কীভাবে ঘর সাজালে সংসারের সার্বিক মঙ্গল হয়, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে বাস্তুশাস্ত্রে। সেখানেই উল্লেখ রয়েছে পুজোয় বসার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম। দেবতার মূর্তি কোন দিকে মুখ করে বসানো উচিৎ? পূজারিই বা কোন দিকে মুখ করে পুজোয় বসবেন, সবরেই নির্দিষ্ট নিয়ম উল্লেখ করা আছে সেখানে। সেই নিয়ম মেনে পুজো করলে অবশ্যই বিশেষ ফল মেলে। আসুন শুনে নিই।
প্রার্থনার কোনও নিয়ম হয় না। যে কোনও অবস্থায় ভক্তিভরে ঈশ্বরকে স্মরণ করলে তিনি সবশ্যই সাড়া দেন। তবে বাস্তমতে পুজো করার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। সেইসঙ্গে উল্লেখ রয়েছে দেবতার মূর্তি কীভাবে বসানো উচিৎ, সেই নিয়মও।
আরও শুনুন: দশমহাবিদ্যার রূপ দেবী ষোড়শী, সেই রূপেই মা সারদার পূজা করেছিলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণ
অধিকাংশ হিন্দু বাড়িতেই পুজো করার নির্দিষ্ট স্থান থাকে। কারও বাড়িতে একটা গোটা ঘরই পুজোর জন্য ব্যবহার করা হয়। শাস্ত্রমতে এই স্থানে সবসময় শুদ্ধাচারে প্রবেশ করা উচিৎ। অনেকেই এই ঘরে কোনও খাবার পর্যন্ত খান না। তবে এইসব নিয়মের সঙ্গেই অবশ্যই যা মানতে হয়, তা হল পুজোয় বসার নিয়ম। শাস্ত্রমতে ঘরের উত্তর-পূর্ব কোণ সবথেকে পবিত্র। একে ঈশানকোণও বলা হয়। মনে করা হয়, এই স্থানে স্বয়ং ঈশ্বরের বাস। তাই পুজোয় বসার ক্ষেত্রে এইদিকে মুখ করেই বসা উচিৎ। এছাড়া পূর্ব দিকে মুখ করেও পুজোয় বসা যেতে পারে। বিশেষত সূর্যার্ঘ্য দেওয়ার সময় অবশ্যই পূর্ব দিকে মুখ রাখতে হয়। প্রয়োজনে কেউ উত্তর দিকেও মুখ রেখে পুজোয় বসতে পারেন। কিন্তু কখনই দক্ষিণ-পশ্চিম মুখ করে পুজোয় বসা উচিৎ নয়। এর ফলে মারাত্মক বিপদ হতে পারে। পুজোয় বসার ক্ষেত্রে অবশ্যই এই নিয়ম মানা উচিৎ। তবে শুধু পূজারি নন, দেবতার মূর্তি কোন দিকে মুখ করে বসানো হবে তারও নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। মূল সিংহাসন রাখতে হয় ঈশানকোণে। সেই মন্দির বা সিংহাসনে বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি রাখা যেতে পারে। সেখানে যদি কোনও বিষ্ণু মূর্তি রাখা হয়, তাহলে তা বসাতে হয় পশ্চিম দিকে। অন্যদিকে শিবলিঙ্গ রাখার নিয়ম উত্তর দিকে। এছাড়া সিংহাসনে যদি অন্যকোনও দেবী মূর্তি থাকে, তাহলে তা অবশ্যই পূর্ব দিকে রাখতে হয়। কেবলমাত্র হনুমান এবং কাল ভৈরবকে দক্ষিণ দিকে রাখা যেতে পারে।
আরও শুনুন: গাছের মধ্যেই ঈশ্বরের বাস, ভক্তিভরে পুজো করলে মেলে বিশেষ ফল
শুধু তাই নয়। পুজোর ঘরের আরও কিছু নিয়ম মানা বাঞ্ছনীয়। মাথায় রাখতে হবে, একই দেবতার মূর্তি যেন একের বেশি না থাকে। সেক্ষেত্রে পরিবারে চরম অশান্তি দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে, ঠাকুরের সিংহাসনের উপর কিছু রাখা উচিৎ নয়। ভারী কোনও জিনিস তো একেবারেই নয়। একবার পুজো হয়ে গেলে সেই ফুল নির্দিষ্ট সময়ের পর পরিষ্কার করে ফেলতে হয়। শুকনো ফুল দেবতার মূর্তিতে রাখা একেবারেই অনুচিত। সেইসঙ্গে শুদ্ধচিত্তে শুদ্ধবসনে পুজোয় বসতে হয়। তাহলেই পুজোর সঠিক ফল মেলে। অন্যথায় মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।