দশমীতে দশভুজার বিসর্জন। তারপর মাত্র দিন চারেকের অপেক্ষা, একই মণ্ডপে আলো করে আসবেন মা লক্ষ্মী। বাঙালির কোজাগরী। ভরা পূর্ণিমায় দেবীর আরাধনার নিয়ম। তবে চলতি বছরে কোজাগরী পূর্ণিমার দিনেই রয়েছে চন্দ্রগ্রহণ। পঞ্জিকামতে ঠিক কোন সময় পুজো করবেন? আসুন শুনে নিই।
“নিশীথে বরদা লক্ষ্মীঃ জাগরত্তীতিভাষিণী।
তস্মৈ বিত্তং প্রযচ্ছামি অক্ষৈঃ ক্রীড়াং করোতি যঃ।”
কথিত আছে, কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিনে ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মী মর্তে অবতরণ করেন। এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকলকে আশীর্বাদ দেন। যার বাড়ির দরজা বন্ধ থাকে, তাঁর বাড়িতে লক্ষ্মী প্রবেশ করেন না। বরং ফিরে চলে যান। সেই কারণেই লক্ষ্মী পুজোয় রাতে জেগে থাকার রীতি যুগ যুগ ধরে প্রচলিত। গোটা দেশে দীপাবলির সন্ধ্যায় দীপান্বিতা লক্ষ্মীর পুজোর চল থাকলেও বাংলার ঘরে ঘরে হয়ে থাকে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো। পুজো হয় ঘটে ও পটে। মূর্তি পুজোও প্রচলিত বহু গৃহস্থ বাড়িতে। এছাড়া যে মণ্ডপে দুর্গাপুজো হয়, সেখানেও অবশ্যই আয়জন করা হয় লক্ষ্মীপুজোর।
আরও শুনুন: পঞ্জিকায় উল্লেখ নেই, তবু পয়লা বৈশাখেই কেন লক্ষ্মী-গণেশের পুজো করেন বাঙালিরা?
শাস্ত্রমতে এই পুজো করতে হয় সারারাত জেগে। এই রাতে ভরা পূর্ণিমার আলোয় চারিদিক ভেসে যায়। কিন্তু চলতি বছরে হতে পারে তার ব্যতিক্রম। কারণ পঞ্জিকা জানাচ্ছে, এবার কোজাগরী পূর্ণিমা রাতেই হবে চন্দ্রগ্রহন। ফলত কিছুক্ষণের জন্য হলেও ঢাকা পড়বে চাঁদ। আবার গ্রহণের সময় পুজো করা নিয়েও শাস্ত্রে একাধিক বিধান রয়েছে। সেই হিসেবে গ্রহণ চলাকালীন পুজো না করার উল্লেখও মেলে কোথাও কোথাও। তাই চলতি বছরে লক্ষ্মী পুজোর সময় নিয়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবছর লক্ষ্মী পুজো ১০ কার্তিক বা ইংরাজির ২৮ অক্টোবর। পূর্ণিমা শুরু হচ্ছে গত রাত্রি রাত্রি ১ টা ৫৫ মিনিটে। তবে এক্ষেত্রে মতভেদ রয়েছে। তবে, কোনও পঞ্জিকায় উল্লেখ রয়েছে, পূর্ণিমা শুরু হচ্ছে ২৮ তারিখ ভোর ৪টে ১৭ মিনিটে। এবং থাকবে পরদিন অর্থাৎ ২৯ অক্টোবর রাত্রি ১ টা ৫৬ পর্যন্ত। এর মধ্যে যে কোনও সময় লক্ষ্মী পুজো করা যেতে পারে। তবে চন্দ্রগ্রহণ শুরু হচ্ছে ২৮ তারিখ রাত্রি ১ টা ৫ মিনিটে। চলবে রাত্রি ২টো ২৪ অবধি। সেক্ষেত্রে বিশেষ এক যোগ বা সূতক শুরু হবে বিকাল ৪টা ৫ মিনিট থেকে। গ্রহণ শেষের সঙ্গেই তা শেষ হবে। শাস্ত্রমতে এই সময়টুকু পুজোয় না বসাই ভালো। এমনকি দেবদেবীকে স্পর্শ করাও নিষিদ্ধ। তাই সম্ভব হলে, বিকেলের মধ্যেই পুজো সেরে নিন। নিশি জাগরনে কোনও বাধা নেই। কোজাগরী ব্রতের অঙ্গ হিসেবে তেমনটা করা যেতেই পারে।
আরও শুনুন: শুধু কোজাগরী পূর্ণিমাতেই নয়, ঘোর অমাবস্যা তিথিতেও হয় দেবী লক্ষ্মীর পুজো
কিন্তু পুজোর কাজ পূর্ণিমা লাগার সঙ্গে সঙ্গেই সেরে নিন। ভক্তিভরে মা লক্ষ্মীর আরাধনা করলে জীবনে কখনও দুর্ভাগ্যের কালো ছায়া পরে না। সেইসঙ্গে কোজাগরীর রাতে জেগে থেকে দেবীর আরাধনা করলে বিশেষ ফল মিলতে বাধ্য। তাই নিয়ম ও সময় মেনে বাড়িতেই আয়োজন করে ফেলুন দেবীর লক্ষ্মীর আরাধনার।