আগেই সিমলার সুরেন্দ্রনাথের বাড়িতে নরেনের গান শুনেছেন ঠাকুর। প্রথমবার তাঁকে সামনে থেকে দেখেই বুঝেছিলেন এই সাক্ষাতের আসল উদ্দেশ্য কী। তারপর মাত্র বছর চারেকের অপেক্ষা। এমনই এক দোলের দিনে প্রথমবার নরেনকে বিবেকানন্দ হয়ে ওঠার পথ দেখিয়েছিলেন ঠাকুর। ঠিক কী ঘটেছিল সেদিন? আসুন শুনে নিই।
সেও এক দোলের দিন। ১৮৮৫ সালের ১লা মার্চ। অন্যান্য ভক্তদের সঙ্গে নরেন্দ্রনাথও এসেছেন দক্ষিণেশ্বরে। ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করছেন। নির্দিষ্ট সময়ে আবিরের থালা হাতে ঠাকুর বাইরে এলেন। প্রথমে রাধামাধব ও পরে ভবতারিণী মূর্তিতে ছুঁইয়ে দিলেন আবির। তারপর উপস্থিত সকল ভক্তবৃন্দের পেল আবির প্রসাদ। তবে নরেন্দ্রনাথের জীবনে এইদিনের গুরুত্ব খানিক অন্যরকম।
আরও শুনুন: সপ্তর্ষিমণ্ডলের ঋষি তিনি, নররূপে নারায়ণ হয়ে এসেছিলেন জীবের দুর্গতি নিবারণে
সেটা ইংরাজি ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দ। সিমলার সুরেন্দ্রনাথ মিত্রের বাড়িতে এসেছেন ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ। তাঁকে গান শোনানোর জন্য এসেছেন এক প্রতিবেশী নরেন্দ্রনাথ। হেমন্তের শেষবেলায় ঘটেছিল এক আশ্চর্য ঘটনা। ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ এবং নরেন্দ্রনাথ সেই প্রথমবার দেখলেন একে অপরকে। দ্বিতীয় সাক্ষাৎ হয়েছিল দক্ষিণেশ্বরে। সেখানেও ঠাকুরকে গান শুনিয়েছিলেন যুবক নরেন্দ্রনাথ। আর ঠাকুর সেদিন বুঝেছিলেন এই নরেন্দ্রনাথ আসলে কে। তবে নরেন তা বুঝেছিল তার বছর চারেক পরে। মাঝের বছরগুলো কেটেছিল প্রশ্ন আর তর্ক বিতর্কের মধ্যে দিয়ে। যে প্রশ্নের উত্তর কোথাও পায়নি নরেন্দ্রনাথ, রামকৃষ্ণ কত সহজ ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সেইসব কিছুই। তবে এসব সাধারণ কথাবার্তার ঊর্ধ্বে ছিল ১৮৮৫ সালের দোলযাত্রার দিনটা।
আরও শুনুন: সমস্ত কর্ম ঈশ্বরে অর্পণ করে প্রাত্যহিক জীবনযাপন করবেন কী করে?
সেদিন সবাইকে আবির দেওয়ার পর ঠাকুর বসেছেন প্রিয় ভক্তদের সঙ্গে। সেখানে আছে তাঁর স্নেহের নরেনও। কথাবার্তায় উঠে এসেছে গিরিশ ঘোষের প্রসঙ্গ। ঠাকুর জেনেছেন গিরিশ ঘোষের বাড়িতে নরেন্দ্রনাথের যাতায়াত বেড়েছে। প্রশ্নের উত্তরে সম্মতিও জানিয়েছে নরেন্দ্রনাথ। ধীরে ধীরে তাঁদের কথার মধ্যে উঠে আসতে লাগল নানা প্রসঙ্গ। বিভিন্ন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ঠাকুর নরেন্দ্রনাথকে বোঝাতে চাইছিলেন, তাঁর মনের কথা। এবার সরাসরি বলেই দিলেন, ‘কামিনী-কাঞ্চন ত্যাগ না হলে হবে না’। এমন কথা তিনি সরাসরি নরেন্দ্রনাথকে আগে বলেননি। নরেনও বুঝলেন সে কথার মানে। তারপরের ইতিহাস প্রায় সকলেরই জানা। যথাসময়ে দীক্ষা হল নরেন্দ্রনাথের। সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণের পর তাঁর নাম হল বিবেকানন্দ। এই বিবেকানন্দ হয়ে ওঠার যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই দোলের দিনেই। ঠাকুরের কথা মতো সত্যিই কামিনী কাঞ্চন ত্যাগ করেছিলেন তাঁর প্রিয় নরেন্দ্রনাথ।