অমৃতত্বের গূঢ় কথাটি কী? মানুষ কত না ভেবেছে এ কথা! দেহের বিনাশের সঙ্গেই কি এই জীবনের যাত্রা শেষ? এই প্রশ্নও তাকে ভাবিয়েছে। স্বয়ং শ্রী কৃষ্ণ মানুষের এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন শ্রী গীতায়।
এই দেহ নিয়ে আমাদের ভাবনার শেষ নেই। আমরা ভেবে ফেলি, এই দেহ নিয়ে সারাজীবন থেকে যাওয়াই বুঝি অমরত্ব। সেই অমরত্বের প্রত্যাশা আমাদের মনে একেবারে যে থাকে না তা নেই। মানুষ চায়, সে কোনও না কোনও ভাবে থেকে যাক। সকলের মধ্যে, এই বিশ্ব চরাচর থাকবে, অথচ সে থাকবে না, এটুকু মনে পড়লেই বিষাদে মন আচ্ছন্ন হয়ে ওঠে। অমরত্বের ইচ্ছা তাই মানুষের মনের কোণে জেগে থাকে।
ভিনদেশের দার্শনিকরা বলেন, আমাদের অস্তিত্বের উলটোদিকে আর কিছু নেই। হয় আমরা আছি, নয় নেই। এটুকুই সত্যি। অতি পরিচিত জনের স্মৃতিতেও তো মানুষ চিরটাকাল থাকে না। তাহলে আর এই দেহ না থাকলে কীসের থাকা? আমাদের থাকা না-থাকা এভাবে যেন আলো অন্ধকারে ঘোরাফেরা করে।
ভারতের ঋষি দার্শনিকগণ অবশ্য ঠিক এরকমটা ভাবেন না। স্বয়ং শ্রী কৃষ্ণই সেই ভাবনার সুতোটি ধরিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। স্মরণ করা যাক কুরুক্ষেত্র যুদ্ধক্ষেত্র। রণসজ্জায় সজ্জিত দুই যুযুধান পক্ষ। ঠিক সেই সময় অর্জুন আক্রান্ত হলেন বিষাদে। বললেন, এই আত্মীয় পরিজনদের বিরুদ্ধে তিনি অস্ত্র ধারণ করতে পারবেন না। বললেন,
দৃষ্ট্বেমান্ স্বজনান্ কৃষ্ণ যুযুৎসূন্ সমবস্থিতান্।
সীদন্তি মম গাত্রাণি মুখঞ্চ পরিশুষ্যতি।
অর্থাৎ, হে কৃষ্ণ যুদ্ধেচ্ছু এই সকল স্বজনকে দেখে আমার শরীর অবসন্ন, মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে। বললেন, কাঁপছে আমার সারা শরীর। হাত থেকে খসে পড়ছে গাণ্ডিব। সারা গা যেন জ্বলছে। বললেন,
ন কাঙ্ক্ষে বিজয়ং কৃষ্ণ ন চ রাজ্যং সুখানি চ।।
যুদ্ধে স্বজনদের হত্যা করে আমি জয়লাভ করতে চাই না। রাজ্য চাই না আমি, সুখভোগ চাই না। এর মধ্যে আমি কোনও মঙ্গল দেখছি না।
এরপরই অর্জুন টেনে আনলেন এক নৈতিক সংকট। বললেন,
উৎসন্নকুলধর্মাণাং মনুষ্যাণাং জনার্দন।
নরকে নিয়তং বাসো ভবতীত্যনুশুশ্রুম।।
হে জনার্দন, যে মানুষের কুলধর্ম নাশ হয়, তাঁর তো নরকবাস ভবিতব্য। তাহলে স্বজনকে নিহত করে কোন মঙ্গল হতে পারে?অর্জুনের এই বিষাদযোগ দেখে এবার শ্রী কৃষ্ণ বললেন,
ক্লৈব্যং মাস্ম গমঃ পার্থ নৈতৎ ত্বয্যুপপদ্যতে।
ক্ষুদ্রং হৃদিয়দৌর্বলং ত্যক্ত্বোত্তিষ্ঠ পরন্তপ।।
বাকিটা শুনে নিন প্লে-বাটন ক্লিক করে।