পদার্থ ও শক্তির রূপান্তরের ধারণা আধুনিক বিজ্ঞানকে নতুন অভিমুখ দেবে, এমনটাই মনে করেছিলেন বিবেকানন্দ। টেসলার কাজ বেদান্ত ও আধুনিক বিজ্ঞানের মধ্যে দূরত্বও যে কমিয়ে আনবে, এমনও বিশ্বাস ছিল তাঁর।
আগুন যদি সভ্যতার সূচক হয়ে থাকে, তবে আধুনিক সভ্যতার ক্ষেত্রে তা নিশ্চিতই ইলেক্ট্রিসিটি। বিজ্ঞানের দুনিয়া জানে, এই ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় অবদান নিকোলা টেলসার। তাঁর বৈজ্ঞানিক চিন্তা এক্ষেত্রে যুগান্তকারী বিপ্লবের সূচনা করেছিল। আধুনিক সভ্যতায় আমরা যা যা করে থাকি, খেয়াল করে দেখলে দেখা যাবে, তার নেপথ্য কোনও না কোনও ভাবে থেকে গিয়েছে টেসলার অবদান। সেই টেসলার ধারণার ভূমি পোক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে আবার অবদান ছিল স্বামী বিবেকানন্দের। বলা যায়, ভারতীয় দর্শন এবং বৈজ্ঞানিক ধারণার মেলবন্ধন সম্ভব হয়েছিল তাঁদের সাক্ষাতে।
১৮৯৩ সালে স্বামীজির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল টেসলার। তার আগেই প্রাচ্যের দর্শনের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে পশ্চিম বিশ্বের। ধর্মসম্মেমেলনে স্বামীজির যে বক্তব্য ঝড় তুলেছিল, তা কেবলই ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতা চর্চার পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং বৃহত্তর অর্থে তা প্রাচ্যের দর্শনের মূলসূত্রগুলোকেই তুলে ধরেছিল। সেই সূত্রে পরিবর্তন এসেছিল পাশ্চাত্যের ভাবনাজগতেও। বলা যায় দুই ঘরানার দর্শন যেন একে অন্যের মুখোমুখি হয়েছিল এই পরিসরে। ফলত, বিজ্ঞানচেতনাতেও এর প্রভাব পড়েছিল। ভারতীয় দর্শনে যে এই বৈজ্ঞানিক চেতনার বীজ নিহিত আছে, এবং তা যে বড় পরিবর্তন আনতে পারে, এমন বিশ্বাস ছিল স্বামী বিবেকানন্দের। যখন টেসলার মতো বিজ্ঞানীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়, তখন বেদান্তের নানা ভাষ্যের সঙ্গে তিনি তাঁদের পরিচয় করিয়ে দেন। পদার্থ ও শক্তির যে ধারণা ভারতীয় দর্শনে, তা চমৎকৃত করে টেসলার মতো বিজ্ঞানভাবুককে। তাঁকে ভাবিয়ে তোলে কল্পের ধারণা। গণিতের আঙ্গিকে যে এই দর্শনের প্রকাশ সম্ভব, তা তাঁর মনে হতে থাকে।
পদার্থ ও শক্তির রূপান্তরের ধারণা আধুনিক বিজ্ঞানকে নতুন অভিমুখ দেবে, এমনটাই মনে করেছিলেন বিবেকানন্দ। টেসলার কাজ বেদান্ত ও আধুনিক বিজ্ঞানের মধ্যে দূরত্বও যে কমিয়ে আনবে, এমনও বিশ্বাস ছিল তাঁর। উত্তরকালে বিজ্ঞান এই বিষয়ে আরও অনেকটাই এগিয়েছে। আইনস্টাইনের হাত ধরে পদার্থ ও শক্তির ধারণা অন্য মাত্রা পেয়েছে। তবে এই চিন্তার যে সূত্রপাত হয়েছিল, সেই বিজ্ঞানচেতনায় প্রভাব ছিল প্রাচ্যের দর্শনেরও। বিজ্ঞান ধাপে ধাপে এগোয়। বিজ্ঞানভাবুকরা তা এগিয়ে নিয়ে যান। সভ্যতা এগোয়। আর এই অগ্রগতি মূল বাঁধন দর্শনই। সেই দর্শনের সূত্রেই যেন বিবেকানন্দ-টেসলা সাক্ষাৎ আধুনিকতার এক উজ্জ্বল বিন্দু হয়েই থেকে গিয়েছে।