সারা বছর বন্ধ থাকে মন্দির। খোলা হয় স্রেফ রাখি পূর্ণিমার দিনেই। দাদা-ভাইয়ের সুস্বাস্থ্য কামনায় এদিন মন্দিরে পুজো দিতে আসেন দিদি বা বোনরা। কথিত আছে, এই মন্দিরে পুজো দিলেই দীর্ঘায়ু হন সেই প্রিয় মানুষটি। কোথায় রয়েছে এমন মন্দির? আসুন শুনে নিই।
পাহাড়ের কোলে জনমানবহীন এলাকা। সেখানেই একটা ছোট্ট মন্দির। যার দরজা বন্ধ থাকে সারা বছর। কিন্তু রাখিপূর্ণিমার দিনে এই মন্দিরে ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। এইদিন সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় মন্দিরের দ্বার। কথা বলছি, উত্তরাখণ্ডের বংশী নারায়ণ মন্দির সম্পর্কে। স্থানীয় বিশ্বাস, এই মন্দিরে পুজো দিলে ভাই-বোনের সম্পর্ক দৃঢ় হয়। সেইসঙ্গে দুজনেই জীবনে সার্বিক সাফল্য লাভ করেন।
আরও শুনুন: সুখ-সমৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধক বাস্তুদোষ! চার চিহ্নেই মিটতে পারে সমস্যা, কী কী জানেন?
বঙ্গভঙ্গ রুখতে রাখিবন্ধন উৎসব করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তবে পুরাণের গল্পে তার বহু আগে থেকেই এই উৎসবের ইঙ্গিত মেলে। কথিত আছে। স্বয়ং শ্রী কৃষ্ণের হাতে রাখি পরিয়েছিলেন পাণ্ডব পত্নী দ্রোপদী। আর সেই সুবাদেই তাঁকে সবরকম বিপদের হাত থেকে রক্ষা করার অঙ্গীকার করেছিলেন নারায়ণ। উত্তরাখোণ্ডের এই বিশেষ মন্দিরটিও শ্রী বিষ্ণুর। কেবল মাত্র রাখী পূর্ণিমার দিনেই মন্দির খোলার নেপথ্যে জড়িয়ে তাঁরই লীলা। তবে তার আগে জেনে নেওয়া যাক মন্দিরটি ঠিক কোথায় অবস্থিত?
সবার পক্ষে এখানে পৌঁছানো মোটেও সহজ ব্যাপার নয়। মন্দিরে যাওয়ার জন্য অন্তত ১০-১২ কিমি পায়ে হাঁটা ছাড়া উপায় নেই। আর সেই হাঁটা পথও একেবারেই সহজ নয়। উত্তরাখন্ডের যোশীমঠ অঞ্চলে পৌঁছে এই মন্দিরের জন্য যাত্রা শুরু করতে হয়। বছর ভর কেউ এই পথ না মারালেও, রাখির দিন বা ওই সময় এখানে ভালমতোই ভিড় চোখে পড়ে। মন্দিরটি উরগাম ভ্যালির কাছে অবস্থিত। উত্তরাখণ্ডের অন্যান্য পাহাড়ি মন্দিরের মতো এই মন্দিরের সৌন্দর্যও অসাধারণ। মন্দির লাগোয়া একটি গুহাও রয়েছে। রাখি পূর্ণিমার দিন সেই গুহার মধ্যেই সকলে বিশেষ পুজো দিয়ে আসেন। আসলে মনে করা হয়, এখানে সারা বছর স্বয়ং বিষ্ণু বাস করেন। আর তাঁর নিত্য পূজার দায়িত্বে থাকেন খোদ নারদ মুনি। তাই বছরের অন্যান্য সময় এই মন্দিরে সাধারণ কেউ আসেন না। কিন্তু রাখির দিন মন্দিরের দ্বার খোলার নেপথ্যে রয়েছে এক বিশেষ পৌরাণিক কাহিনি। কথিত আছে, বামন অবতার থেকে পুনরায় স্বমূর্তি ধারণ করে সর্বপ্রথম এই মন্দিরে এসেছিলেন শ্রী বিষ্ণু। আর সেই দিনটি ছিল পবিত্র রাখি পূর্ণিমার দিন। সেই হিসাবেই রাখির দিন এই মন্দির খোলার নিয়ম চালু হয়। তবে মন্দিরটি ঠিক কবে তৈরি হয়েছিল সেই নিয়ে বিভিন্ন জনশ্রুতি শোনা যায়।
আরও শুনুন: কোন বয়সে দেখা মিলবে মনের মানুষের? হদিশ মেলে রাশিচক্রেই
এই মন্দিরে পুজো দেওয়ারও বিশেষ কিছু নিয়ম রয়েছে। মূলত দাদা বা ভাইয়ের মঙ্গলকামনায় দিদি বা বোন এখানে পুজো দিতে আসেন। মন্দিরে বিষ্ণুদেবের এক অতি প্রাচীন বিগ্রহ রয়েছে। সেই মূর্তিতে রাখি ছুঁইয়ে তা বাড়িতে গিয়ে দাদার হাতে পরানোর রেওয়াজ রয়েছে। আর সেইসঙ্গে মন্দির লাগোয়া গুহায় রেখে আসতে হয় মাখন। কেউ চাইলে মাখন দিয়ে তৈরি কোনও পদও সেখানে রাখতে পারেন। মনে করা হয়, এই মন্দিরের আরাধ্য ভোগ হিসেবে মাখন পছন্দ করেন সবথেকে বেশি। বছরে একবার হলেও এই মন্দিরে পুজো করার জন্য নির্দিষ্ট রয়েছেন একদল পুরোহিত। তাঁরাই রাখির দিনে বিশেষ পুজোর ব্যবস্থা করেন এখানে। আর সেই পুজোতেই দূর দূরান্ত থেকে অংশ নিতে আসেন ভক্তরা।