কৃষ্ণ মূর্তির হাতে পরানো রয়েছে ঘড়ি। তবে সাধারণ কোনও ঘড়ি নয়। পালস রেট অনুভব করলেই চলবে, এমন ঘড়ি। অথচ পাথরের বিগ্রহে সেই ঘড়ি দিব্য চলছে। কোথায় রয়েছে এমন মূর্তি? আর এমনটা সম্ভবই বা হয় কীভাবে? আসুন শুনে নিই।
বাড়ির গোপালকে নিজের মতো করে সাজাতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেক্ষেত্রে কখনও টুপি কখনও মোজা আবার কখনও সোয়েটার পরান কেউ কেউ। মন্দিরেও অনেক সময় এমনটা দেখা যায়। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই রকমফের হয় পোশাক কেন্দ্রিক। অর্থাৎ বিভিন্ন রঙের পোশাকে সাজানো হয় দেব বিগ্রহ। কিন্তু মূর্তির হাতে ঘড়ি পরানোর কতা শুনেছেন কখনও?
গুজরাটের ঘরপুরে রয়েছে এমনই এক কৃষ্ণ মন্দির। যেখানে বিগ্রহের হাতে পরানো রয়েছে ঘড়ি। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ভক্তদের ঢল নামে ওই বিখ্যাত স্বামী নারায়ন মন্দিরে। সেখানে কৃষ্ণের একাধিক বিগ্রহ রয়েছে। গোপাল, শ্রী বিষ্ণু, গোপিনাথ সহ একই রূপের ভিন্ন প্রকাশ ধরা পড়ে ওই মন্দিরে। সব কটি বিগ্রহের সামান্য কিছু বৈশিষ্ট আলাদা। কোনওটা চার হাতের, আবার কোনও বিগ্রহে দুই হাত। কেউ ধরে রয়েছেন বাঁশি, কারও হাতে আবার লাড্ডু। তবে মন্দিরের মূল আকর্ষণ গোপীনাথের বিগ্রহ। কারণ এই মূর্তির হাতেই রয়েছে এক অদ্ভুত ঘড়ি। ব্যাটারিতে নয়, সেই ঘড়ি চলে মানুষের হৃদস্পন্দন অনুভব করলে। ঠিক মতো পালস রেট না থাকলে, ঘড়িতে সময় দেখানো বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ পাথরের গোপীনাথ বিগ্রহে সেই ঘড়ি দিব্যি সঠিক সময় দেখায়।
কিন্তু ওমন বিগ্রহের হাতে এল কোথা থেকে?
ঘটনাটা প্রায় ৫০ বছরের পুরনো। সাধারণত যে কোনও জনপ্রিয় মন্দিরের বিগ্রহেই প্রাণ রয়েছে বলেই দাবি করা হয়। পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে আরম্ভ করে বৃন্দাবনের বহু মন্দিরের বিগ্রহে প্রাণ রয়েছে, এই দাবি যথেষ্ট প্রচলিত। ঘরপুরের স্বামীনারায়ন মন্দিরের গোপীনাথ বিগ্রহ সম্পর্কেও এই ধারণা ছিল অনেকেরই। ভক্তরা খুব সহজেই সে কথা বিশ্বাস করতেন। কিন্তু অবিশ্বাসী মন প্রমাণ ছাড়া তা মানবে কেন? তেমনই এক ইংরেজ সাহেব এই মন্দিরের গোপীনাথের মধ্যে সত্যিই প্রাণ রয়েছে কি না তা পরীক্ষা করবেন বলে ঠিক করেন। দলবল তিনি তিন মন্দিরে হাজির হন। সেখানকার পরিবেশ তাঁকে রীতিমতো অবাক করে। এত মানুষ এই মন্দিরে ভিড় জমাচ্ছেন দেখে বেশ অবাকই হন তিনি। সত্যিই গোপীনাথ বিগ্রহে প্রাণ রয়েছে কি না তা জানার জন্য উদগ্রিব হয়ে ওঠেন সাহেব। আগে থেকেই প্রস্তুত হয়ে এসেছিলেন তিনি। এনেছিলেন এক অদ্ভুত ঘড়ি। যা কেবলমাত্র মানুষের হৃদস্পন্দন অনুভব করলেই চলবে। পরীক্ষা করে দেখা জন্য, সেই ঘড়ি তিনি বিগ্রহের হাতে পরিয়ে দিতে বলেন। মনে মনে কৃষ্ণকে স্মরণ করে সেই ঘড়ি বিগ্রহের হাতে পরিয়েও দেন পূজারী। সকলেই ভেবেছিলেন ঘড়িটা হয়ত বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু না, বাস্তবে তেমনটা হয়নি। বরং গোপীনাথের হাতেও একইভাবে চলতে শুরু করে ঘড়িটি। কাণ্ড দেখে সকলেই রীতিমতো অবাক। ভক্তরা গোপীনাথের নামে জয়ধ্বনি দিতে আরম্ভ করেন। আর কিছু বলার মুখ ওই সাহেবেরও ছিল না। তাই ঘড়িটি বিগ্রহের হাত থেকে আর খোলার চেষ্টা করেননি তিনি। ভক্তিভরে প্রণাম করে বেরিয়ে আসেন মন্দির থেকে। সেই ঘড়িই এখনও রয়েছে গোপীনাথের হাতে। শুধুমাত্র শৃঙ্গারের সময় তা খোলা হয়। অদ্ভুত ভাবে সেই সময় ঘড়িটি বন্ধ হয়ে যায়। মূর্তির হাতে পরালেই পুনরায় চালু। স্থানীয় বিশ্বাস, ওই মূর্তিতে সত্যিই ভগবান রয়েছেন। তাই অনেকেই নিজের মনের ইচ্ছা জানাতে এই মন্দিরে ভিড় জমান। সেইসঙ্গে ঘড়ি পরা বিগ্রহ দেখতেও অনেকেই এখানে পুজো দিতে আসেন।