায় তাঁকে স্মরণ করলেই তিনি সাড়া দেন। প্রসাদি ফল বাড়ির সবার মধ্যে ভাগ করে নিতে হয়। রথযাত্রার শুভ দিনে কাউকে দান করাও খুবই পুন্যের কাজ। তাই এইদিন গরীব দুঃখীদের যথাসাধ্য দান করা উচিত। তবে বর্তমানে যে কোনও এলাকাতেই ছোট করে হলেও রথের আয়োজন করা হয়। সম্ভব হলে সেই রথের রশিই একবার ছোঁয়া উচিত। তাহলেই জীবনের যাবতীয় দুর্ভোগ কাটতে বাধ্য।