মহাভারত থেকে শ্রীমদ্ভাগবত গীতা সবখানেই বলা রয়েছে, গৃহস্থ যজ্ঞের অধিকারী। গৃহস্থের নিত্যদিনে অর্জিত পাপস্খলনের জন্য জরুরি যজ্ঞ। সেই বিষয়ে শাস্ত্রে স্পষ্ট বিধান রয়েছে। সে কথাই শোনাচ্ছেন, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়।
গৃহস্থের মঙ্গলকার্য কী? একবার এই বিষয়ে পিতামহ ভীষ্মকে প্রশ্ন করলেন স্বয়ং যুধিষ্ঠির। তিনি প্রশ্ন করেন; পিতামহ! গৃহস্থ কোন্ কাজ করলে শ্রেয়োলাভ করতে পারে?
ভীষ্ম উত্তর দেন— একবার ভগবান বাসুদেব পৃথিবীকে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ আমাদের মতো গৃহস্থ ব্যক্তি কীরকম কাজ করলে মঙ্গল লাভ করতে পারবে?
পৃথিবী বললেন, বাসুদেব! মহর্ষি, পিতৃলোক, দেবতা, মনুষ্যগণের অর্চনা করা গৃহস্থদের অবশ্য কর্তব্য। যজ্ঞ দ্বারা দেবতা, আতিথ্য দ্বারা মানুষ ও গায়ত্রী প্রভৃতির জপ করে বেদের উপাসনা করবে। দেবগণের প্রতি প্রীতি লাভের জন্য না খেয়ে অগ্নির আরাধনা ও বলি কর্ম আবশ্যক। প্রতিদিন অন্ন, জল, ফলমূল দিয়ে পিতৃগণের সেবা করবে।… রোজ রাতে নিশাচর ও ভূতগণকে বলি দেবে।…প্রতিদিন সায়ংকালে ও প্রাতে বিশ্বদেবগণের তৃপ্তির জন্য ভূমিতে কুকুর, চণ্ডাল ও পাখিদের অন্নাদি দেওয়া গৃহস্থের পরম ধর্ম।
আরও শুনুন : নাম-সংকীর্তনে কী ফল মেলে?
গৃহস্থদের জন্য হিন্দুধর্মে পঞ্চমহাযজ্ঞ ও দশবিধ সংস্কারের কথা উল্লিখিত। কিন্তু গৃহস্থ মানুষ কেন পঞ্চমহাযজ্ঞ করবেন আর কীভাবেই বা এই যজ্ঞ সম্ভব! আমরা যজ্ঞ বলতে বুঝি, বিরাট আয়োজন করে ব্রাহ্মণাদি সহযোগে বিশাল আয়োজন। ধূমধাম—হৈ চৈ। পুরাণের কালে বড় বড় রাজারা আড়ম্বরের সঙ্গে নানা যজ্ঞ করতেন। রাজসূয়, অশ্বমেধ ইত্যাদি। এমনকি ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির রাজসূয় যজ্ঞ করেছিলেন স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সম্মতি ও উপদেশ নিয়েই। কিন্তু সেই যজ্ঞের সময়ে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির ছিলেন নিষ্কাম এবং তিনি বলেছিলেন—
রাজপুত্রী, আমি কর্মফলান্বেষী হয়ে কোনও কর্ম করি না; দান করতে হয় তাই দান করি, যজ্ঞ করতে হয় তাই যজ্ঞ করি; ধর্মাচারণের বিনিময়ে যে ফল চায়, সে ধর্মবণিক, ধর্মকে সে পণ্যদ্রব্য করেছে, সে হীন এবং জঘন্য।
আরও শুনুন :গৃহী মানুষের নিত্যকর্ম কেমন হওয়া উচিত?
তাই প্রত্যাশা বা ভুল প্রত্যাশা থেকে বা লাভের আশায় ধর্মাচারণ না করাই ভালো।মানুষ জীবনধারণ এবং রক্ষার কারলে অনিচ্ছাসত্বেও প্রাণীহিংসা করতে বাধ্য হয়। শাস্ত্রকারগণ গৃহস্থের পাঁচ রকম ‘সূনা’ বা জীবহিংসার স্থান উল্লেখ করেন। এই কয়েকটি জিনিস গৃহস্থের নিত্য ব্যবহার করে, সেসবে প্রাণীহত্যা হয়ই, তা থেকে উদ্ভূত হয় পাপ।
বাকিটা শুনুন প্লে বাটন ক্লিক করে।